চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব, পুলিশ বক্স ও পরিবহন দপ্তরে ভাঙচুর এবং শাটল ট্রেনে দুর্ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করতে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে কমিটি গঠনের বিষয়টি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মামলার প্রতিবাদে গতকাল ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ মিছিল করেছে ছাত্রলীগের উপপক্ষ সিক্সটি নাইন। মামলায় সিক্সটি নাইন উপপক্ষের ছয় নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ আছে। এর মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদক সিক্সটি নাইনের নেতা শফিকুল ইসলামও মিছিলে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করে বলে, ভাঙচুর কিংবা চাঁদাবাজির কোনো ঘটনাতেই ছিলেন না।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে যাওয়ার সময় হেলে পড়া গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৬ শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের মধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী এখনো চিকিৎসাধীন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেদিন রাত ১২টার দিকে ৬৫টি যানবাহন, উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব এবং পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এই ভাঙচুরে জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর গত শনিবার রাতে শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ১২ জনসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে হাটহাজারী থানায় মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটি গঠনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, একটি কমিটি জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য করা হয়েছে। আরেকটি কমিটি শাটল ট্রেনের দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে। এ ছাড়া আরেকটি কমিটি ভাঙচুরে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করবে। দুটি কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে ও একটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
শাটল ট্রেনের ছাদে দুর্ঘটনার কারণ জেনে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তিন সদস্যর কমিটি করা হয়েছে। এতে আহ্বায়ক করা হয় যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদ উল্লাহকে। এ ছাড়া ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পালকে সদস্য আর নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাককে সদস্যসচিব করা হয়েছে।
অন্যদিকে ভাঙচুরের ঘটনায় পাঁচ সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বশির আহাম্মদকে আহ্বায়ক ও সহকারী প্রক্টর সৌরভ সাহাকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। বাকি সদস্যরা হলেন জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক অঞ্জন কুমার চৌধুরী, ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, জিন প্রকৌশল ও জীবপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক নাজনীন নাহার ইসলাম।
ভাঙচুরে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা হিসাব করে বের করার জন্য ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ। এতে মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক সজীব কুমার ঘোষকে আহ্বায়ক ও উপহিসাব নিয়ামক মাসুদুর রহমান চৌধুরীকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আকতার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত হিসাব নিয়ামক আমিরুল ইসলাম, পরিবহন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন, প্রকৌশল দপ্তরের মোল্লা খালেদ হোসেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের করা মামলার প্রত্যাহার চেয়েছে ছাত্রলীগের উপপক্ষ সিক্সটি নাইন। গতকাল বেলা আড়াইটায় মামলার প্রতিবাদে মিছিল করেছেন এই উপপক্ষের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গোলচত্বর থেকে শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবন ঘুরে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ঝুপড়িতে শেষ হয়।
এর আগে গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাঙচুর, হত্যাচেষ্টা ও চুরির অভিযোগে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে। এ ঘটনায় গতকাল রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে সাজ্জাদ হোসেন ও আমিনুল ইসলাম নামের দুই আসামি দাবি করেন, তাঁরা কেউ ভাঙচুরে জড়িত নন। ছিলেন না ঘটনাস্থলেও।