রাজধানীর বড় সাত কলেজ ঘিরে সৃষ্ট সংকট কাটেনি। এই কলেজগুলো নিয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর বিরোধিতা করে শিক্ষকেরা আজ বুধবার ঢাকার সাত কলেজসহ দেশের সব সরকারি কলেজে মানববন্ধন করেছেন।
একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের অনেক শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ইডেন মহিলা কলেজকে কেবল নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ওই কলেজের ছাত্রীরা।
আগে থেকেই ঢাকার এই সাতটি সরকারি কলেজে সংকট বিরাজ করছে। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই কলেজগুলোকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারি এই কলেজগুলো হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ।
এর মধ্যে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়; বাকি পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর—তিন স্তরেই পাঠদান হয়। এগুলোতে শিক্ষার্থী দেড় লাখের মতো। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন ১১ হাজারের মতো। সাত কলেজে মোট শিক্ষক হাজারের বেশি। আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে তাঁদের ক্লাস শুরু হচ্ছে না।
গত জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত হওয়ার আগেই অধিভুক্তি বাতিল হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় কার্যক্রম চলছে।
সম্প্রতি সাত কলেজকে একীভূত করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সরকারি পরিকল্পনা আলোচনায় আসে। কিন্তু এর কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন চলছে।
শিক্ষকদের কর্মসূচি
ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজ একীভূত করে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ‘স্কুলিং মডেল’ বাতিল এবং স্বতন্ত্র কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে একাডেমিক-প্রশাসনিক পদে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে অধ্যাদেশ জারির দাবিতে পাঁচ দিনের কর্মসূচি (গত মঙ্গলবার শুরু) অংশ হিসেবে আজ দ্বিতীয় দিন কলেজগুলোর সামনে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষকেরা।
সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি হলেও সারা দেশের সরকারি কলেজগুলোতেই মানববন্ধন করেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
দুপুরে ঢাকা কলেজে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকেরা প্রথমে কলেজ আঙিনায় মানববন্ধন করেন। পরে তাঁরা কলেজের মূল ফটকের সামনে মানববন্ধন করেন। কলেজ আঙিনা থেকে শিক্ষকেরা যখন মূল ফটকের সামনে আসছিলেন, তখন শিক্ষার্থীদের একাংশ ভুয়া বলে স্লোগান দেয়।
ঢাকা কলেজে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষক বললেন ‘স্কুলিং মডেল’ বাদ দিয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ করা হয়, তাহলে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। তাঁদের কথা স্পষ্ট, তাঁরা সাত কলেজের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান। এ ছাড়া বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের অধিকারের জায়গাটি যেন অক্ষুণ্ন থাকে।
পাঁচ দিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৬ ডিসেম্বর শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এরপরও দাবি উপেক্ষা করে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে দেশের সব সরকারি কলেজ ও দপ্তরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক কর্মবিরতি (টোটাল শাটডাউন) শুরু করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।
অধ্যাদেশ জারির দাবিতে বিক্ষোভ
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। তাঁরা চান এর আলোকে দ্রুত যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে সাত কলেজের অনেক শিক্ষার্থী গতকাল প্রথমে ঢাকা কলেজের শহীদ মিনারের সামনে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা মূলত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। সেখানে তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভের পর মিছিল নিয়ে মূল সড়কে আসেন। মিছিলটি সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে যায়। কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ হয়। এতে যানজট দেখা দেয়। পরে মিছিলটি নিউমার্কেটের দিকে চলে যায়।
বিক্ষোভ চলাকালে শিক্ষার্থীরা ‘রাষ্ট্র তোমার সময় শেষ, জারি কর অধ্যাদেশ’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া একজন ছাত্র প্রথম আলোকে বলেন, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মডেল নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে। তাঁরা চান, এর আলোকে দ্রুত যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ জারি করা হয়। কারণ, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এটি হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
বিকেলেও শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনে অবস্থান করেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুত অধ্যাদেশ জারি না করলে আগামী রোববার শিক্ষা ভবনের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন তাঁরা।
ইডেন কলেজের ছাত্রীদের বিক্ষোভ
ইডেন মহিলা কলেজকে কেবল নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখা এবং কোনো বিভাগ বিলুপ্তি না করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ওই কলেজের ছাত্রীরা। আজ বেলা ১১টার দিকে কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা। ফলে আজিমপুর থেকে নীলক্ষেত অভিমুখী যান চলাচল বন্ধ থাকে।
দুপুরের পর ইডেন কলেজের ছাত্রীদের একাংশ ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় বলে ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন। তবে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ তখন কার্যালয়ে ছিলেন না।
অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই প্রস্তাবিত মডেলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছেন।