চট্টগ্রামের পুরাকীর্তি কি এভাবে হারিয়ে যাবে

চট্টগ্রামে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা আদি কাঠামো হারিয়ে ফেলছে। সময়ের প্রয়োজনে ভবন সম্প্রসারণ করতে গিয়ে অনেক স্থাপনা আড়ালে চলে গেছে। সরকারের সংরক্ষণের অভাবে ঝুঁকিতে আছে এসব পুরাকীর্তি।

শায়েস্তা খাঁর আমলে নির্মিত চট্টগ্রাম নগরের ঐতিহ্যবাহী চন্দনপুরা মসজিদ
ছবি: প্রথম আলো

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন এক সাহিত্যিক বন্ধু। তাঁকে নিয়ে একদিন গিয়েছিলাম চেরাগী পাহাড়ে। জামালখান ও মোমিন রোডের মোড়ে টিলার ওপর পুরোনো স্থাপনার ‘আধুনিকায়ন’ দেখে তিনি কিছুটা হতাশ হয়েছিলেন।

বিপ্লবী সূর্য সেন, প্রীতিলতাদের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের অব্যবস্থা দেখে তাঁর মুখ মলিন। প্রাচীন নগর চট্টগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের অনেক অনুষঙ্গ। শত শত বছরের স্মৃতি ধরে রেখেছে এই ভূখণ্ড। মোগল, সুলতানি, আরাকানি, ব্রিটিশ আমলসহ নানা সময়ের, নানা যুগের স্মৃতিচিহ্ন আমরা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারিনি।

চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার অলি খাঁ মসজিদের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে আমাদের হতাশ হতে হয়। হতাশ হই সার্কিট হাউসের পাশে গেলেও। ব্রিটিশ আমলের এই নান্দনিক স্থাপনার সৌন্দর্য হারিয়ে গেছে। কোনো প্রাচীন স্থাপনার সান্নিধ্য আমাদের মনে পুরোনো সমাজের সাংস্কৃতিক স্মৃতিকে জাগিয়ে তোলে। যেখানে এসব স্থাপনা হয়েছিল, সে অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর চাওয়া–পাওয়া, চলন–বলন, রুচি, আর্থসামাজিক অবস্থা ইত্যাদি প্রতিফলিত হয়। এসব স্থাপনা আমাদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। মানুষের মনে একধরনের অনুপ্রেরণা জোগায়। নান্দনিক মূল্যবোধকে সমুন্নত করে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের ডেপুটি কিউরেটর প্রয়াত গবেষক শামসুল হোসেন চট্টগ্রামের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে ইটারনাল চিটাগংমুসলিম মন্যুমেন্ট অব চিটাগং নামে দুটি বই লিখেছিলেন। বই দুটিতে তিনি মোগল আমল, সুলতানি আমলসহ চট্টগ্রামে প্রাচীন যুগের ৩৬টি স্থাপনার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সরকার যদি জরিপ চালায়, চট্টগ্রামে এ রকম আরও স্থাপনা পাওয়া যাবে।’

চট্টগ্রামের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর গত বছর কর্ণফুলী, পটিয়া ও আনোয়ারা উপজেলায় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ চালিয়েছে। অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক এ কে এম সাইফুর রহমান বলেন, ‘তিনটি উপজেলায় প্রায় ৬০টি প্রাচীন স্থাপনা শনাক্ত হয়েছে। এগুলো ১০০ থেকে ১ হাজার বছরের পুরোনো। আমরা যাচাই–বাছাই করে বেশ কটি সংরক্ষিত স্থাপনার তালিকাভুক্ত করতে প্রস্তাব পাঠাব।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে সাইফুর রহমান বলেন, ‘কিছু কিছু পুরোনো স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে কিংবা ব্যবহারের উপযোগী করতে স্থানীয় লোকজন সংস্কার করেন। কিছু কিছু একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ছে। সেগুলো সংরক্ষণের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমরা প্রস্তাব দিই। যেভাবেই হোক, আমাদের ঐতিহ্যগুলো রক্ষা করা জরুরি।’

