চট্টগ্রামে গাছ কেটে র‍্যাম্প নির্মাণ বাতিলের দাবি বেলার

চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে শতবর্ষী গাছ কেটে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণের সব উদ্যোগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। একই সঙ্গে এই সড়কের শতবর্ষী গাছগুলোকে ঐতিহ্য ঘোষণার জন্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান, প্রধান বন সংরক্ষক ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে নোটিশ দিয়েছে বেলা।

আজ বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়। নোটিশের অনুলিপি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকেও দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে সিডিএ। মূল এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি ওঠানামার জন্য ১৫টি র‍্যাম্প রয়েছে। এর মধ্যে দুটি আছে নগরের টাইগারপাসে। দুটি র‍্যাম্পের মধ্যে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ড পর্যন্ত মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরী সড়কে গাড়ি ওঠার র‍্যাম্প নির্মাণ করা হবে।

সবুজে ঘেরা অনন্য এই সড়কের একটি অংশ গেছে পাহাড় ঘেঁষে। আরেকটি অংশ নিচে। মধ্যবর্তী পাহাড়ি ঢালে রয়েছে ছোট-বড় শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এসব গাছে রয়েছে নানা প্রজাতির পাখির বাসা। এখন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প (গাড়ি ওঠার পথ) নির্মাণ করতে গাছগুলো কাটতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ইতিমধ্যে গাছগুলো লাল ও সাদা কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।

নগরের দ্বিতল সড়ক হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় শতবর্ষী গাছসহ ৪৬টি গাছ কেটে মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নির্মাণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সিডিএ। কিন্তু দ্বিতল সড়ক এলাকায় গাছ কেটে র‍্যাম্প নির্মাণের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে গত সোমবার আন্দোলন শুরু করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও পরিবেশকর্মীরা। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভা করে নকশা সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছে সিডিএ।

একই দাবি জানিয়েছে বেলাও। বেলার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিডিএ চট্টগ্রামের দ্বিতল সড়কের মাঝে পাহাড়ের ঢালে থাকা গাছগুলো কেটে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র‍্যাম্প নামাতে চায়। এসব গাছের মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী ও শতবর্ষী শিরীষ গাছ, কড়ই, কৃষ্ণচূড়া, মেহগনি ইত্যাদি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে এই ধরনের উদ্যোগে চট্টগ্রামের মানুষ ক্ষুব্ধ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের নিরাপত্তার বিধানে সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে অঙ্গীকার করেছে রাষ্ট্র। ফলে যেকোনো উন্নয়ন কার্যক্রমই পরিবেশ রক্ষা করে করতে হবে। কিন্তু তা না করে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে, তা জনস্বার্থের অনুকূলে নয়। র‍্যাম্প নির্মাণের নামে এ গাছগুলো কাটা হলে তা হবে বৃক্ষ ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হত্যার শামিল। এ গাছগুলো বিভিন্নসংখ্যক পাখির আবাস্থল, যা পথচারীকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে পেতে সাহায্য করে। সিডিএ যদি পরিবেশের উন্নয়ন বাদ দিয়ে অবকাঠামোর উন্নয়নকেই তার একমাত্র আইনি দায়িত্ব মনে করে, তবে তা হবে টেকসই উন্নয়নের অন্তরায়। যে তথাকথিত উন্নয়নের জন্য এ গাছগুলো কাটা হচ্ছে, সে উন্নয়ন অন্য জায়গায় হলে চট্টগ্রামবাসীর কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু এ গাছগুলো কাটা হলে চট্টগ্রামবাসীর ঐতিহ্য বিলুপ্তের পাশাপাশি অপূরণীয় ক্ষতি হবে।