জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে কারও দরদ নেই, বললেন শহীদ পরিবারের সদস্য

মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারে ধীরগতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। একজন সদস্য বলেছেন, বিচার নিয়ে কারও দরদ নেই।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ পুরস্কার ২০২৫’ প্রদান অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা এ কথা বলেন।

এতে কয়েকজন শহীদ পরিবারের সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একজন শহীদ সাইদুল ইসলাম ইয়াসিনের মা শিল্পী আক্তার বলেন, ‘কেউ নতুন দলের জন্য হাহাকার করছে, কেউ দ্রুত নির্বাচনের জন্য বাড়াবাড়ি করছে, কিন্তু বিচার নিয়ে কারও দরদ নেই। আমাদের নিয়ে আসলে কী কেউ ভাবছে? ওদের (শহীদদের) স্মৃতি নিয়েই প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকতে হয়। মানসিক শান্তি দিতে চাইলে বিচার করেন।’

নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানিয়ে শিল্পী আক্তার বলেন, ‘আরেকটা সন্তান নিয়ে আমাকে তো বাঁচতে হবে। এলাকায় থাকতে পারি না। ইতিমধ্যে দু–তিনবার বাসা পরিবর্তন করেছি। ছোট দোকান ছিল, সেটাও চালু করতে পারছি না। জীবন নিয়ে হুমকির মধ্যে আছি।’

যাঁদের জন্য এই স্বাধীনতা, তাঁরা গত সাত মাসে বিচার পেয়েছে কি না, প্রশ্ন তুলে শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের সামনে বিচারের মুলা ঝোলানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, মানবাধিকারসহ সব নিয়ম ভঙ্গ করে পুলিশ পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে। কয়জন অপরাধে যুক্ত পুলিশ সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন, ‘হেলমেট বাহিনীর’ কয়জন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? তিনি জানতে চান, বিচারের রঙ্গমঞ্চে কি অপরাধীদের মূর্তির ফাঁসি দেওয়া হবে?

শহীদ আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান বলেন, ‘একমাত্র সন্তানের গুলিবিদ্ধ লাশ দেখেছি। আমাদের কান্না তো কোনো দিন থামবে না। কষ্টও কেউ বুঝবে না। অথচ বিচারের নামে প্রহসন হচ্ছে। বিচার কী আসলে হবে?’

সরকারের কাছে পরিপূর্ণ বিচারের অনুরোধ জানিয়ে শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা মো. গোলাম রহমান বলেন, ‘আপনারা বিচার করতে না পারলে বা পরবর্তী সরকারের জন্য রেখে দিলে আপনাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। তাই কোনো ছাড় দেবেন না।’

শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ রকম আন্দোলন যেন আর না করতে হয়। তিনি আশা করেন, লেখক ও সাহিত্যিকেরা কলম ও সাংবাদিকতার দ্বারা শহীদদের পক্ষে এবং প্রকৃত বিচারের কথা তুলে ধরবেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান।

এ বছর কবিতায় কবি মতিন বৈরাগী ও শিশু সাহিত্যে কবি হাসান হাফিজকে ‘ফয়েজ আহমেদ পুরস্কার’ এবং কবি জুলফিকার হোসেন তারাকে ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ সম্মাননা পুরস্কার’ দেওয়া হয়। তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

পুরস্কার পেয়ে কবি মতিন বৈরাগী বলেন, ‘জাতীয় কবিতা পরিষদ এত বছর পর পুনর্গঠিত হয়ে আমাদের সম্মানিত করেছে, এটা আমাকে বিস্মিত ও মুগ্ধ করেছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘শহীদ পরিবারের হাত থেকে পুরস্কার নেওয়া আমাদের সৌভাগ্য। আমাদের প্রাথমিক বিজয় হলেও সামনে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সেগুলোকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’