পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালাতে মানতে হবে যে যে শর্ত

পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল ছিল নিষিদ্ধ। তাই পদ্মা পাড়ি দিতে শরীয়তপুরের মাঝিরকান্দিগামী ফেরিতে মোটরসাইকেলচালকদের ভিড়। গতকাল বিকেলে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে
ছবি: সাজিদ হোসেন

আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে। সকাল ছয়টা থেকে কিছু শর্ত সাপেক্ষে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার।

গতকাল মঙ্গলবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে যেসব শর্তের কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে, নির্ধারিত টোল দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হতে হবে। মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারিত টোল বুথ ও নির্ধারিত লেন ব্যবহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নির্ধারিত লেন পরিবর্তন করা যাবে না।

সেতুতে ওভারটেকও করা যাবে না। চালক ও আরোহীকে হেলমেটসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সেতুর ওপর দাঁড়ানো বা ছবি তোলা যাবে না। চালকসহ সর্বোচ্চ দুজন মোটরসাইকেলে চড়তে পারবেন।

মন্ত্রণালয় বলছে, এসব শর্ত প্রতিপালন করে পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। শৃঙ্খলা না মানলে মোটরসাইকেল চলাচলের এ সুযোগ বাতিল করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেওয়ার নির্দেশনা দেন। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গণভবনে সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল চালুর বিষয়টি অবহিত করেন।

একনেক বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার একজন সদস্য অবহিত করেন যে ঈদ সামনে রেখে মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য শিমুলিয়া–কাঁঠালবাড়ী পথে ফেরি চালু করা হয়েছে। তবে মোটরসাইকেলের সংখ্যা এত বেশি যে ফেরি দিয়ে পারাপারে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঈদের আগের দু–তিন দিন চাপ আরও বাড়বে। তাই পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলতে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।

একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোটরসাইকেল চালাতে অসুবিধা কোথায়? চলতে দেওয়া যেতে পারে। তখন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, সেতু চালুর পর মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে প্রথম দিনই দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সেতু দেখতে যাওয়া মানুষের এত ভিড় হবে না। প্রয়োজনেই মানুষ সেতু পারাপার হবেন।

সেতু বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল চালু হওয়ার পর কত দিন মোটরসাইকেল চলবে, এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোনো অঘটন বা বড় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল অব্যাহত থাকবে। সেতুর দুই পাশে অস্থায়ী বেড়া দিয়ে দুটি লেন তৈরি করা হবে। এর ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করবে। সেতুর মুখে মোটরসাইকেলের টোল আদায়ের জন্য আলাদা বুথ খোলা হচ্ছে।

গত বছরের ২৬ জুন পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। প্রথম দিনেই সেখানে ঢল নামে মোটরসাইকেলের। সেই রাতে দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হলে ২৭ জুন ভোর থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করে সেতু বিভাগ।

এদিকে ঈদে মোটরসাইকেল পারাপারের জন্য গতকাল থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া–কাঁঠালবাড়ী রুটে দুটি ফেরি চালু করেছে। প্রথম দিন ফেরি চারবার যাওয়া–আসা করার কথা ছিল; কিন্তু মোটরসাইকেলের চাপের কারণে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচবার চলাচল করেছে ফেরি।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানিয়েছে, সারা দিনে সাড়ে পাঁচ শ মোটরসাইকেল পারাপার করেছে। সন্ধ্যার দিকে আরও শতাধিক মোটরসাইকেল পারাপারের অপেক্ষায় ছিল; কিন্তু অন্ধকার হয়ে যাওয়ার কারণে ফেরি চালানো হয়নি। এ সময় অপেক্ষমাণ মোটরসাইকেল আরোহীরা হইচই করেন।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র আরও জানায়, একবার ফেরি চলাচল করলে ৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়; কিন্তু মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন নেই। ফলে খরচ উঠে আসে না। ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপের কথা বিবেচনা করে ফেরি চালু করা হয়েছে। পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হলে হয়তো ফেরি বন্ধ থাকবে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এস এম ফেরদৌস আলম প্রথম আলোকে বলেন, আজ বুধবার ফেরি চলাচল অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হলে হয়তো ফেরি লাগবে না। তারপরও প্রয়োজনে যাতে ব্যবহার করা যায়, সে জন্য ঘাটে ফেরি রাখা হবে।