সিলেটের পাতলা খিচুড়ি লন্ডনেও জনপ্রিয়

রত্না-মতিন দম্পতির পারিবারিক ইফতারছবি: প্রথম আলো

লন্ডনের অদূরে বাংলাদেশি অধ্যুষিত ছোট্ট শহর লুটন। সেখানে বহু বাংলাদেশির মতো বাস করেন সোহেদ-জলি দম্পতি। স্বামী, দুই সন্তান আর শ্বশুরকে নিয়ে জলির সংসার। প্রতিদিনের মতো জলি সেদিনও হরেক পদের খাবার দিয়ে ইফতারের টেবিল সাজিয়েছেন। টেবিলে সাজিয়ে রাখা নানা পদের দেশি-বিদেশি খাবারের মধ্যে বিশেষভাবে আছে সিলেটের পাতলা খিচুড়ি।

জলি প্রথম আলোকে বলছিলেন, ‘পরিবার ও মেহমানদের জন্য বহু পদের ইফতারি আয়োজন ও পরিবেশনের মধ্যে অন্য রকম এক তৃপ্তি কাজ করে। আমার কাছে এই তৃপ্তিই ইফতারের সৌন্দর্য।’

তবে পূর্ব লন্ডনের বার্কিংয়ের মতিন-রত্না দম্পতির ইফতার আয়োজনে ছিল একটু ভিন্নতা। সচরাচর ইফতারে যা থাকে, তার সঙ্গে ছিল ইতালীয় খাবার টুনা পাস্তা ও সুপলি। রত্নারা যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার আগে দীর্ঘদিন ইতালি ছিলেন। তাই ইতালীয় খাবারও তাঁদের বেশ পছন্দের, জানালেন তাঁরা।

যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি পরিবারগুলোর মধ্যে প্রায় প্রতিটি পরিবারে সাধারণত ইফতার আয়োজনে প্রথমেই থাকে সিলেটের পাতলা খিচুড়ি। এখানকার বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্তোরাঁগুলোয়ও একই চিত্র। এই বাংলাদেশিদের বড় অংশ সিলেট অঞ্চল থেকে আসা। তাই এখানকার ইফতারির তালিকায় সিলেটের পাতলা খিচুড়ির সঙ্গে থাকে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, তন্দুরি চিকেন, গ্রিল চিকেন, ল্যাম্ব চপ, শিক কাবাব, সমুচা, চিকেন বিরিয়ানি, মিট বিরিয়ানি, চিকেন উইংস, জিলাপি, পাস্তাসহ নানা পদের মুখরোচক খাবার। খেজুর, আম, আপেল, আঙুর, মাল্টা, কমলা, তরমুজ, কলাসহ থালা ভর্তি থাকে বিভিন্ন প্রকার ফলে। পানীয় হিসেবে অনেকের পছন্দ বিভিন্ন প্রকার ফলের জুস।

ইস্ট লন্ডনের বাংলাটাউনখ্যাত ব্রিকলেনের ক্যাফে গ্রিল, হোয়াইট চ্যাপেলের সোনারগাঁ, পঞ্চখানা, পাঁচ ভাই, ফিস্ট অ্যান্ড মিস্ট, স্টেপনিগ্রিনের গ্র্যান্ড রসইসহ বাংলাদেশি রেস্তোরাঁগুলোর সবখানে ইফতারে পাতলা খিচুড়িসহ দেশীয় খাবারের সমাহার চোখে পড়ার মতো। ইফতারের সময় ইস্ট লন্ডনের প্রতিটি রেস্তোরাঁ থাকে কানায় কানায় পূর্ণ। অনেকে খাবার পার্সেল করে বাসায় নিয়ে যান। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় রেস্তোরাঁগুলোর বেচা-বিক্রির ব্যস্ততা। সোনারগাঁ রেস্টুরেন্টের জিলাপির কদর একটু বেশিই। বিকেল চারটার পর এখানে ক্রেতারা লম্বা লাইন ধরে জিলাপি কেনেন।

পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানিয়ে আলোকসজ্জা। লন্ডনের অক্সফোর্ড স্ট্রিটে
ছবি: প্রথম আলো

ফিস্ট অ্যান্ড মিস্টের অন্যতম পরিচালক সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের রেস্তোরাঁয় ৩০-এর বেশি পদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে ইফতারের বুফে করা হয়। জনপ্রতি ১৭ পাউন্ড দিয়ে দেড় শতাধিক আসনের রেস্তোরাঁ প্রতিদিন পূর্ণ থাকে, আসন পেতে ২ থেকে ৩ দিন আগে বুকিং দিতে হয়।

সোমবার গ্র্যান্ড রসই রেস্তোরাঁয় বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করতে এসেছিলেন কাওছার চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্র্যান্ড রসই রেস্তোরাঁয় জনপ্রতি ১৮ পাউন্ড দিয়ে বহু পদের ইফতারির বুফে আছে। তাই বন্ধুদের নিয়ে পছন্দসই ইফতারি দিয়ে ইফতার করতে এখানে এসেছি।’

লন্ডনের বাইরে যুক্তরাজ্যের অন্য শহরগুলোর মধ্যে লুটন, বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার, ওল্ডহাম, নিউক্যাসল, সান্ডারল্যান্ড, কার্ডিফে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁগুলোয়ও প্রায় একই চিত্র।

যুক্তরাজ্যজুড়ে উন্মুক্ত ইফতার

বহু সংস্কৃতির দেশ যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও অন্যান্য কমিউনিটির মুসলমানেরা যাঁর যাঁর দেশীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী ইফতার আয়োজন করে থাকেন। তবে এ বছর রমজান মাসজুড়ে ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের ২৬টি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানে ‘দ্য রমাদান টেন্ট প্রজেক্ট’ উন্মুক্ত ইফতারের আয়োজন করেছে। সহযোগিতায় রয়েছে ইসলামিক রিলিফ নামের দাতব্য প্রতিষ্ঠান। উদ্দেশ্য—সব ধর্ম, বর্ণ ও বিশ্বাসের মানুষকে নিয়ে মুসলিম সংস্কৃতি অনুযায়ী ইফতার করা।

যুক্তরাজ্যজুড়ে বিশাল এ আয়োজনে ১০ লাখ মানুষকে সংযুক্ত করা হয়েছে। ১২ মার্চ বার্মিংহামের অ্যাস্টন ভিলা ফুটবল ক্লাব থেকে শুরু হয়েছে উন্মুক্ত ইফতার। শেষ হবে ৮ এপ্রিল লন্ডনের ট্রাফালগার স্কয়ারে ইফতার আয়োজনের মধ্য দিয়ে।