ছাগলের জাঁকজমকপূর্ণ বিদায় অনুষ্ঠান
ঢোল বাজছে। বাজছে কাঁসা। মুরালি বাঁশির সুরে যেন বিদায়ের রাগিণী। চলছে বক্তব্য। সামনে রাজকীয় সাজে তিনটি ছাগল। মাথায় পরানো হয়েছে বিশেষ তাজ। গলায় ফুলের মালা। নকশার কারুকাজ করা লাল সালু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় তিনটি ছাগলের শরীর। এরপর একপর্যায়ে একটি পিকআপে তুলে দেওয়া হলো প্রাণী তিনটিকে। হাত নেড়ে বিদায় জানান বিক্রেতা হেমন্ত দে।
ছাগলের রাজকীয় বিদায় অনুষ্ঠানটি হয়ে গেল পটিয়ার কমলমুন্সির হাট–সংলগ্ন চক্রশালা গ্রামে হেমন্ত দের খামারে। গত মঙ্গলবার তিনটি বড় পাঁঠাকে একটি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ক্রেতাদের হাতে তুলে দেন খামারি হেমন্ত দে। আজ বৃহস্পতিবার খামারের সবশেষ ছাগলটি ক্রেতাকে হস্তান্তরের সময়ও হেমন্ত ছোটখাটো একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মনসাপূজা সামনে রেখে এই গ্রামের খামারি হেমন্ত দে বড় বড় পাঁঠা প্রতিপালন করেন প্রতিবছর। এবার তিনি বড় বড় ১৮টি পাঁঠা পালন করেন। সব কটি বিক্রি হয়ে গেছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ছাগলটি কেনেন রাউজানের নোয়াপাড়ার ব্যবসায়ী রাজীব দে ওরফে রাজু। ছাগলটির দাম ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। রাজীবের ভাই মিন্টু দে কিনেছেন ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ছাগল। তাঁদের ভাগনে অসীম বিশ্বাস কেনেন এক লাখ টাকার একটি ছাগল। সব কটি হেমন্ত দের খামার থেকে কিনেছেন তাঁরা। বিক্রেতার এমন জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান এবং ছাগল কিনে খুশি হয়ে রাজীব দে খামারি হেমন্তকে একটি সোনার হার উপহার দেন।
হেমন্ত প্রথম আলোকে বলেন, মঙ্গলবার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছাগল তিনটি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। অনুষ্ঠানটি দেখতে অন্তত দুই হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। ছাগলগুলোকে খুব সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন। ভাড়া করে ঢোল–বাঁশি আনা হয় বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য। ক্রেতারা খুশি হয়ে তাঁকে সোনার গয়না উপহার দেন।
জানা গেছে, ছাগল তিনটি সপ্তাহখানেক আগে রাজীব দে ও তাঁর ভাই খামারে গিয়ে পছন্দ করেন। পরে ছাগল তিনটি হেমন্তর বাড়িতে লালন–পালনের জন্য রেখে আসা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে এগুলো রাজীব, মিন্টু ও অসীম গিয়ে তাঁদের বাড়িতে নিয়ে আসেন।
রাজীব দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাগলগুলো তুলে দেওয়ার সময় হেমন্ত এত আয়োজন করবেন, আমরা ভাবিনি। আমরা ছাগল আনতে যাওয়ার সময় একটা সোনার হার নিয়ে গিয়েছিলাম তাঁর জন্য।’
ছাগলগুলোকে পিকআপে তুলে দেওয়ার পর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে হাত নেড়ে বিদায় জানান হেমন্ত। হাত জোড় করে সম্মান জানান ক্রেতাদের উদ্দেশে।
হেমন্ত জানান, ছাগল তিনটি মাগুরা থেকে আট মাস আগে কিনেছিলেন। পরে সেগুলোকে প্রতিপালন করে বড় করেন। কোনো ওষুধ ছাড়া প্রাকৃতিক নিয়মে বড় করা হয়। খামারের ১৮টি ছাগলের সব কটি কাল বিক্রি করা হয়। আর আজ শেষ ছাগলটি ক্রেতার হাতে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তুলে দিয়েছেন। এই ছাগল কিনেছেন পটিয়ার বড় উঠান এলাকার এক ব্যবসায়ী।