খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা শঙ্কাজনক : চিকিৎসক

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
ফাইল ছবি প্রথম আলো

প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা শঙ্কাজনক। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, লিভার ও কিডনি সমস্যা আরও জটিল হওয়ায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে তাঁর চিকিৎসকেরা শঙ্কিত।

খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, লিভারের জটিলতা বেড়ে যাওয়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পেটে পানি জমে যাচ্ছে। তাঁর কিডনি ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যাও জটিল হচ্ছে। এসব জটিলতার ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখছেন না। 

আরও পড়ুন

মেডিকেল বোর্ডের ওই দুজন সদস্য আরও জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণে’ রাখা হয়েছে। মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন সকাল-দুপুর-রাত—তিন দফায় বৈঠক করে তাঁর স্বাস্থ্যের সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এসব বৈঠকে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকেও বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত যোগ দিচ্ছেন। 

জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে সম্ভাব্য চিকিৎসা যা আছে, চিকিৎসকেরা তার সর্বোচ্চটাই খালেদা জিয়াকে দিয়েছেন। এখন তাঁদের আর বেশি কিছু করার নেই। সে জন্য মেডিকেল বোর্ড বারবার তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

গত ৯ আগস্ট রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়া কবে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরতে পারবেন, এ মুহূর্তে চিকিৎসকেরা তা বলতে পারছেন না।

এর আগেও গত ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তাঁর হৃদ্‌যন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদ্‌রোগে ভুগছেন।

বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর অনুমতি চেয়ে তাঁর ছোট ভাই শামীম ইসকান্দর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন দুই দিন আগে। এই আবেদনে বিএনপির নেত্রীর স্থায়ীভাবে মুক্তি চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, আবেদনটি তিনি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন তিনি পেয়েছেন। এখন আইনগত বিষয় পর্যালোচনা করে অল্প সময়ের মধ্যে আবেদনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি কারাবন্দী হন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। তখন থেকে তিনি গুলশানের বাড়িতে থাকেন। 

৫৮২ জন বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করে গতকাল বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫৮২ জন বিশিষ্ট নাগরিক। বিবৃতিতে তাঁরা খালেদা জিয়াকে স্থায়ী জামিনে মুক্তি দিয়ে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী, সাবেক সহ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিক আলমগীর মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিবৃতিতে সই করেন।