প্রয়াত গবেষক শামসুল হোসেনের বইয়ে সুলতানি আমলে স্থাপিত হাটহাজারীর ফকিরের মসজিদ, সীতাকুণ্ডের হাম্মাদিয়া মসজিদ এবং চট্টগ্রাম নগরের বদর আউলিয়ার মাজারের কথাও উল্লেখ আছে। রয়েছে মোগল আমলে নির্মিত আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ, মালখার মসজিদ, ওয়ালী বেগ খান মসজিদ, হামজারবাগ মসজিদ, হামজারবাগ গেট ও সমাধি, মোল্লা মিসকিন মসজিদ ও সমাধি, কদম মোবারক মসজিদ, বায়েজিদ বোস্তামী মসজিদ, চট্টেশ্বরী মন্দির, সীতাকুণ্ডের শাহজানির মাজার ইত্যাদি।

পুরাকীর্তি আইন ১৯৬৮ (১৯৭৬ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, মানবসভ্যতার যেকোনো প্রাচীন (ন্যূনতম ১০০ বছরের পুরোনো) পণ্য, স্থাপত্য এবং যুদ্ধ, রাজনীতি ও সংস্কৃতির বিবরণকে পুরাকীর্তি বলা যেতে পারে। কোনো ঐতিহাসিক স্থানের ক্ষতি বা পরিবর্তন এই আইনে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘এ আইন অনুযায়ী প্রাচীন স্থাপনা ধ্বংস কিংবা এগুলোর পরিবর্তন আইনবিরোধী কাজ। কিন্তু এই আইনের প্রতি আমরা সব সময় উদাসীন। আমাদের উদাসীনতার কারণেই চট্টগ্রামে সুলতানি, মোগল ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে নির্মিত বহু ঐতিহাসিক স্থাপনা আজ ধ্বংসের মুখে।’

চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের উপপরিচালক আতাউর রহমান বলেন, সরকার ইতিমধ্যে বেশ কিছু স্থাপনা সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকায় এনেছে। তবে এসব ঐতিহাসিক স্থাপনা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। এগুলো ছাড়া চট্টগ্রামে শতাধিক অরক্ষিত পুরাকীর্তিও ছড়িয়ে আছে। সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এসব ঐতিহ্য একসময় হারিয়ে যাবে।

সংরক্ষিত তালিকায় হাতে গোনা কয়েকটি স্থাপনা

প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পর্কে যাঁরা খোঁজখবর রাখেন এবং এসব নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের অভিযোগ, চট্টগ্রামের অনেক প্রাচীন স্থাপনা সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকায় নেই। রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেই। ফলে অনেক স্থাপনা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ঘোষিত সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকায় আছে বাঁশখালীর হামিদ বকশি মসজিদ, মিরসরাইয়ের শমসের গাজির কেল্লা, হাটহাজারীর উপজেলার আলাওল মসজিদ, ফতেপুর পাথরের শিলালিপি, বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখিল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রথম মূল ভবন, কধুরখীল পার্বতী চরণ দিঘি, চকবাজারের ওয়ালী বেগ খান মসজিদ (অলি খাঁ মসজিদ) এবং আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদ।

আন্দরকিল্লা মসজিদের সৌন্দর্যহানি

আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদের স্থাপত্য ও গঠন মোগল আমলের। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৩০ ফুট ওপরে ছোট্ট একটি পাহাড়ের ওপর এই মসজিদের অবস্থান।

নকশা অনুযায়ী, মূল মসজিদটি ১৮ গজ (১৬ মিটার) লম্বা, ৭ দশমিক ৫ গজ (৬ দশমিক ৯ মিটার) চওড়া এবং প্রতিটি দেয়াল প্রায় ২ দশমিক ৫ গজ (২ দশমিক ২ মিটার) পুরু। পশ্চিমের দেয়ালটি পোড়ামাটির এবং বাকি তিনটি দেয়াল পাথরের তৈরি। মসজিদের ছাদের মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ এবং দুটি ছোট গম্বুজ রয়েছে।

১৬৬৬ সালে নির্মিত মসজিদের অষ্টভুজাকৃতির চারটি বুরুজের মধ্যে পেছনের দুটি বুরুজ টিকে আছে। মসজিদটির পূর্ব দিকে তিনটি, উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে মোট পাঁচটি দরজা রয়েছে। মসজিদের ভেতর তিনটি মেহরাব রয়েছে। তবে মাঝখানের সবচেয়ে বড় মেহরাবটিই এখন ব্যবহৃত হয়।

