গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী ও দিনমজুরও যখন ‘বিএনপির কর্মী’

গত ৫ ডিসেম্বর মোহাম্মাদপুর থানার মামলায় গ্রেপ্তার সোহেল ও জামালকে হাজতখানা থেকে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশছবি : দীপু মালাকার

বিজয় দিবস, বড়দিন, খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণ উদ্‌যাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে এবং পুরান ঢাকার আদালত ফটক থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা পর ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশেষ অভিযান চালায় পুলিশ। সারা দেশে পুলিশের ১৫ দিনের বিশেষ অভিযানে ২৩ হাজার ৯৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে তালিকাভুক্ত জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ৭২ জন। তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী কতজন, সেটা জানায়নি পুলিশ।

বিরোধী দল বিএনপির অভিযোগ, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় তাদের বিভাগীয় মহাসমাবেশের যে কর্মসূচি ছিল, সেটি বানচাল করার উদ্দেশ্যেই পুলিশ বিশেষ অভিযান চালায়। তবে বিশেষ অভিযানের আগে থেকেই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ‘গায়েবি’ মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। এসব মামলা ও বিশেষ অভিযানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী, দিনমজুর ও রিকশাচালকেরাও গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে তাঁদের স্বজন ও আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

একই মামলায় গ্রেপ্তার বিএনপির নেতা ও শিক্ষার্থী

খিলগাঁওয়ের ত্রিমোহিনী গুদারাঘাটের সামনে ৩ ডিসেম্বর রাতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক দেখানোর অভিযোগে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়। মামলায় খিলগাঁও থানার স্থানীয় বিএনপির ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ওই মামলায় ৯ ডিসেম্বর খিলগাঁওয়ে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন ১৯ বছর বয়সী রিহাব। পরে রিহাবের আইনজীবী ঢাকার সিএমএম আদালতে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত গত ১২ নভেম্বর তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছেন। রিহাবের আইনজীবী মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রিহাব এবার এসএসসি পাস করেছেন। ১৫ ডিসেম্বর উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি শুরু হবে। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত রিহাবের জামিন মঞ্জুর করেন।

খিলগাঁও থেকে গত ৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন বিএনপি নেতা ইব্রাহীম হকি। স্বামীকে একনজর দেখার জন্য ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে অপেক্ষা করছিলেন ফরিদা বেগম
সাজিদ হোসেন

একই মামলায় ৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন ইব্রাহীম হকি (৫০)। তাঁকেসহ পাঁচজনকে দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছিলেন আদালত। স্বামীর খোঁজ নিতে তখন আদালতে আসা ইব্রাহীমের স্ত্রী ফরিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁর স্বামী খিলগাঁও যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর আগেও তাঁর স্বামীর নামে পুলিশ আরও আটটি মামলা দিয়েছে। সেসব মামলায় নিয়মিত তিনি আদালতে হাজিরা দিয়ে গেছেন। সেদিন রাতে (৩ ডিসেম্বর) তাঁর স্বামী যখন ভাত খাচ্ছিলেন, তখন পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।

রিকশাচালক ও দিনমজুর যখন ‘বিএনপির কর্মী’

১০ ডিসেম্বরের আগের অন্তত সাত দিন দুপুরের পর থেকে পুলিশের পিকআপ ও প্রিজন ভ্যানে করে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ঢাকার সিএমএম আদালতে আনতে দেখা গিয়েছিল। তখন ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানার সামনে স্বজনদের ভিড় লেগেই থাকত। তবে গোলাপবাগে ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশের পর সেই চিত্র বদলে যায়। ৫ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় সোহেল, জামালসহ চারজনকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে সোহেল ও জামিনের পরিচয় উল্লেখ করা হয়, এই দুজন বিএনপির কর্মী। তবে দুজনের আইনজীবী এ এইচ এম মাসুম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, দুজনই দিনমজুর। সোহেল ঠেলাগাড়ি চালান আর জামাল রিকশাচালক। সন্দেহজনকভাবে তাঁদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আইনজীবী মাসুম জানান, জামিন আবেদন করা হলেও তাঁদের জামিন মঞ্জুর হয়নি। জামিনের জন্য তাঁরা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।

খিলগাঁও থেকে গ্রেপ্তার লন্ড্রির দোকনদার খোকন মিয়াকে আদালতে তোলা হয়
ছবি : প্রথম আলো

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে খোকন মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ৩ ডিসেম্বর আদালতে হাজির করা হয়। তাঁর স্ত্রী বিলকিস বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী গরিব মানুষ। একটি ছোটখাটো লন্ড্রির দোকান চালিয়ে কোনোমতে সংসার চালান তিনি। তবে ১২ দিন হয়ে গেল, স্বামী কারাগারে। এখনো জামিনও হয়নি।’ খোকনের আইনজীবী নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, খোকনের জামিন চাওয়া হয়েছে। তবে জামিন মঞ্জুর হয়নি।