শিল্প ও অবকাঠামোর জন্য রং তৈরি করি

শায়ান সিরাজ, ডিরেক্টর, এ্যাকোয়া পেইন্টস

আপনাদের প্রতিষ্ঠানের শুরুটা কীভাবে? 

আমাদের প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫২ সালে, যখন আমাদের প্রতিষ্ঠাতা ‘কুমির মার্কা আলকাতরা’ নামে একটি রঙের ব্র্যান্ড চালু করি। সেখান থেকেই আমাদের পথচলা শুরু। এরপর দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালে আমাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রামজুল সিরাজ এ্যাকোয়া পেইন্টস নামে ঢাকার অদূরে টঙ্গীর বিসিক এলাকায় অত্যাধুনিক মানসম্পন্ন গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ডের একটি কম্প্রিহেনসিভ রং উৎপাদন কারখানা স্থাপন করেন। সেই থেকে আমরা দেশীয় বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। রংশিল্পের কাঁচামাল যেমন রেজিন ও ইমালশন নিজেরা উৎপাদন শুরু করি, যা এখন ‘এ্যাকোয়া রেজিন ও ইমালশন’ নামে রঙের বাজারে বেশ পরিচিত। 

একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, যা দেশীয় কোম্পানি হিসেবে উল্লেখ করতে চান?

একটি বড় চ্যালেঞ্জ যা আমরা দেশীয় কোম্পানি হিসেবে মোকাবিলা করছি, তা হলো কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে সমস্যা। উদাহরণ, আমরা যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল আমদানি করি এবং সরবরাহকারীর সঙ্গে আলোচনার পর প্রতি কেজি ১.৯০ ডলারে পাই, তবে কাস্টমস এটি ২.৯০ ডলার প্রতি কেজি হিসাবে মূল্যায়ন করে। এর ফলে আমাদের অতিরিক্ত কাস্টম শুল্ক দিতে হয়, যা আমাদের উৎপাদন খরচ অপ্রত্যাশিতভাবে বাড়িয়ে দেয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা সরবরাহকারীর প্রকৃত মূল্য (১.৯০ ডলার) দেখানোর সুযোগও পাই না। এ ধরনের মূল্যায়ন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ, যা আমরা এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

রঙের বাজারের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ভাবনা কতটুকু প্রভাব ফেলে?

প্রতিটি কোম্পানিই তাদের নিজস্ব অবস্থান থেকে উদ্ভাবনী চিন্তাধারার মাধ্যমে বাজারে এগিয়ে যাচ্ছে, আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। যদি কোনো নির্দিষ্ট পণ্যের কথা বলতে হয়, তাহলে আমি থার্মোপ্লাস্টিক হটমেল্ট রোড মার্কিং এবং রানওয়ে মার্কিং পেইন্টের কথা বলব, যা আমাদের অন্যতম উদ্ভাবনী পণ্য। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আমরা এখন রেজিন ও ইমালশন তৈরি করছি, যা অনেক দেশি-বিদেশি ও স্বনামধন্য কোম্পানি ব্যবহার করছে। এর ফলে দেশের টাকা দেশে থাকছে এবং এটি একটি কার্যকর আমদানি বিকল্প হিসেবে কাজ করছে।

আপনাদের পণ্য কী কী?

আমাদের পণ্যের পরিসর বেশ বিস্তৃত, যেখানে ওয়াটার বেইস, সলভেন্ট বেইস এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্ট রয়েছে। ওয়াটার বেইস পেইন্ট দুটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত—ইন্টেরিয়র ও এক্সটেরিয়র। ইন্টেরিয়র পেইন্টের মধ্যে ‘সুপারস্টার’ অন্যতম জনপ্রিয় পণ্য, যা ওয়াশেবল, শিন ফিনিশ, টেকসই ও উচ্চ কভারেজ প্রদান করে। এক্সটেরিয়রের জন্য ‘ডিফেন্ডার’ অন্যতম, যা বাড়ির বাহ্যিক অংশকে রক্ষা করে এবং পরিবেশবান্ধব। সলভেন্ট বেইস পেইন্ট শ্রেণিতে রয়েছে ক্যাপ্টেন প্রিমিয়াম এনামেল পেইন্ট, রোড মার্কিং পেইন্ট ইত্যাদি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পেইন্ট শ্রেণিতে রয়েছে ইপোক্সি এনামেল ও ইপোক্সি সেলফ লেভেলিং। এ ছাড়া আমরা মেরিন পেইন্ট ও অন্যান্য বিশেষায়িত পেইন্ট সরবরাহ করি, যা বিভিন্ন শিল্প ও অবকাঠামোর জন্য আমরা রং তৈরি করি। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

আমরা চাই, আমাদের দেশ আরও সুন্দর হোক এবং আমাদের পণ্য দিয়ে ভবন, রাস্তা, হাইওয়ে ও শিল্পকারখানার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি।