অদেখা বাংলার তিন অজানা সৌন্দর্য খুঁজে বের করল রুচি

`দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,
একটি ধানের শিষের উপরে, একটি শিশিরবিন্দু!'


কবির এই কথাই যেন সত্য হয়ে ওঠে বাংলাদেশের দিকে তাকালে। এই যে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশ, তবু এ দেশকে আমরা কতটা জানি? কতটা দেখেছি বাংলার রূপ? দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে অজস্র সুন্দর অজানা সব জায়গা। এমন সব অজানা সৌন্দর্যের খোঁজে দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত হয়েছিল ‘রুচি অদেখা বাংলার খোঁজে: সিজন টু’।

প্রায় তিন হাজার প্রতিযোগীর পাঠানো অজানা-অদেখা সুন্দর জায়গা থেকে আমরা খুঁজে পেয়েছি এবারের তিন অদেখা বাংলার খোঁজ। খ্যাতনামা ভ্রমণপিপাসু এবং পাখিবিশারদ ইনাম আল হক এবং পর্বতারোহী ও লেখক তারেক অণুর মতামত ও দর্শকদের ভোটে নির্বাচিত হয় এ বছরের সেরা তিন অদেখা বাংলার সৌন্দর্য।

দুবলহাটি রাজবাড়ি, নওগাঁ
ছবি: সংগৃহীত

১. দুবলহাটি রাজবাড়ি, নওগাঁ

খাইরুল ইসলামের লেখায় রুচি খোঁজ পায় নওগাঁ জেলায় এক পরিত্যক্ত রাজবাড়ির। দুবলহাটি রাজবাড়ি, নওগাঁ শহর থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। রোমান করিন্থিয়ান কলামের ভেতরে লাল ইটের গাঁথুনির এই বিশাল রাজবাড়িটি প্রায় দু শ বছরের পুরোনো।

সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া এই রাজবাড়িটিতে প্রায় সাড়ে তিন শ ঘর ছিল, আরও ছিল সাতটি বিস্তৃত আঙিনা। ১৭৯৩ সালে রাজা কৃষ্ণনাথ লর্ড কর্নওয়ালিসের কাছ থেকে ১৪ লাখ ৪ শত ৯৫ টাকায় জায়গাটি কিনে জমিদারি শুরু করেন। রাজা কৃষ্ণনাথের কোনো সন্তান বেঁচে না থাকায় তাঁর নাতি রাজা হরনাথ রায় ১৮৫৩ সালে সেখানকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তারপর এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে তিনি বিভিন্ন নাট্যশালা এবং স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেন। ১৮৯২ সালের দিকে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর রাজা হরনাথ রায় সপরিবারে ভারতে চলে যান। পরবর্তীকালে এটি সরকারি সম্পদ হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের  অধীনে চলে আসে।

ন’কাটা ঝরনা, রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ২ নম্বর কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাঙ্গালকাটা এলাকায় অবস্থিত
ছবি: সংগৃহীত

২. ন’কাটা ঝরনা, রাঙামাটি

ন’কাটা ঝরনা, রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ২ নম্বর কেংড়াছড়ি ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাঙ্গালকাটা এলাকায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে কাপ্তাই যাওয়ার পর, কাপ্তাই লঞ্চ ঘাট থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ট্রলারের যাত্রা শেষে পৌঁছাতে হয় বিলাইছড়ি। এরপর ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের যাত্রায় ট্রলার নিয়ে যেতে হয় বাঙ্গালকাটা।

