জমে উঠেছে স্কুলভিত্তিক খুদে দাবাড়ুদের লড়াই

কক্সবাজারে সেরা হওয়ার জন্য দুই খুদে দাবাড়ুর লড়াই
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের আয়োজনে এবং আবুল খায়ের গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে চলছে ‘মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’ প্রতিযোগিতা। ‘হয়ে ওঠো আগামীর গ্র্যান্ডমাস্টার’ স্লোগানে প্রতিযোগিতাটি দেশের স্কুলভিত্তিক দলগত দাবার সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট।

প্রতিযোগিতায় নিজ নিজ স্কুল বা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করবে ৬৪টি জেলার শিক্ষার্থীরা। স্কুলভিত্তিক দলগুলো শুরুতে খেলবে জেলাপর্যায়ে। এরপর জেলাপর্যায়ের বিজয়ী দলগুলো অংশ নেবে বিভাগীয় পর্যায়ে। তারপর বিভাগীয় পর্যায়ের বিজয়ী দলগুলো অংশ নেবে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থাৎ, চূড়ান্ত পর্যায়ে।

‘মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে খুঁজে বের করা হবে দেশের সেরা খুদে দাবাড়ুদের। পরবর্তী সময় তাদের দাবাবিষয়ক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেওয়া হবে। গত ২১ আগস্ট গাজীপুর থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী স্কুলভিত্তিক দলগত দাবা প্রতিযোগিতাটির কয়েকটি জোনের প্রাথমিক পর্যায়ের ফলাফল পাওয়া গেছে।

রংপুর

রংপুরে পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক পর্বে রংপুর জেলার ৬১টি স্কুল দাবা দল অংশ নিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চ্যাম্পিয়ন দলের অধিনায়ক মো. জামিল উদ্দিন। অন্য সদস্যরা হলো রাফসান জামি, বাসুজিৎ সরকার ইসান, মো. আরীব সালমান, মো. সাদাত সিহাম চৌধুরী, সাদমান মাহমুদ ও রায়হান তাসকিন। প্রথম রানার্সআপ হয়েছে রংপুর জেলা স্কুল।

নিজেদের মধ্যে মেধার লড়াইয়ের আগে খুলনা জোনের খুদে দাবাড়ুরা
ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। গত ২৭ ও ২৮ আগস্ট দুই দিনব্যাপী ৭ রাউন্ড সুইস লীগ পদ্ধতিতে খেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম তিনটি দাবা দলকে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। রংপুর জোনের চতুর্থ থেকে অষ্টম স্থান অধিকারকারী স্কুলগুলো হলো রংপুর জেলা স্কুল, কালেক্টোরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শালা সাজপুর হাইস্কুল, মিলেনিয়াম স্টারস্ স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অন্য টিম।

রংপুরের ছয়টি দাবা বোর্ড থেকে ছয়জন সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মো. আসিফ আহসান, জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফেরদৌস আলী চৌধুরী, রংপুর বিভাগীয় ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।

ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ময়মনসিংহ জেলার প্রাথমিক পর্ব। জেলার ৩৫টি স্কুল দাবা দল দাবা দল অংশ নেয়। ময়মনসিংহ জোনের প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ময়মনসিংহ জেলা স্কুল। অজিত দাশের নেতৃত্বে দলের অন্য সদস্যরা হলো সাফিন ইমতিয়াজ, লাবিব মাহবুব, মো. ফারহান আনজুম ভূঁইয়া, সায়ন্তন সাহা, হাফিজ রহমান নাবিল ও জাহিদুল হাসান মাহিম।

মো. আমিনুল হকের নেতৃত্বে প্রথম রানার্সআপ হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাইস্কুল। দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে ময়মনসিংহ জেলা স্কুল। প্রতিযোগিতায় চতুর্থ থেকে অষ্টম স্থান অধিকার করেছে যথাক্রমে আফরোজ খান মডেল স্কুল, প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাইস্কুল, হাজী উসমান আলী হাইস্কুল, প্রিমিয়ার আইডিয়াল হাইস্কুল ও পুলিশ লাইন হাইস্কুল। প্রতিযোগিতায় ছয়টি দাবা বোর্ড থেকে ছয়জন সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কার দেওয়া হয়। গত ২৪ ও ২৫ আগস্ট ২ দিনব্যাপী ৭ রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে খেলা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে নিজের কৌশল ঠিক করে নিচ্ছেন রংপুর অঞ্চলের এক খুদে দাবাড়ু
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী

রাজশাহী জোনের প্রতিযোগিতা গত ২৪ ও ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহী জেলার অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম টেনিস কমপ্লেক্সে। শিক্ষানগরীর এ প্রতিযোগিতায় রাজশাহী জেলার ৫২টি স্কুল দাবা দল অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক পর্যায়ের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুলটির দাবা দলের অধিনায়ক ছিলেন মো. শাবিয়ার হোসেন।

দলের অন্য সদস্যরা হলো মো. ফাইরুজ মোবাশ্বির, এইচ এম সালেহ আস সাবাহ, মাইশা মুনিয়া হাসান, ফাওজিয়া জেসিন, ফাহমিদ জামান ও মো. আকিল আর রাফি। প্রথম রানার্সআপ হয়েছে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল। দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চতুর্থ থেকে অষ্টম হয়েছে যথাক্রমে হাজী মোহাম্মদ মুহসীন সরকারি হাইস্কুল, রাজশাহী স্যাটেলাইট টাউন হাইস্কুল, রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুল, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্কুল ও হামিদপুর নওদাপাড়া হাইস্কুল। রাজশাহী থেকে ছয়জনকে সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়।

