ডিপ ফ্রিজ: কেন এবং কীভাবে ব্যবহার করব

একটা সময় ছিল নদী-পুকুর থেকে মাছ ধরে আনা হতো, তাজা মাছ রান্না করার সময় ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়তো চারপাশে। কিংবা বাজার থেকে কিনে আনলেও নানি-দাদিদের সেই মাছ-মাংস নিয়ে পোহাতে হতো নানা ঝক্কিঝামেলা। রান্না করা বা সংরক্ষণ করা নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হতো। জীবন এখন সহজ হয়েছে। বেলায় বেলায় মাছ-মাংস রান্নার জন্য এখন বিলের ধারে কিংবা বাজারে যেতে হয় না। ঘরেই আছে ডিপ ফ্রিজ। পছন্দের মাছ-মাংস ফ্রিজ থেকে নামিয়েই সরাসরি রান্না করা যায়।

সংসারের যে যন্ত্রটি আপনার জীবনটাকে সহজ করে দিয়েছে, সেই ডিপ ফ্রিজের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন ইলেকট্রোমার্ট লিমিটেডের ন্যাশনাল সেলস ম্যানেজার জুলহাক হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আসলে কোনো কিছু তাজা খাওয়ার তো বিকল্প নেই। কিন্তু ব্যস্ততার এই দিনে প্রতিদিন বাজারে যাওয়ার কথা ভাবাই যায় না। তাই পরিবারগুলো এখন ফ্রিজের ওপরই ভরসা করছে বেশি। সব পরিবারে একটি করে ফ্রিজ তো থাকেই। কোনো কোনো পরিবারে দেখা যায় একাধিক ফ্রিজও। একেক ধরনের খাবার, একেক ফ্রিজে রাখার জন্য আলাদা ফ্রিজ ব্যবহার করে থাকেন। এটিও স্বাস্থ্যসম্মত। আমি বলব, ডিপ ফ্রিজ জীবনকে সহজ করে দেয়।’

পরিবারে প্রতিদিনের বাজার করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে কিংবা খাদ্যপণ্য মাসের পর মাস সংরক্ষণ করতে ডিপ ফ্রিজই উত্তম সমাধান। কেটে-বেছে সুন্দর করে ডিপ ফ্রিজে গুছিয়ে রাখলে ঘরের কাজ হয়ে যায় অনেক সহজ।

তবে ঘরে একটি ডিপ ফ্রিজ থাকলে তা নিয়ে বাড়তি চিন্তারও কিছু বিষয় থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ডিপ ফ্রিজ থেকে প্রচণ্ড শব্দ বের হয়, যা বাসার সদস্যদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে দেখতে হবে ঘরের ফ্রিজটি কি দেয়ালের গা ঘেঁষে রাখা হয়েছে কি না। তাহলে দেয়াল থেকে কমপক্ষে ১০ সেন্টিমিটার দূরে রাখতে হবে। পরীক্ষা করে নিতে হবে, ডিপ ফ্রিজে বরফ জমে আছে কি না।

ফ্রিজের ক্যাপাসিটরের বেশি কাজ করা বা শক্তি খরচ করা থেকেও এই শব্দ হতে পারে। একটু দেখে-শুনে ব্যবহার করলে এই শব্দ থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

ফ্রিজ ঠিকমতো ঠান্ডা না হওয়ার সমস্যায়ও ভোগেন কেউ কেউ। এ রকমটা হলে দেখতে হবে, ফ্রিজের পেছনে ক্যাপাসিটরে ধুলো বা বেশি ময়লা জমে আছে কি না। যদি হয়ে থাকে তাহলে খুব সাবধানে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এ ছাড়া ফ্রিজের দরজা ঠিকমতো বন্ধ হয় কি না, হালকাভাবে চাপ দিয়ে তা দেখতে হবে। যদি না হয়, তাহলে বুঝতে হবে দরজা এয়ারটাইট নয়। অনেক সময় ফ্রিজ খুব ভালো করে পরিষ্কার করার পর আবার ঠিকমতো দরজা লাগানো যায়। তারপরও যদি না হয় তাহলে দরজা বদলানো দরকার। আর ডিপ ফ্রিজটি যদি বেশি পুরোনো হয় তাহলে বদলে ফেলাই ভালো।

অনেক সময় দেখা যায় ডিপ ফ্রিজের মধ্যে পানি জমে থাকে। ফ্রিজের ভেতরে পানি যাতায়াতের জন্য নলের ভেতরে একটি ছিদ্রের মতো ব্যবস্থা থাকে। সেটা দিয়ে যদি পানি যাতায়াত করতে না পারে তাহলে এই সমস্যাটা হয়। এমনটা হলে বেশির ভাগ সময়ই ধরে নেওয়া হয়, কোনো কারণে চিকন নলের ছিদ্রটি বন্ধ হয়ে বা আটকে গেছে। তাই এটি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। প্রয়োজনে একটি চিকন ব্রাশ বা দাঁতব্রাশও ব্যবহার করা যায়।

আমরা অনেকেই ডিপ ফ্রিজের ভেতর রান্না করা অতিরিক্ত খাবার রাখি। সঠিক পদ্ধতিতে না রাখার জন্য ফ্রিজের ভেতরে একধরনের গন্ধ হয়ে যায়। বেশি করে খাবার রান্না করে যদি রাখতেই হয় তাহলে এয়ারটাইট বাক্সে রাখতে হবে। ফ্রিজ নিয়মিত পরিষ্কার করলে এই গন্ধ থাকবে না। মাঝেমধ্যে লেবু মেশানো পানি দিয়ে মুছেও নিতে পারেন, কিংবা একটি লেবুকে দুই ভাগ করে কেটে ফ্রিজে দুই দিন রেখে দিতে পারেন। এতে দুর্গন্ধ, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি দূর হয়ে ফ্রিজে লেবুর তাজা সুবাস ছড়াবে।

যত্নে ভালো থাকে প্রতিটি জিনিস। আপনি যদি সঠিকভাবে যত্ন এবং ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে অন্যান্য যন্ত্রের মতো ডিপ ফ্রিজও মাঝেমধ্যে বিড়ম্বনার কারণ না হয়ে বন্ধু হয়ে পাশে থাকবে।