তেলের মতো কাগজের বাজারেও ‘সিন্ডিকেট হচ্ছে’, ব্যবস্থার দাবি
কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি বলেছে, কিছুদিন আগে সিন্ডিকেট করে যেভাবে তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছিল, সেভাবে এখন কাগজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তবে সরকার উদ্যোগী হয়ে তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিলেও কাগজের বিষয়ে কিছু করছে না।
এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে সামনে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে সতর্ক করেছেন প্রকাশকেরা। তাঁরা বলেছেন, কাগজের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় আগামী বছরের বইমেলায় কম বই ছাপা হবে। ফলে গত বছরের তুলনায় বইয়ের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হবে। এতে প্রকাশনাশিল্প ও পাঠকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়তে পারে। তাই কাগজের দাম নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার এবং সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতারা। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেশে অস্বাভাবিক হারে কাগজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। মিলমালিকেরা সিন্ডিকেট করে কাগজের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় যদি শুল্ক প্রত্যাহার করে কাগজ আমদানি সবার জন্য উন্মুক্ত ও অবাধ করা হয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। যদি এখনই সরকার এ ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে অচিরেই দেশে কাগজ নিয়ে ভয়াবহ সংকট তৈরি হতে পারে।’
সমিতির সহসভাপতি শ্যামল পাল বলেন, ‘বর্তমানে এক টন নিউজপ্রিন্ট কাগজ প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এর দাম ৬০ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আগামী বইমেলার আগেই এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিনা মূল্যে শিক্ষার্থীদের এনসিটিবির ৩৫ কোটি বই বিতরণ সম্ভব হলেও কাগজের অভাবে সব বই ছাপতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে।’
সংগঠনের আরেক সহসভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘কাগজের কাঁচামাল মণ্ডের দাম যে হারে বাড়ছে, কাগজের দাম তার চেয়ে দুই থেকে আড়াই গুণ হারে বাড়ছে। আমরা দেখেছি কিছুদিন আগেও সিন্ডিকেট তৈরি করে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তা নিয়ন্ত্রণে আসে। অথচ কাগজের দাম বাড়ানো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সরকারকে এ ব্যাপারে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২১ সালে ৮০ গ্রাম অফসেট ডাবল ডিমাই (ডিডি) কাগজের প্রতি রিমের দাম ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা, ২০২২ সালে সেই কাগজের দাম ৩ হাজার টাকারও বেশি। একই কাগজ ১০০ গ্রামের দাম ২০২১ সালে ছিল ১ হাজার ৭৫০ টাকা, যা এখন ৪ হাজার ২০০ টাকা। গত বইমেলায় যে বই ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, ২০২৩ সালের মেলায় সেই বইয়ের দাম হবে ৩০০ টাকা। তবে পাঠকের ওপর বাড়তি চাপ কমাতে ভর্তুকি দিয়ে বইয়ের দাম কমিয়ে রাখার পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।
সমিতির উপদেষ্টা ওসমান গনি বলেন, সৃজনশীল বই ছাপতে যে কাগজ ব্যবহার করা হয়, অন্তত সেই কাগজের ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেওয়া হোক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি মির্জা আলী আশরাফ, সাবেক সভাপতি আলমগীর শিকদার লোটন, সিনিয়র সদস্য মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।