নির্বাচনের বছরে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে পুলিশের ত্রৈমাসিক অপরাধবিষয়ক সভায় বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান
ছবি: সংগৃহীত

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, এ বছর নির্বাচনের বছর, সে জন্য পুলিশকে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে পুলিশের ত্রৈমাসিক অপরাধবিষয়ক সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।

বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হয়ে অপরাধবিষয়ক এই সভা চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। দুই দিনব্যাপী অপরাধবিষয়ক এ সভা শেষ হবে বৃহস্পতিবার।

প্রথম দিনের সভার শেষ অংশে বুধবার সন্ধ্যায় যোগ দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আইনশৃঙ্খলাজনিত যেকোনো চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। ভবিষ্যতেও করবে। পুলিশ অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গি হামলার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। দেশের মানুষ এ জন্য পুলিশ নিয়ে গর্ব করে।

অপরাধবিষয়ক সভায় উপস্থিত একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রসচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, প্রশাসনের সঙ্গে এসপিদের (পুলিশ সুপার) যে দূরত্ব, তা কমাতে হবে। সবাইকে নির্বাচনের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
অপরাধবিষয়ক সভার প্রথম অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সারা দেশে কিশোর অপরাধীরা নানান ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে।
আইজিপি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘মাদকের সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা থাকলে তার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান “জিরো টলারেন্স”। মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত পুলিশ সদস্যকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।’

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, পুলিশের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই জনগণ নির্বিঘ্নে গত ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করতে পেরেছেন। এ জন্য পুলিশ সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে আইজিপি বলেন, জনগণ যাতে আগামী ঈদুল আজহাও নিরাপদে উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্‌যাপন করতে পারেন, সে জন্য এখন থেকেই কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।  তিনি এ ক্ষেত্রে ঘরমুখী মানুষের যাতায়াত এবং কোরবানির পশু পরিবহনে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সসহ ঈদুল আজহা নির্বিঘ্ন করার নির্দেশ দেন।

সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আতিকুল ইসলাম চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন, জঙ্গি, কিশোর গ্যাং ইত্যাদি–সংক্রান্ত মামলার তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন মামলার তথ্য পর্যালোচনা করে তিনি বলেন, চলতি জানুয়ারি থেকে মার্চ শেষে বিগত অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় ডাকাতি, খুন, ধর্ষণ, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হ্রাস পেয়েছে।

বুধবার রাতে সভার বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন প্রথম আলোকে বলেন, সভায় অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে পেশাগতভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। থানাকে সার্ভিস ডেলিভারি সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। থানাকে মানুষের আস্থার জায়গা হিসেবে গড়ে তোলারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অপরাধবিষয়ক সভায় দেখা যায়, ট্র্যাডিশনাল (প্রচলিত অপরাধ) কমে গেছে।

পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া, ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ বাড়ানোসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন সভায় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা।
২৮ ও ২৯ ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁদের পুলিশ সুপার, ২০ ও ২২ ব্যাচের পুলিশ সুপাররা তাঁদের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি), ২১ ব্যাচের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শকেরা তাঁদের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি), ১৫ ও ১৭ ব্যাচের ডিআইজিরা তাঁদের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক করার দাবি জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান পর্যায়ক্রমে পুলিশের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন।