পাওয়া না পাওয়ার বইমেলা

অমর একুশে বইমেলার স্টলে পছন্দের বই দেখছেন পাঠকেরা। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
ছবি: খালেদ সরকার

দূরত্ব আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দেয়। আবু তাহের শুধু বইমেলার জন্য নোয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছিলেন গতকাল রোববার দুপুরে। সন্ধ্যায় আবার ফিরবেন। ৭৬ বছরের প্রবীণ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করেন। গণমাধ্যমের কথা শুনে নিজেই খুলে দেখালেন বাংলা একাডেমির প্যাভিলিয়নে রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বইয়ের ভুল। সেখানে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের নামের তালিকায় ২০ নম্বর নামটি অনুপস্থিত।

আবু তাহেরের মতো মনঃক্ষুণ্ন ভাব ছিল অনুপম প্রকাশনীর কর্মী শাখাওয়াত হোসেনের। প্রকাশনীর বইগুলো বেলা একটার মধ্যে মেলায় নিয়ে আসতে হবে—এমন দাবি করেছেন প্রবেশপথের একজন নিরাপত্তাকর্মী। ফলে বই ভাগ ভাগ করে কয়েকবার মন্দিরের গেট থেকে আনতে হয়েছে তাঁকে।

তবে প্রথম চার দিনের তুলনায় গতকাল বিকেলে মেলায় ধুলা কম উড়েছে বলে খুশি পাঠক–দর্শনার্থী, প্রকাশকেরা। অনন্যা প্রকাশনীর সামনে দেখা গেল স্বামী অরুণ চৌধুরীর নতুন বইয়ের কয়েকটি কপি কিনে নিলেন নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী। আরও বড় উৎসব তখন অপেক্ষা করছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝামাঝিতে অন্যধারা বইয়ের দোকানে। সেখানে ভিড় জমেছে লেখকের জন্য। সাদাত হোসাইন অটোগ্রাফ দিচ্ছেন নিজের নতুন বইয়ে। সাদাত হোসাইন জানালেন, অন্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত শঙ্খচূড় বইটি নিয়েও ভীষণ আশাবাদী তিনি।

পরপর দুটি ছুটির দিনের পর গতকাল ভিড় কম হবে বলে ভাবা হয়েছিল। সে তুলনায় অনেক মানুষ এসেছিলেন মেলার পঞ্চম দিন। এদিনে নতুন বই এসেছে ৭৩টি। এর মধ্যে উপন্যাস ১৪টি, প্রবন্ধের ১২টি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৬ নম্বর প্যাভিলিয়নে কিশোরদের ভিড় ছিল একটু বেশি। ওরা এসেছিল নতুন বইয়ের সন্ধানে। গতকাল প্রথমা প্রকাশন থেকে কিশোরদের জন্য প্রকাশিত হয়েছে ওয়েস্টার্ন, রহস্য উপন্যাস আর দুটি কিশোর থ্রিলার। অদৃশ্য পৃথিবী, বাসার স্যারের বাকি রহস্য, প্রতি মঙ্গলবার আমরা বই ছাড়া স্কুলে যাই আর রূপংকর ভয়ংকর বইগুলোর জন্য নাকি মেলা শুরুর পর থেকে ওরা অপেক্ষা করছিল। কেউ কেউ আবার এ সুযোগে স্টিফেন হকিং ও তাঁর আবিষ্কৃত বিজ্ঞান বইটি কেনার বায়নাও ধরল সঙ্গে আসা অভিভাবকের কাছে। মেলা থেকে ধর্মীয় বই সংগ্রহের আগ্রহ আছে অনেক পাঠকের। প্রাণপ্রাচুর্যে ইসলামসহ কয়েকটি বই খুঁজলেন একজন পাঠক। আর এবারের মেলায় নতুন বই না থাকা লেখক বলছিলেন নিজেদের আগে প্রকাশিত বইগুলোর কথা। লেখক আকন্দ সামসুন নাহার তখন মেলায় ঘুরছেন নিজের দুটি পুরোনো বই হাতে নিয়ে। গত বছরের মেলায় এই লেখককে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা হয়েছিল। তিনি ঘুরে ঘুরে নিজের বই বিক্রি করেন। এবার মেলায় দেখা গেল এখন আর একা হাঁটতে পারেন না।

নতুন বই নিয়ে অনুপম প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মিলন নাথ বললেন, তাঁর প্রকাশনী থেকে মুক্তিযুদ্ধে আঞ্চলিক বাহিনীসমূহ নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ বই আসছে দু–এক দিনের মধ্যে। একটু দূরেই তখন লাল রঙের একটি বই ঘাসের ওপর রেখে ছবি তুলছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত মোস্তফা সেলিমের সম্পাদনায় প্রকাশিত জন্মভূমি বইটির ওপর লেখা আছে—বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের মুখপত্র। এটি মূলত মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত পত্রিকার সংকলন। ততক্ষণে জমেছে সন্ধ্যার মেলা।

আলো কমে গেলে মেলার মাঠে এলেন আরও মানুষ। গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় কিছুটা ভিড় জমে। সেই ভিড়ে আবার দেখা আবু তাহেরের সঙ্গে। হাতে ব্যাগভর্তি বই। বললেন, অনেক দূর ফিরতে হবে, তাই দ্রুত যাই। খুঁজতে খুঁজতে ভালো কিছু বই পেয়েছেন তিনি। তাই মুখে হাসি নিয়ে আবু তাহের ছুটলেন নোয়াখালী ফেরার বাস ধরতে।