সাংবাদিক রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা অধিকতর তদন্তে পিবিআইকে নির্দেশ

প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম

দণ্ডবিধি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) আজ সোমবার এই আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন রোজিনা ইসলামের আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার।

মামলার বাদী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শিব্বির আহমেদ ওসমানী আজ আদালতে হাজির হয়ে বলেন, তাঁর করা মামলায় যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, এর বিরুদ্ধে তিনি নারাজি দেবেন।

আরও পড়ুন

আদালত তখন বাদীর কাছে জানতে চান, তিনি কেন নারাজি দেবেন?

শিব্বির আহমেদ আদালতকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে তিনি বাদী হয়ে মামলাটি করেন। কিন্তু যথাযথ তদন্ত না করে মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

আদালত বলেন, নারাজি দেওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করতে হয়।

মামলার বাদী বলেন, এ বিষয়ে তাঁর আইনজীবী কথা বলবেন।

এ পর্যায়ে রোজিনা ইসলামের আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার বলেন, তাঁর মক্কেলের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী অসুস্থ। তিনি আজ আদালতে আসতে পারেননি। এ জন্য নারাজি আবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য নতুন তারিখ ধার্যের আরজি জানান তিনি।

প্রশান্ত কর্মকারের এই আরজির বিষয়ে আপত্তি জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী বদরুল ইসলাম। তিনি আদালতে বলেন, মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে নারাজি দেওয়া হলে এর ওপর শুনানিতে আসামিপক্ষের বক্তব্য রাখার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন

উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে পরে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। রোজিনা ইসলামের পক্ষে আদালতে শুনানিতে আরও অংশ নেন আইনজীবী মাহমুদুল হাসান।

গত বছরের জুলাইয়ে এই মামলায় রোজিনা ইসলামকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সপক্ষে কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে গত ১৫ জানুয়ারি বাদীপক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়। আজ মামলার বাদী আদালতে হাজির হয়ে লিখিত নারাজি আবেদন জমা দেন।

আদালত বাদীর আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিলেন। শুনানির সময় আদালতে হাজির ছিলেন রোজিনা ইসলাম।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলায় পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছিল যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন। সংস্থাটি আশা প্রকাশ করে, আদালতের কাছ থেকে রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন।

আরও পড়ুন

২০২১ সালের ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্তা ও নির্যাতন করা হয়। একই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রাত পৌনে ১২টার দিকে রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কারাগারে পাঠানো হয়। এক সপ্তাহের মাথায় ২৩ মে জামিনে মুক্তি পান রোজিনা ইসলাম। এর পর থেকে তিনি আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে আসছেন।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম ‘সেরা অদম্য সাহসী’ হিসেবে ২০২১ সালে ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এ ছাড়া গত বছরের ৯ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২২ সালের ‘অ্যান্টি-করাপশন চ্যাম্পিয়নস অ্যাওয়ার্ড’ পান প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি রোজিনা ইসলাম।

আরও পড়ুন