চট্টগ্রামে মুসলিম বিজয়ের স্মারক এই ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার আগের সৌন্দর্য আর নেই। কয়েক শ বছর ধরে মূল কাঠামোর চারদিকে এটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মসজিদের চৌহদ্দির তিন দিকে বিশাল বিপণিকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এতে মসজিদের সৌন্দর্যহানি হয়েছে। সময়ের বিবর্তনে মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকায় মসজিদের বিস্তৃতি ঘটেছে, ঢাকা পড়েছে আদি সৌন্দর্যটুকু।

চন্দনপুরা জামে মসজিদ

চন্দনপুরা জামে মসজিদ নামে পরিচিত ১৫ গম্বুজসংবলিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদ-ই-সিরাজ উদ-দৌলা। ১৬৬৬ সালে শায়েস্তা খাঁর সৈন্যরা চট্টগ্রাম দখলের পর এই মসজিদ নির্মিত হয়। পরবর্তীকালে সড়ক সম্প্রসারণ ও আশপাশে নানা স্থাপনা হওয়ায় এটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়। এই স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম প্রধান শর্ত হলো, এর চারপাশে খোলা জায়গা রাখা। এখানে এখন সেই খোলা জায়গা আর নেই।

আগাছায় ভরা প্রথম আদালত ভবন

চট্টগ্রামের প্রথম আদালত ভবনেরও একই অবস্থা। এটি এখন সরকারি মহসিন কলেজের সম্পত্তি। মোগল ও ঔপনিবেশিক স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের এই ভবনের দেয়াল ও ছাদে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। পলেস্তারা খসে পড়েছে। চারদিকে আগাছা। রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই। ২০১৩ সালে ভবনটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলে প্রতিবাদ ওঠে। ভাঙার উদ্যোগ বন্ধ হলেও ভবনটিকে রক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।

অলি খাঁ মসজিদের কাঠামো ক্ষুণ্ন

চকবাজারে মোগল আমলে ১৭১৪ থেকে ১৭১৯ সালের মধ্যে ছয় গম্বুজের ওয়ালী বেগ খান মসজিদ নির্মিত হয়। এটি অলি খাঁর মসজিদ নামে পরিচিত। সম্প্রসারণ করতে গিয়ে মসজিদটির চারপাশে তিনতলা ভবন করা হয়েছে। সড়ক সম্প্রসারণের কারণে একাংশ ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। হয়েছে নতুন তোরণ। ফলে আগের কাঠামো অক্ষুণ্ন থাকেনি। চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম ব্যস্ত জায়গা চকবাজার মোড়। সারা দিন যানবাহন, মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। সড়ক সম্প্রসারণের স্বার্থে ব্যস্ত সড়কের মোড়ে অবস্থিত এই মসজিদ স্থানান্তর বা পুনর্নিমাণ অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। এ কারণে এটি হারিয়েছে তার ধ্রুপদি সৌন্দর্য।

ভবনে ভবনে বেষ্টিত আদালত ভবন

পরির পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত প্রায় ১৫০ বছরের প্রাচীন চট্টগ্রাম আদালত ভবনেরও অবস্থা কাহিল। একসময় চট্টগ্রামের দর্শনীয় স্থান ছিল এটি। চারপাশে অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণের ফলে ঢাকা পড়ে গেছে সুরম্য ভবনটি। নানা মহলের স্বার্থের টানাপোড়েনে এই ভবনের আসল সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সরকারি চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে। নান্দনিক আদালত ভবনটির সামনে আগে বড় খোলা অঙ্গন ছিল। তা এখন আর নেই। এটিকে ঘিরে ফেলেছে বেশ কয়েকটি ভবন, যেগুলোয় রয়েছে হাজার হাজার আইনজীবীর দপ্তর। এটি এখন গিঞ্জি এলাকায় পরিণত হয়েছে।

