চিকিৎসা নিয়েছেন ‘নির্যাতনের’ শিকার সেই মুস্তাকিম
চট্টগ্রামে ডায়ালাইসিসের খরচ বাড়ানোর প্রতিবাদ করায় গ্রেপ্তার মো. মুস্তাকিমের দুই পায়ে শারীরিক নির্যাতন শনাক্ত করেছেন চিকিৎসকেরা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন।
মুস্তাকিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কোমরের নিচ থেকে দুই পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত লাঠির আঘাতে লাল হয়ে আছে। গ্রেপ্তারের দিন (১০ জানুয়ারি) থানায় নিয়ে পুলিশের এক সদস্য লাঠি দিয়ে তাঁকে পেটান। রোববার জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর চিকিৎসার জন্য যান। চিকিৎসকেরা তাঁকে ওষুধ দেন। বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষাও করেছেন। তবে হাড়ে আঘাত হয়নি, যা কিছু হয়েছে মাংসে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান তিনি। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, শারীরিক নির্যাতনে তাঁর শরীরে লাল দাগ হয়েছে।
মুস্তাকিমকে আইনি সহায়তা দেওয়া হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব জিয়া হাবিব আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিকিৎসকের প্রতিবেদন ছাড়া মামলা করা যাবে না। মুস্তাকিমের শরীরের অবস্থা একটু ভালো হোক। হেফাজতে নির্যাতন নিবারণ আইনে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
গত রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান মুস্তাকিম। গত মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানার পুলিশ। মুস্তাকিম অভিযোগ করেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর ওই দিন রাত আটটার দিকে পাঁচলাইশ থানার হাজতখানা থেকে তাঁকে এক পুলিশ সদস্য পার্শ্ববর্তী একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে শুধু একজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। পোশাকে তাঁর নেমপ্লেট ছিল না। লাঠি দিয়ে তাঁকে ১৫–২০ মিনিট পেটান ওই পুলিশ সদস্য। তবে ওসি ছিলেন না। তাঁকে দেখলে চিনবেন। পেটানোর সময় বারবার ওই পুলিশ সদস্য তাঁকে বলেছেন, ‘ওসি স্যারের সঙ্গে আর বেয়াদবি করবি?’ তবে পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
ডায়ালাইসিস ফি কমানোর দাবিতে ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রোগীর স্বজনেরা। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিক্ষোভকারীদের। এ সময় মুস্তাকিমকে আটক করে পুলিশ। এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মুস্তাকিমের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৫০–৬০ জনকে আসামি করে মামলা করে। রোববার মুস্তাকিমের জামিনের আবেদন করা হয় আদালতে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবীসহ চট্টগ্রামের আইনজীবীরা জামিন শুনানিতে অংশ নেন। দুপুরে তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।