শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষী করায় প্রাধ্যক্ষ ও সহকারী প্রক্টরের পদত্যাগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ছয় নেতার বিরুদ্ধে প্রশাসনের করা মামলায় মতামত না নিয়ে সাক্ষী করায় পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা ছাত্রী হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমান ও সহকারী প্রক্টর মো. মোশাররফ হোসাইন। এ ছাড়া শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ছাত্রী হলের হাউস টিউটরের পদ ছেড়েছেন অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আশিখা আক্তার।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে আশিখা ও দুপুরে অন্য দুই শিক্ষক রেজিস্ট্রারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এ নিয়ে আড়াই মাসের ব্যবধানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন শিক্ষক প্রশাসনিক বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

সদ্য শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষের পদ ছাড়া সাহেদুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, ‘২০২২ সালের ১৯ জুলাই থেকে শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করছি। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে সংকট তৈরি হয়েছে, যা দিন দিন আরও ঘনীভূত হচ্ছে। আমি বর্তমান প্রশাসনের অংশ হিসেবে সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে না পারায় ওই পদে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করছি।’

জানতে চাইলে সাহেদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২৯ এপ্রিল রাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ছয় নেতার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে একটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। ওই অভিযোগে সাক্ষী হিসেবে তাঁর নাম আছে। সাক্ষী করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে কিছুই জিজ্ঞাসা করেনি, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। মূলত ওই কারণে তিনি পদত্যাগ করেছেন।

সহকারী প্রক্টর মোশাররফ হোসাইনও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে করা মামলার তাঁকে ৫ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে। পদত্যাগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বেশ কয়েক দিন ধরে সৃষ্ট চলমান সংকট নিরসনে উপাচার্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় একজন শিক্ষক হিসেবে বর্তমান প্রশাসনের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বিব্রতবোধ ও অনীহা প্রকাশ করছি। একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকদের দাবিদাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে প্রশাসনিক পদ (সহকারী প্রক্টর) থেকে পদত্যাগ করছি।’

মোশাররফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেবে এটা মানতে পারছি না। বর্তমান উপাচার্য সংকট নিরসনে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তিনি কালক্ষেপণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংকট তৈরি করছেন। এ ছাড়া আমাকে মামলার সাক্ষী করা হয়। কিন্তু আমি কেন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যাব?’

মামলার বাদী সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ ছাদেক হোসেন মজুমদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় আমি মামলার বাদী হয়েছি। কারা মামলার আসামি ও সাক্ষী তা কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছে।’  

সহযোগী অধ্যাপক আশিখা আক্তার পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেন, সম্প্রতি উপাচার্য কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকদের স্বাধীনতাবিরোধী বলায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকদের ওপর সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে তিনি অনিরাপদ মনে করছেন। হামলায় সম্মানিত নারী সহকর্মীদের ওপর আক্রমণ নজিরবিহীন ও নিন্দনীয়। তাই তিনি পদত্যাগ করছেন।

প্রসঙ্গত, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কনিষ্ঠদের প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব প্রদান, শিক্ষকদের ওপর এক কর্মকর্তা ও অছাত্র বহিরাগত ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭ জন শিক্ষক বিভিন্ন পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এর মধ্যে পাঁচজন সহকারী প্রক্টর, বিভিন্ন হলের আটজন হাউস টিউটর, একজন সিন্ডিকেট সদস্য, দুজন প্রাধ্যক্ষ ও একজন ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক আছেন।