পুরাতন সার্কিট হাউস ভবন

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ও দৃষ্টিনন্দন বর্মী-বাংলা স্থাপত্যে নির্মিত সার্কিট হাউস ভবনের চারপাশে অবাঞ্ছিত সব নির্মাণ। এভাবে প্রায় ঢাকা পড়ে গেছে এই নান্দনিক স্থাপত্যকর্ম। নষ্ট হয়ে গেছে এর চারপাশের পরিকল্পিত ভূদৃশ্য। পুরাতন সার্কিট হাউসের চারপাশে তারই আদলে নতুন সার্কিট হাউস হয়েছে। এর চারপাশে ছিল দৃষ্টিনন্দন মাঠ। সেই মাঠ দখল করে হয়েছে শিশু পার্ক। অবশ্য এখন সেই শিশুপার্ক উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।

আরও যত ঐতিহ্য

সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরায় সুলতানি আমলে নির্মিত হাম্মাদিয়া মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো ভবনটিকে সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তার বদলে মসজিদটি সম্প্রসারণ করে তিনতলা ভবন করা হয়েছে, যাতে তিন দিক থেকে সুন্দর এই পুরাকীর্তি ঢাকা পড়ে গেছে।

জানা যায়, মসজিদের প্রবেশপথে কালো বেসল্ট পাথরের শিলালিপিটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটির ওপর সবুজ রং করা হয়েছে এবং আরবি শিলালিপির কিছু অংশ পাঠের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

এ ছাড়া হাটহাজারীর বড়দিঘির সুলতানি আমলের নসরত শাহ মসজিদ, মোগল আমলের পোস্তার পাড় ও হাজি মসজিদের মূল স্থাপনার কোনো চিহ্নই নেই। নগরের ‘মাদার ডেইটি’ নামে পরিচিত চট্টেশ্বরীতে প্রায় ২৫০ বছরের পুরোনো মন্দিরটি মুক্তিযুদ্ধকালে ধ্বংস করে দিয়েছিল হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী।

এ ছাড়া ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম আদালত ভবন, জেনারেল হাসপাতাল, সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং, রেলওয়ের কাঠের বাংলো, পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন ও কর্ণফুলী রেলওয়ে সেতু (কালুরঘাট সেতু)।

চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর দুরবস্থা সম্পর্কে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, চট্টগ্রামের প্রাচীন স্থাপনাগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নজরে পড়ে না। এখানে তাদের কোনো দপ্তরও নেই। প্রাচীন স্থাপনাগুলো সংস্কার বা সংরক্ষণ না করার পেছনে স্বার্থান্বেষী মহলও দায়ী।

কর্ণফুলীর খনন নিয়ে আশা–নিরাশা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নে দেয়াঙ পাহাড়ের বিশ্বমুড়া এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধানের কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হলে অতীতের আরও এক গৌরবময় অধ্যায় উন্মোচিত হতে পারে।

কথা হচ্ছে, জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে কত দিন লাগবে? খননকাজ প্রকল্প শেষ হলে খননকাজের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা চলে যাবেন। এত দিন যেটা মাটির তলায় সংরক্ষিত ছিল, এখন তা উম্মুক্ত হয়ে ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। এটা এখন ছেলেমেয়েদের খেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি হলে পানির নিচে তলিয়ে যাবে। দেখা যাবে, পুরাকীর্তির ইটগুলো সব খুলে খুলে নিয়ে গেছে। কারণ, কোনো পাহারার ব্যবস্থা নেই।

আনোয়ারার পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় খননকাজ বাস্তবায়নের সদস্যসচিব মোস্তফা কামাল মনে করেন, এই খননকাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের ইতিহাসের নতুন দিক উঠে আসবে। এখানে একটি জাদুঘর স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। তাঁর মতে, চট্টগ্রামে সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকা আরও বাড়াতে হবে। তা ছাড়া অধিদপ্তর শুধু তালিকা করলেই চলবে না। কারণ, ইতিমধ্যে তালিকাভুক্ত অনেক স্থাপনা বিকৃত হয়েছে। সুতরাং সব পুরাকীর্তি সংরক্ষণে সচেষ্ট হতে হবে। আর চট্টগ্রামের পুরাকীর্তি যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য এখানে আলাদা দপ্তর খুলতে হবে।