সাদা পাথর দেখতে যেতেও চাঁদা!

এই বাঁশের বেড়ার কাছে ৫০ টাকা চাঁদা নিয়ে ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে পর্যটকদের।
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

চট্টগ্রামের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক অভি দাস তাঁর স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন সিলেটে। তাঁরা সিলেটের সীমান্তঘেঁষা কোম্পানীগঞ্জ–সংলগ্ন ভোলাগঞ্জে ধলাই নদের উৎসমুখে পাথরবেষ্টিত এলাকা ‘সাদা পাথর’ দেখতে যাবেন। কিন্তু ধলাই নদের ঘাটে মানুষের ভিড় থাকায় নৌকা পাননি। অবশেষে তাঁরা নদের পাড় ধরে পায়ে হেঁটে সাদা পাথরের দিকে রওনা হন। কিন্তু চাঁদাবাজরা তাঁদের আটকে দেন। শেষে ৫০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে তাঁদের সাদা পাথর দেখতে যাওয়ার অনুমতি মেলে।

পটুয়াখালী থেকে প্রকৌশলী সাগর সরকার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ধলাই নদীর উৎসমুখে পাথর ও স্বচ্ছ পানি দেখতে এসেছিলেন। ভিড়ের কারণে ঘাটের ইঞ্জিনচালিত নৌকা না পাওয়ায় হেঁটে যেতে ৪ জনের জন্য ৫০ টাকা করে মোট ২০০ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।

শুধু অভি বা সাগর সরকার নন, সিলেটের সীমান্তঘেঁষা কোম্পানীগঞ্জ–সংলগ্ন ভোলাগঞ্জে ধলাই নদের উৎসমুখে সাদা পাথর, স্বচ্ছ পানি এবং ওপারে ভারতের মেঘালয়ের পাহাড় দেখতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় করেন। কিন্তু ইঞ্জিনচালিত নৌকাসংকটে শত শত মানুষকে নদের পাড় ধরে সাদা পাথর এলাকায় হেঁটে যেতে হয়। আর এই সুযোগ কাজে লাগান কিছু চাঁদাবাজ। প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনেই ঘটছে এসব ঘটনা।

২৩ ডিসেম্বর ধলাই নদের ঘাটে পাথর, স্বচ্ছ পানি ও ওপারে মেঘালয়ের সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করেছিলেন লাখো মানুষ।
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

২৩ ডিসেম্বর (শনিবার) ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। এক দিন পরই খ্রিষ্টীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব বড়দিনের ছুটি। সব মিলিয়ে টানা তিন দিনের ছুটি পেয়ে অনেকেই সিলেটে গিয়েছিলেন প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে। গত তিন দিনে ধলাই নদের ঘাটে পাথর, স্বচ্ছ পানি ও ওপারে মেঘালয়ের সৌন্দর্য দেখতে ভিড় করেছিলেন লাখো মানুষ।

২৩ ডিসেম্বর বিকেলে কোম্পানীগঞ্জে ধলাই নদীর ঘাটে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষের ঢল। তাঁরা সবাই নৌকায় ধলাই নদের উৎসমুখে যাবেন। সব মিলিয়ে ২০-২৫টি ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট কাঠের নৌকা পর্যটকদের আনা–নেওয়া করছে। সেদিনের ভিড়ের তুলনায় নৌকার সংখ্যা অপ্রতুল। নৌকা না পেয়ে অনেকেই ধলাই নদের উৎসমুখে হেঁটে রওনা দেন। কিন্তু দু-তিনজন চাঁদাবাজ বাঁশের বেড়ার মধ্যে ফটক বানিয়ে সেখানে আটকে দেন। ৫০ টাকা দিলেই যাওয়ার অনুমতি মেলে। অনেককেই ৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে দেখা যায়। বাঁশের ফোকর পার হতে এই প্রতিবেদকের কাছেও ৫০ টাকা চান চাঁদাবাজরা। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাঁরা যেতে বাধা দেন। চাঁদাবাজরা বলেন, বসের নির্দেশে এই টাকা তুলছেন তাঁরা। বসের নাম জানতে চাইলে বলেন, তাঁর নাম ‘মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাফিজ। তিনি র‍্যাবের সাবেক সদস্য।’

২০-২৫টি ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট কাঠের নৌকা পর্যটকদের আনা–নেওয়া করে।
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

চট্টগ্রাম থেকে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে আসা অভি দাস জানালেন, স্ত্রী–সন্তান নিয়ে এত দূর থেকে এসেছেন প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে। শুনেছেন ওপার থেকে ঝরনাধারায় ধলাই চ্যানেলে স্বচ্ছ পানি আসে। এর মধ্যেই বড় বড় সাদা পাথর জেগে থাকে। তাই এসব না দেখে ফিরে যেতে চাননি তাঁরা। বিষয়টি অনৈতিক জেনেও তিনি চাঁদা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে পাশের বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা কমান্ডার জাবেদ হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এখানে কারও চাঁদাবাজি করার কথা নয়। বিষয়টি তিনি দেখছেন। তিনি বলেন, বিজিবি নিরাপত্তার জন্য এই বাঁশের বেড়া দিয়েছে।

ধলাই নদের ঘাটে পাথর, স্বচ্ছ পানির ওপর পর্যটকেরা।
ছবি: সৈয়দ জাকির হোসেন

ওই দিন বিজিবি ক্যাম্পে এসেছিলেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকান্ত চক্রবর্তী। বিষয়টি তিনি আমলে নেননি।

পরে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিলেট রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।