বাঙ্গালকাটা থেকে এরপর গাইড নিয়ে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পানি-প্রবাহিত ছড়া, পাথরের ওপর আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ ট্রেকিং করলে দেখা পাওয়া যায় ন’কাটা ঝরনার। পাহাড়ি ঝিরিপথে পাথরের ওপর আঁকা-বাঁকা পাহাড়ি পথ হেঁটে এই ঝরনা দেখতে যাওয়াও অসম্ভব রোমাঞ্চকর। অনিন্দ্য সুন্দর এই ঝরনার খোঁজ পাই আমরা মো. ফয়সাল মেহেদির লেখায়। মূলত মুপ্পোছড়া ঝরনার জল-ধারাতেই ন’কাটা ঝরনার সৃষ্টি। প্রায় ২শ ফুট ওপর হতে ন’কাটা ছড়া ঝরনার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এই ঝরনা দুটির জলধারা মিশে গেছে কাপ্তাই লেকের নীল জলরাশিতে। ঝরনার স্বচ্ছ পানি এবং অনেক উঁচু থেকে আছড়ে পড়া জলরাশি যেন এক পার্থিব পরিবেশের সৃষ্টি করে। ন’কাটা ঝরনাতে শুকনো মৌসুমে পানি খুব কম থাকে। কিন্তু ভরা বর্ষা মৌসুমে মূল ঝরনার জলধারা প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু থেকে নিচে পড়তে থাকে। শীতকালে পানি প্রায় থাকে না বললেই চলে। বর্ষাই এখানে ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়।

বান্দরবানের গহিন পাহাড়ে এই ঝরনা আছে
ছবি: সংগৃহীত

৩. ওয়াদর ঝরনা, বান্দরবান

বান্দরবানের গহিন পাহাড়ে এক অজানা সৌন্দর্যের খোঁজ দেন মশিওর রহমান। আলীকদম থেকে ঝিরিতে নেমে ছায়াঘেরা শান্ত ঝিরিতে হেঁটে হেঁটে অনেকটা দূর যাওয়ার পর একটা খাঁড়া পাহাড়ে উঠতে হয়। সেখান থেকে সোজা মুরং পাড়া।

পাড়ার ওপর থেকে নিচে দেখা যায় পুরো আলিকদমকে। ভোরে মেঘের আড়ালে ঢেকে থাকে পুরো শহর। পাড়া থেকে ঝরনায় যাওয়া খুবই সহজ। এই রাস্তাটি অসম্ভব সুন্দর। দুই পাশ দিয়ে সবুজ পাহাড় আর তার ঠিক মাঝখানেই সুন্দর এই রাস্তা। এই রাস্তা শেষ হলে বাকি পথ অনেকটাই অ্যাডভেঞ্চারাস। শুধুই নিচের দিকে নামতে হবে। ওপর থেকে দুই ঘণ্টা নিচে নামলেই চমৎকার সুন্দর একটা ঝিরি। সেই ঝিরি ধরে ঘণ্টাদুয়েক হাঁটলেই খুঁজে পাওয়া যাবে ঝরনাকে। সত্যিকার অর্থে এই ঝিরিটি ঝরনার চাইতেও অনেক বেশি সুন্দর। দীর্ঘ পথ হাঁটার পর দেখা মিলবে প্রথম ঝরনাটির, যার নাম ওয়াদর অর্থাৎ পাখির বাসা।

ঝরনাটিও দেখতে ঠিক পাখির নীড়ের মতোই। লুকানো গুহার মতো আবদ্ধ জায়গায় পাথর ফুঁড়ে যেন বেরিয়েছে জলের ধারা। কেবল ওপরে তাকালেই খোলা আকাশ। সেখান থেকে খুব কাছেই দ্বিতীয় ঝরনাটি। এটির সামনে বেশ খানিকটা খোলা জায়গা। চারপাশ সবুজে ঘেরা। বর্ষাকাল ঝরনা উপভোগ করার সেরা সময় হলেও এই দুই ঝরনায় প্রায় সারা বছরই পানি থাকে।

অদেখা এই তিনটি স্থানকে আরও সুন্দরভাবে আবিষ্কার এবং ট্রাভেলারদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমরা তিনটি ভ্রমণ ভিডিও তৈরি করি। বিজয়ী তিন জায়গা ছাড়াও নির্বাচিত সেরা স্থানগুলো আমরা ছড়িয়ে দিই বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে। ruchiexplorelimitless.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আমরা সকল ভ্রমণপাগল মানুষের কাছে তুলে ধরি বাংলার এই অজানা-অদেখা সৌন্দর্যের গল্পগাথা।