লোকাল বাস-প্রাইভেট কারে টানেল দেখতে আসছে মানুষ, ছুটির দিনে যানজট

টানেলে যাত্রী নেওয়ার জন্য অপেক্ষমান সারি সারি বাস। আজ সকাল নয়টায় আনোয়ারা উপজেলার চাতরী এলাকায়। প্রথম আলো

চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত প্রথম সুড়ঙ্গপথ কর্ণফুলী টানেল ঘিরে মানুষের উৎসাহ দিন দিনই বাড়ছে। টানেল দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছে মানুষ। ছুটির দিনগুলোয় রীতিমতো যানজটও লেগে যাচ্ছে। টানেলে গিয়ে মুঠোফোনে সেলফি তোলা, গাড়ির রেস দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনাও ঘটছে।

গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে টানেলের ভেতরে। আর টানেলের টোল প্লাজায় ঘটেছে একটি। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষতি না হলেও আহত হয়েছেন চারজন।

ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টানেলের তিনটি ডেকোরেটিভ বোর্ড। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে টানেলের ভেতরে একটি প্রাইভেট কারকে পেছন থেকে একটি বাস ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে প্রাইভেট কারের পেছনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। এ সময় কারের চার যাত্রী আহত হন।

টানেলের মুখে সংযোগ সড়কে দর্শণার্থীদের ভিড়। গত শুক্রবার সকালে। ফাইল ছবি

টানেল দেখতে ভিড় করা লোকজনকে কেন্দ্র করে পতেঙ্গা ও আনোয়ারায় টানেলমুখী বাস, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস সার্ভিসও চালু হয়েছে। ৫০ থেকে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসব যানবাহনে চড়ে টানেল দেখে আসছেন দর্শনার্থীরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সংযোগ সড়কের শেষ প্রান্ত মিলিত হয়েছে আনোয়ারার চাতরী চৌমুহনীর পিএবি (পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী) সড়কে। বেলা বাড়তেই সেখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে বাস। এসব বাস জনপ্রতি ৫০ টাকা করে দর্শনার্থীদের টানেল ঘুরিয়ে আনে। টানেল দেখে পতেঙ্গা সৈকত পর্যন্ত যান দর্শনার্থীরা।

শুধু বাসই নয়। আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়ে টানেল ঘুরে আসা যায়। সেখানে ২০ মিনিট সময় কাটিয়ে দর্শনার্থীরা আনোয়ারা ফিরে আসেন। একইভাবে পতেঙ্গা প্রান্ত থেকেও লোকজন টানেল ঘুরে দেখছেন।

গত ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ভোর থেকে টানেলটি সর্বসাধারণের যাতায়াতের জন্য খুলে দেওয়া হয়। উদ্বোধনের পর গত শুক্র ও শনিবার রেকর্ড পরিমাণ যানবাহন চলাচল করেছে টানেলে। এসব যানবাহনের বেশির ভাগই ছিল টানেল দেখতে যাওয়া লোকজনের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চালুর পর পিকআপ, ট্রাক, প্রাইভেট কারে করে লোকজন টানেল পার হলেও এখনো রুট নির্ধারণ না হওয়ায় দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়নি।

আজ সকালে মো. নাসির (২৭) নামের টানেল দেখতে আসা এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘চন্দনাইশ উপজেলার বরমা থেকে আমরা চার বন্ধু টানেল দেখতে এসেছি। লোকাল বাসে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে টানেল দেখেছি। টাকা খরচ কম হওয়ায় ভালো লাগছে।’

বাসচালক মো. খোকন বলেন, ‘আমরা বাসে করে জনপ্রতি ৫০ টাকা নিয়ে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত যাই। যাত্রীদের অধিকাংশ টানেল দেখতে যান।’

আনোয়ারা প্রান্তে অস্থায়ী লাইন্সম্যান মহিউদ্দিন বলেন, আনোয়ারা প্রান্ত থেকে ২০টি বাস দিনে দুবার করে আসা–যাওয়া করে। এ ছাড়া পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বহনকারী বাসও রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫০টির মতো বাস চলাচল করছে টানেলে। তিনি আরও বলেন, সকালের চেয়ে বিকেলে টানেলে ভিড় থাকে বেশি। কারণ, তখন টানেল দেখতে আসেন দর্শনার্থীরা।

ছুটির দিনে যানজট

টানেল দেখতে শুক্রবার টানেলের দুই পাশে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। ওই সময় দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের। শুক্রবারই নয়, ছুটির দিন হওয়ায় শনিবার দিনভরও টানেলের দুই পাশে বাস, মাইক্রোবাস ও নিজস্ব পরিবহনে লোকজন আসে।

টানেলমুখী এমন লোকজনের ভিড়ের মধ্যেই শুক্রবার দুর্ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাত নয়টায় টানেলের ভেতরে একটি প্রাইভেট কারকে পেছন থেকে একটি বাস ধাক্কা দিলে একই পরিবারের চারজন আহত হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টানেলে দুর্ঘটনা ঘটার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। টানেল ও টোলপ্লাজা এলাকায় যানবাহন দাঁড় করিয়ে ছবি তোলার সময় নিরাপত্তাকর্মীরা বাধাও দিচ্ছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের টোল ব্যবস্থাপক মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, শুক্র ও শনিবার রেকর্ড পরিমাণ যানবাহন চলাচল করেছে। তাই টানেল এলাকায় নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে।

কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহির হোসেন বলেন, শুক্রবার রাতে বাস-প্রাইভেট কারের দুর্ঘটনার বিষয়ে এখনো মামলা হয়নি। তবে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি টানেল কর্তৃপক্ষের কাছে জব্দ অবস্থায় আছে।