দুর্নীতি সমগ্র সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে: রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতছবি: প্রথম আলো

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির একটি মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, দুর্নীতি বর্তমানে রোগে পরিণত হয়েছে এবং সমগ্র সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে।

মামলায় আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম।

আরও পড়ুন

মামলায় ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের ২ বছর, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫ বছর, তাঁর বোন শেখ রেহানার ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। মামলার অপর ১৪ আসামিকে ৫ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, সমাজের দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে।

দুর্নীতি রোগে পরিণত হয়েছে

রায় ঘোষণার শুরুতেই বিচারক বলেন, ‘আমি বাংলায় রায় লিখেছি, আমি বাঙালি।’

রায় পড়ার সময় পবিত্র কোরআনের একটি আয়াতের অনুবাদ পড়ে শোনান বিচারক। তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা আল মায়েদার ২ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করেছেন, ‘পাপ ও জুলুমের ক্ষেত্রে একে অপরকে সহায়তা কোরো না।’

বিচারক রায়ের কিছু অংশ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি বর্তমানে রোগে পরিণত হয়েছে এবং সমগ্র সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে। সে কারণে আমাদের সবাইকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’

বিচারক বলেন, ক্রিমিনাল ল অ্যামেন্ডমেন্ট ১৯৫৮-এর বিধান অনুযায়ী, কেউ বাংলাদেশের নাগরিক হলে তিনি পৃথিবীর যেখানেই অবস্থান করুন না কেন, তাঁর বিচার করতে আইনত কোনো বাধা নেই।

রায় ঘোষণার সময় বিচারক আরও বলেন, মৃত্যুদণ্ডযোগ্য ধারা না থাকলে মামলায় পলাতক আসামির ক্ষেত্রে ‘ডিফেন্স ল ইয়ার’ নিয়োগ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মৃত্যুদণ্ডের ধারা থাকা মামলার ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগের (রাষ্ট্রনিযুক্ত) বিধান আছে। কিন্তু এ মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের কোনো ধারা না থাকায় তাদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগের কোনো সুযোগ নেই। এটাও বলার সুযোগ নেই যে, তাদের আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

ক্ষমতা অপব্যবহার

বিচারক রায় পড়ার সময় এ মামলার বিষয়বস্তু উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ঢাকা শহর বা রাজউক এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকার পর তা গোপন করে পূর্বাচলের নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট নিয়েছেন আসামি রেহানা সিদ্দিক। প্লটটি শেখ রেহানার নামে বরাদ্দ দিতে টিউলিপ তাঁর খালা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত ও প্ররোচিত করেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা অপব্যবহার করে তাঁর অধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাবিত করে রেহানা সিদ্দিকের নাম প্লট বরাদ্দের নির্দেশ দেন।

লিখিত রায়ে বলা হয়, আসামি টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর মা রেহানা সিদ্দিককে প্লট পাইয়ে দেওয়ার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর খালা শেখ হাসিনার একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে (তৎকালীন) মোবাইল ও ইন্টারনেটের বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে এবং বাংলাদেশে এসে সরাসরি যোগাযোগ করে প্ররোচিত করেছেন। সাক্ষীদের জবানবন্দির মাধ্যমে তা প্রমাণিত হয়েছে।

রায়ে বলা হয়, অন্য আসামিরা সরকারি কর্মকর্তা। তাঁরা প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে ফাইল প্রস্তুত, ফাইলে স্বাক্ষর এবং দলিল সম্পাদনসহ শেখ রেহানাকে প্লট বুঝিয়ে দিয়ে দুর্নীতি করেছেন।