চট্টগ্রামে চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সংশয়

লবণ দিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন আড়তশ্রমিকেরা। আজ সকালে চট্টগ্রাম নগরের আতুরার ডিপো এলাকায়
ছবি: জুয়েল শীল

চট্টগ্রাম নগরে চামড়ার অন্যতম বড় আড়তদার মোহাম্মদ আলী। নগরের মুরাদপুর ও আতুরার ডিপো এলাকায় তাঁর চারটি গুদাম রয়েছে। এবারের পবিত্র ঈদুল আজহায় প্রায় ৫০ হাজার চামড়া সংগ্রহের পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৩৫ হাজার চামড়া কেনা হয়েছে তাঁর। এরপর চামড়া পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, চামড়া সংগ্রহ করতে পারলে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হতেন বলে জানান আড়তদার মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, সামর্থ্য না থাকায় অনেকে কোরবানি দেননি, আবার দিলেও কয়েকজন মিলে ভাগাভাগি করে দিয়েছেন। এ জন্য কোরবানির পশুর পরিমাণ কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে চামড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রেও।

শুধু মোহাম্মদ আলী নন, চট্টগ্রাম নগরের চামড়া আড়তদারদের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রামে এবার চার লাখ কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন আড়তদারেরা। কিন্তু আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত আড়তগুলোতে আড়াই লাখ চামড়া এসেছে বলে জানান আড়তদার সমিতির নেতারা।

নগরের গরু-ছাগলের চামড়ার একমাত্র আড়ত আতুরার ডিপো এলাকায়। মৌসুমি সংগ্রহকারী, এতিমখানা ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ চামড়া সংগ্রহ করে থাকে। এরপর তা আতুরার ডিপোর আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। আর আড়তদারেরা তা সংরক্ষণ করে পরে ঢাকার ট্যানারিমালিকদের কাছে বিক্রি করেন।

এবার অন্তত ২৫ জন আড়তদার মৌসুমি সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে চামড়া কিনছেন। একসময় আড়তদার সমিতির অধীনে ১১২ জন সদস্য ছিলেন। তবে অধিকাংশ সদস্য এই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।

শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের আতুরার ডিপো এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা। আড়তের ভেতর এবং বাইরের খোলা জায়গায় লবণ দেওয়া চামড়াগুলো একটির ওপর একটি রাখা হয়েছে। বৃষ্টিতে যাতে চামড়া নষ্ট না হয়, সে জন্য ত্রিপল টানানো হয়। সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে চামড়া নিয়ে আসছিলেন মৌসুমি সংগ্রহকারীরা। দরদাম করে তা কিনে নিচ্ছিলেন আড়তদারেরা।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এবার চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এখন পর্যন্ত আড়াই লাখ চামড়া তাঁদের হাতে এসেছে। আর কিছু চামড়া উপজেলা পর্যায়ে রাখা হয়েছে। আবার আজকেও (শুক্রবার) কিছু কোরবানি হবে। তবে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম চামড়া সংগ্রহ হতে পারে।

কম সংগ্রহ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, এবার গরুর দাম ছিল বেশি। অনেকেই একাধিক গরু কোরবানি দিতেন। এখন দু-তিনজন মিলে একটি দিয়েছেন। এ জন্য লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। তবে একটি স্বস্তির বিষয় হচ্ছে, কয়েক বছর আগে চামড়া নষ্ট হলেও এখন তা হচ্ছে না।

এক মাঠে ৩০ হাজার চামড়া

চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার মাঠে রাখা হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার চামড়া। এসব চামড়া সংগ্রহ করেছে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। করোনা মহামারির সময় মানবিক কাজ করে আলোচনায় এসেছিল এই ট্রাস্ট ও কমিটি।

চামড়া সংগ্রহের কাজ তদারকি করছিলেন গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। তিনি বলেন, চামড়া ব্যবসা সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে যাওয়ায় মৌসুমি সংগ্রহকারী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কয়েক বছর আগে মৌসুমি সংগ্রহকারীরা দাম না পেয়ে কোরবানির চামড়া রাস্তাঘাটে ফেলে দিয়েছিলেন। এভাবে মূল্যবান সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুই বছর আগে চামড়া সংগ্রহে যুক্ত হয় ট্রাস্ট ও কমিটি।

এবার দেড় লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও শুক্রবার পর্যন্ত এক লাখ চামড়া সংগ্রহ করেছেন বলে জানান মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার। তিনি বলেন, এবার কোরবানি কম হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া পাওয়া যায়নি। কোরবানিদাতারা বিনা মূল্যে তাঁদের কাছে চামড়া দিয়ে দেন। এই চামড়া চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন। এর থেকে অর্জিত অর্থ আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের আওতায় থাকা মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষার্থীদের ভরণপোষণে খরচ করা হয়। আর চামড়া সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এই কাজ করে থাকেন।