আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করা হয়। গতকাল বুধবার সুরক্ষা পরিষদের নগর ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় পুলিশ। পরে মেয়রের সমর্থকদের হামলায় পরিষদের পাঁচজন আহত হন। এর প্রতিবাদে আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সহসাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদাউস। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ছিল নগর ভবন ঘেরাও। এই কর্মসূচিতে আসা নিরীহ নগরবাসীর ওপর সিটি মেয়রের লেলিয়ে দেওয়া গুন্ডা বাহিনী ইট-পাথর দিয়ে আক্রমণ করে। পুলিশের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, মিছিল নিয়ে নগর ভবনের কাছাকাছি টাইগারপাস মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। তাই তাঁরা টাইগারপাস মোড়েই শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন। মেয়রকে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা জানালে পুলিশ তাঁদের মধ্য থেকে পরিষদের সভাপতি মো. নুরুল আবসার ছাড়া অন্য যেকোনো চারজনকে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এতে তাঁরা কিছুটা অবাক হলেও বাধ্য হয়ে চার প্রতিনিধি নগর ভবনে যান।

পরিষদের প্রতিনিধিদের দেখে মেয়রের অনুসারীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বলে অভিযোগ করেন জান্নাতুল ফেরদাউস। তিনি বলেন, তাঁদের দীর্ঘ আন্দোলন কর্মসূচিতে কোনো দিন ছাত্রলীগ বা যুবলীগ বাধা দেয়নি। কিন্তু এবার মেয়র তাঁদের অপদস্থ করার জন্য এসব ছেলেকে ব্যবহার করলেন। পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকলে মেয়রের অনুসারীরা প্রতিনিধিদের ওপর হামলা করতেন। মেয়রের নিজ নগরবাসীর প্রতি এমন আচরণ প্রত্যাশা করেননি। এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন তাঁরা।

নগর ভবনে থাকার পরও দেখা না করার প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, ‘সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় মেয়র মহোদয় এতটা অহংকারী যে তিনি নগর ভবনে অবস্থান করার পরও স্বয়ং উনার নিজ নাগরিকদের কাছ থেকে স্মারকলিপিটি গ্রহণে আনাগ্রহ প্রকাশ করেন। অগত্যা আমরা উনার প্রধান নির্বাহীর হাতে আমাদের স্মারকলিপিটি দিই। আমরা এখন বিশ্বাস করি, এই হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে মেয়র মহোদয়ের কাছে চট্টগ্রামবাসীর থেকেও ব্যক্তিস্বার্থ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গণস্বার্থবিরোধী এ ধরনের মানসিকতা লালন করে তিনি নগরপিতা হিসেবে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল ঘেরাও কর্মসূচি শেষে মেয়রের গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে এটা সুস্পষ্ট হয়েছে যে তিনি যতক্ষণ দায়িত্বে আছেন, ততক্ষণ তিনি নগরবাসীর গৃহকরের এই ন্যায্য দাবি মেনে নেবেন না। তাই ভবিষ্যৎ কর্মসূচি হিসেবে নগরের ৪১ ওয়ার্ডে সংগ্রাম কমিটি গঠন করবেন। আর উচ্চ আদালতে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে এই অন্যায্য গৃহকর আদায় বন্ধে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

নগর ভবনের আশপাশে মেয়রের সমর্থনে ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীদের অবস্থান নেওয়া এবং হামলার বিষয়ে রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, তিনি কাউকে এখানে এসে স্লোগান দিতে বলেননি। তবে একটি দলের নেতা এবং দলের সমর্থনে মেয়র হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই মেয়রকে চ্যালেঞ্জ করলে কেউ যদি নিজ উদ্যোগে জড়ো হয়, তাহলে তাঁর কিছু করার নেই।

মারধর ও হামলার বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি নুরুল আবসার বলেন, তাঁরা কোনো মামলা বা সাধারণ ডায়েরি করবেন না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন করে এর জবাব দেবেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সভাপতি নুরুল আবসার, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল মালেক, মুখপাত্র কাজী শহীদুল হক প্রমুখ।