‘ডায়াসপোরাদের’ উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করতে চায় সরকার

জাতীয় ডায়াসপোরা নীতির খসড়া নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় বক্তব্য দেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক কোটির মতো প্রবাসী বাংলাদেশি আছেন। তাঁদের মধ্যে অনাবাসী হিসেবে আছেন ২৪ লাখ। তাঁদের উন্নয়ন সহায়ক শক্তি ও সক্ষমতাকে বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে চায় সরকার।

জাতীয় ডায়াসপোরা নীতি, ২০২৩-এর খসড়ায় এ কথা বলা হয়েছে। অনাবাসীদের সঙ্গে প্রবাসী কর্মীদেরও এ নীতিতে যুক্ত করা হতে পারে।

জাতীয় ডায়াসপোরা নীতির খসড়া নিয়ে আজ বুধবার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত কর্মশালায় এসব কথা জানানো হয়। খসড়া বলছে, যেসব বাংলাদেশি ব্যক্তি অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন বা নাগরিকত্বের আবেদন প্রক্রিয়াধীন বা অন্য কোনো দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসেবে অন্য দেশে জন্ম নিয়েছেন বা বেড়ে উঠেছেন; তাঁরাই বাংলাদেশি ডায়াসপোরা। তবে এতে প্রবাসী কর্মীদের যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন বক্তারা।

জাতীয় ডায়াসপোরা নিয়ে কর্মশালায় বলা হয়েছে, প্রবাসীরা নানাভাবে দেশের জাতীয় স্বার্থে ভূমিকা রাখছেন। তাঁদের আরও কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। তাই তাঁদের তথ্য, উপাত্ত তৈরি করা হবে। যোগাযোগ বাড়ানো হবে। দেশে বিনিয়োগসহ নানা প্রয়োজনে তাঁদের সহায়তা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিদেশে তাঁদের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত কর্মশালায় মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, এ খসড়ায় অনেক কিছুই পরিবর্তন হবে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মতামত নেওয়া হবে। দেশের ডায়াসপোরা যাঁরা আছেন, তাঁরা টেকসই উন্নয়নে শুধু বিনিয়োগ করে নয়; তাঁদের দক্ষতা ও জ্ঞানের মাধ্যমে সহায়তা করতে পারেন। এ নীতি হবে তাঁদের কাজে লাগানোর হাতিয়ার।

সভা পরিচালনা করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন। তিনি বলেন, প্রবাসী আয়ে ডায়াসপোরাদের অবদান অনেক। এর বাইরে বিনিয়োগকারী, ক্রেতা, পর্যটক, অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক ও দেশের মুখপাত্র হিসেবে বিদেশে তাঁদের দেখা হচ্ছে। তাঁদের আরও কার্যকরভাবে জড়িত করতেই নীতি তৈরি করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশে মিশনপ্রধান আবদুস সাত্তার এসয়েভ বলেন, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার মতো অনন্য সক্ষমতা আছে ডায়াসপোরাদের। উন্নয়নের জন্য ডায়াসপোরাদের সম্পৃক্ত করা, সক্ষম করা ও ক্ষমতায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়াসপোরা নীতির খসড়া উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারাকাত। তিনি বলেন, খুব বেশি দেশ ডায়াসপোরা নীতি করতে পারেনি। এমনকি চীন ও ভারতের মতো বড় দেশগুলোর এ নীতি নেই। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকছে। ডায়াসপোরা নীতির মধ্যে প্রবাসী কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে আরও ভাবা যেতে পারে।

বৈধ উপায়ে প্রবাসী আয় পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করতে জাতীয় ডায়াসপোরা নীতি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার। নীতির খসড়ায় বলা হয়েছে, তাদের পুঁজির টেকসই সংগঠিতকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের ঘাটতি আছে। এটি মোকাবিলায় ডায়াসপোরাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশে আসা-যাওয়ার প্রবেশপথে তাঁদের সহজ ও দ্রুত অভিগমনে সহায়তা করা হবে। বাজার অনুসন্ধান ও মূলধনি বিনিয়োগে উৎসাহিত করা, উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, দক্ষতা বিনিময়, কূটনীতি ও কূটনৈতিক সক্ষমতা জোরদার করায় কাজ করবে ডায়াসপোরা নীতি।

কর্মশালায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন, ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। ডায়াসপোরা নীতি ও কর্মশালা আয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করেছে আইওএম।