ময়মনসিংহ জোনের সেরা দাবাড়ু
ছবি: সংগৃহীত

খুলনা

খুলনা জিমনেসিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে খুলনা জেলার ‘মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্ব। শিল্পনগরী খুলনা জোনের প্রতিযোগিতায় মোট ৮৪টি স্কুল দাবা দল অংশ নেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই জোনের চ্যাম্পিয়ন হয়েছে খুলনা জেলা স্কুল। দলের সদস্যরা হলো জাওয়াদ ইসলাম রাজিন, আসিফ শাহারিয়ার আপন, সামিন ইয়াসির ফারুকী, মমতাজুল ইসলাম নাফিস, আবু সাঈদ আন্তু ও পিনাক মুন্ধ দাস।

প্রথম রানার্সআপ হয়েছে বাংলাদেশ নেভি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। তৃতীয় হয়েছে ইউসিইপি মহসিন খুলনা টেকনিক্যাল স্কুল। অন্য পাঁচটি স্থান অধিকার করেছে যথাক্রমে সেন্ট জেভিয়ার্স হাইস্কুল, সরকারি করোনেশন গার্লস হাইস্কুল, নেভি অ্যাঙ্করেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সরকারি দৌলতপুর মুহসিন হাইস্কুল ও উদয়ন খুলনা জেলা পুলিশ স্কুল। আয়োজনে প্রথম তিনটি দাবা দলকে পুরস্কার হিসেবে ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।

ছয়টি দাবা বোর্ড থেকে সেরা খেলোয়াড়দের নির্বাচন করা হয়। গত ২৭ ও ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত আয়োজনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিভাগীয় ডিআইজি ড. খ মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম বিপিএম, খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার প্রমুখ।

রাজশাহী জোনের ভেন্যু বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার

জেলা পুলিশ লাইনে অনুষ্ঠিত হয়েছে কক্সবাজার জেলার ‘মার্কস অ্যাক্‌টিভ স্কুল চেস চ্যাম্পস’ প্রতিযোগিতা। জেলার ৩৯টি স্কুল দাবা দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সমুদ্রনগরীতে এই প্রতিযোগিতায় প্রাথমিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হোয়ানক আদর্শ বিদ্যাপীঠ। পয়েন্টের ভিত্তিতে প্রথম এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে যথাক্রমে হোয়ানক বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় ও সাহিত্যিকা উচ্চবিদ্যালয়।

সেরা তিন দলকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় ট্রফি, মেডেল ও সার্টিফিকেট। গত ২৭ ও ২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় ছয়জন সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কার প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মাইনুদ্দিন মিলকী এবং বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের কাউন্সিলর রতন দাশ।

চাঁদপুর, মাদারীপুর ও মৌলভীবাজার

গত ২৩ ও ২৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় চাঁদপুর জেলার ৮টি স্কুল দাবা দল অংশগ্রহণ করে। চ্যাম্পিয়ন হয় গণি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়। স্কুলটির নেতৃত্বে ছিল মো. নাজির আহমেদ। দলের অন্য সদস্যরা হলেন অসীম দত্ত, শাফিউন কাদের, ইউসুফ খান, অভিজিৎ সাহা ও অপূর্ব সূত্রধর।

পয়েন্টের ভিত্তিতে প্রথম রানার্সআপ হয় হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ হয় আল আমিন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এই স্কুল দাবা দলগুলোর মধ্য থেকে শুধু চ্যাম্পিয়ন দলই বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া ছয়টি দাবা বোর্ড থেকে ছয়জন সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়। চ্যাম্পিয়ন, প্রথম এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ দাবা দলসহ ছয়জন সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কার দেওয়া হয়।

একই দিন মাদারীপুর জেলার প্রতিযোগিতায় ১৮টি স্কুল দাবা দল অংশ নেয়। চ্যাম্পিয়ন হয় ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। নাজমুল হোসেনের নেতৃত্বে স্কুলের অন্য সদস্যরা হলো তাহসান ইসলাম, মোহাম্মদ তৌফিক হক, নাইমুল ইসলাম অভিক, অর্ঘ রায়, মোহাম্মদ রিফান ইসলাম ও মোহাম্মদ সাইম হোসেন।

মাদারীপুর জেলার প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে যথাক্রমে সরকারি রাজৈর গোপালগঞ্জ কেজেএস পাইলট ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড কলেজ ও শিবচর নন্দ কুমার মডেল ইনস্টিটিউশন। ছয়টি দাবা বোর্ড থেকে ছয় সেরা খেলোয়াড়কে মাদারীপুর জেলার সেরা দাবাড়ু নির্বাচন করা হয়।

মৌলভীবাজার জেলার শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। জেলার ৫১টি স্কুল দাবা দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। গত ২৪ ও ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত ৭ রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দ্য বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। চ্যাম্পিয়ন দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন আবুল হোসেন।

অন্য সদস্যরা হলেন অর্কপ্রতীক আচার্য, রাজর্ষি দাস গুপ্ত, রুদ্র নীল দাশ, অচিন্ত্য শাইয়াম চৌধুরী, শিফাত বিন আবদুল আহাদ ও তানভীর ইসলাম। মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় প্রথম রানার্সআপ এবং ভিক্টোরিয়া উচ্চবিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে। সেরা তিন দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন দাবা দলই বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া ছয়টি দাবা বোর্ড থেকে ছয়জন সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করা হয়।

লেখক: তারিকুর রহমান খান