তিন ঘণ্টা অপেক্ষা, পরিদর্শকের সহায়তায় চাল পেলেন হালিমা

তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর খাদ্য পরিদর্শকের সহায়তায় চাল পেয়েছেন বিবি হালিমাছবি: জুয়েল শীল

মাস খানিক আগে স্বামী, মেয়েসহ ভোলা থেকে চট্টগ্রামে এসেছেন চল্লিশোর্ধ্ব বিবি হালিমা। রিকশাচালক স্বামী কোমরে আঘাত পাওয়ার কারণে বর্তমানে কাজ করতে পারছেন না। তাই গৃহকর্মীর কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি একাই। থাকেন চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকায়। প্রতিবেশীর কাছ থেকে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির (ওএমএস) ট্রাক সম্পর্কে জানতে পেরে আজ রোববার সকাল আটটায় চাল কিনতে সেখানে আসেন হালিমা। তবে চাল পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় তিন ঘণ্টা।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় থানা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে দেখা গেল চালের আশায় আসা বিবি হালিমাকে। তখনো সেখানে ছাতা হাতে কিংবা মাথায় বস্তা দেওয়া অবস্থায় ৬০ জনের কাছাকাছি মানুষের সারি। রোদের তাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকেই তখন সারি ছেড়ে বসে পড়েছেন পাশের ফুটপাতে। বিবি হালিমাও ট্রাকের পাশে একটি ময়লা ফেলার ভ্যানের ওপর বসে ছিলেন। সেখানে বসেই ট্রাকে থাকা বিক্রেতাদের অনুরোধ করছিলেন পাঁচ কেজি চালের জন্য। এ সময় বিক্রেতারা তাঁর সঙ্গে রূঢ় আচরণ করলে হতাশ হয়ে যান। পরে চাল দেওয়ার আশ্বাসে তাঁকে নিরাপদে নামিয়ে আনেন দায়িত্বে থাকা খাদ্য পরিদর্শক।

বিবি হালিমার সঙ্গে যখন কথা হয়, তখন তিনি ক্লান্ত। মেয়ের বয়স জানতে চাইলে সঠিক বয়স জানাতে পারলেন না তিনি। পাশে থাকা প্রতিবেশী বললেন, হালিমার মেয়ের বয়স সাত থেকে আট বছর।

ট্রাকে থাকা চাল হিসাব করে সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক মিন্টু কুমার দাশ জানালেন, আশা করা যাচ্ছে সবাই চাল পাবেন। এ ছাড়া বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবতীদের আগে চাল দেওয়া হয় সব সময়। সারিতে ঠিকঠাক দাঁড়ালে চাল দ্রুত দেওয়া যায়। কিন্তু বিশৃঙ্খলার কারণে দেরি হয়। এতে ক্রেতারাই ভোগান্তিতে পড়েন।

কিন্তু তখনো অপেক্ষমাণ মানুষের সারি ক্রমাগত দীর্ঘ হচ্ছিল। মিন্টু কুমার দাশ বলেন, ট্রাকে ৪০০ জনের চাল থাকে, কিন্তু দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে চালের চাহিদা অনেক বেশি। সপ্তাহে তিন দিন চাল দেওয়ার পরও দেখা গেছে, অনেকেই চাল না পাওয়ার অভিযোগ করেন। চাহিদা বেশি থাকায় আজ রোববার একই ওয়ার্ডে ব্যাপারীপাড়া এলাকায়ও ওএমএসের কার্যক্রম চলছে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে থানা শিক্ষা অফিস ও ব্যাপারীপাড়া এলাকায় চলছে ওএমএসের কার্যক্রম। গরমে ও রোদের তাপের ক্লান্ত হয়ে চাল কিনছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা
ছবি: জুয়েল শীল

পরিদর্শকের সহায়তায় চাল পেয়েছেন মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. হেলাল। তাঁর মা রোকেয়া আক্তার বলেন, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত স্বামী কাজ করতে পারেন না এখন। ছেলে হেলাল উদ্দিনকে নিয়ে নগরে ঘুরে যা সহায়তা পান, তা দিয়েই সংসার চলে। হেলালের স্ত্রী, বোন আর মা-বাবা মিলে মোট পাঁচজনের সংসার তাঁদের।

একই চিত্র দেখা গেল আগ্রাবাদ ব্যাপারীপাড়া এলাকায়ও। রোদের তাপে হাঁপিয়ে ওঠা ক্রেতারা জানান, তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেছেন। চাল পেলেও শরীরের ওপর দিয়ে ধকল যাচ্ছে। ট্রাক এলেই হুড়োহুড়ি লেগে যায়। হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অনেকেই সারি থেকে সরে যান। অনেকে আগে এসেও সারি থেকে সরে পড়ার কারণে চাল পাননি।  

বেলা সাড়ে ১১টায় সেখানে থাকা খাদ্য পরিদর্শক আসাদুজ্জামান ভূঞা বলেন, চাল বিক্রির কথা ছিল আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে প্রায় আধা ঘণ্টায়ও কাউকে পাওয়া যায়নি। মানুষ দাঁড়িয়ে আছে খবর পেয়ে পরে ব্যাপারীপাড়ায় এসে চাল বিক্রি শুরু হয়। সারিতে সবাই শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে থাকায় দ্রুত চাল বিক্রি হয়েছে। তবে চাহিদা বেশি থাকায় ১৫ থেকে ১৮ জনকে চাল না পেয়েই ফেরত যেতে হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরে থাকা আরও ১২টি স্থানে ওএমএসের চাল বিক্রির স্থান থেকে খালি হাতে ফেরত গেছেন ১০ থেকে ২০ জন। তবে রমজান মাসে ভোগান্তি কমাতে ক্রেতাদের দ্রুত চাল দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এসব স্থানের দায়িত্বে থাকা খাদ্য পরিদর্শকেরা।