টাকা ফেরতের কথা শুনে স্টেশনমাস্টার অবাক হয়ে যান

এমদাদুল হক

জীবনে যে কয়েক বার বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন, ৬৫ বছর বয়সে এসে সেই টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অবসরপ্রাপ্ত কনস্টেবল এমদাদুল হক। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই বাসিন্দার ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনাটি সাড়া ফেলেছে। এমদাদুল হকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহাদৎ হোসেন

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনাকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হয়েছে। কেমন লাগছে?

এমদাদুল: খবরের শিরোনাম হব কিংবা সাংবাদিকেরা আমার খোঁজে বাড়ি পর্যন্ত আসবেন, তা কোনো দিন চিন্তাও করিনি। তবে ভালো লাগছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: স্ত্রী-সন্তানেরা কী বলেছেন?

এমদাদুল: পরিবারের সবাই খুশি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: পরিচিত মানুষেরা কিছু বলেছেন?

এমদাদুল: তাঁরা প্রশংসা করেছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে কেউ কেউ সমালোচনাও করেছেন। সমালোচকেরা প্রশ্ন তুলেছেন, আমি এত সৎ লোক হলে বিনা টিকিটে কেন ভ্রমণ করেছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনার কাছে এই সমালোচনার জবাব কী?

এমদাদুল: টিকিট কাটার নিয়ত আমার শতভাগ ছিল। অনেক সময় টিকিট কাটতে গিয়ে ট্রেনের সময় হয়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রীদের দীর্ঘ সারি ছিল অথবা টিকিট দেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ জন্য আমি টিকিট কাটতে পারিনি। টিকিট না কেটে ভ্রমণ করা যদি আমার উদ্দেশ্য হতো, তাহলে আমি টাকা ফেরত দিতে যেতাম না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আরও আগে কেন পরিশোধ করেননি?

এমদাদুল: দেব দেব করে দেওয়া হচ্ছিল না। অবশেষে টাকাটা পরিশোধ করেছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: টাকার পরিমাণ কীভাবে নির্ধারণ করলেন?

এমদাদুল: অনুমান করে। আমার ধারণা, বিনা টিকিটে যতবার ভ্রমণ করেছি, তার ভাড়া দুই হাজার টাকা হবে। মোটের ওপর ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ধরেছি, যেন অজান্তেও কোনো পাওনা না থাকে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: টাকা না দিলেও তো পারতেন। কেন দিলেন?

এমদাদুল: অনুশোচনা থেকে। আমাকে আল্লাহর কাছে হিসাব দিতে হবে। এটা বাংলাদেশের মানুষের টাকা, সরকারের কোষাগারের টাকা। বিনা টিকিটে ভ্রমণ মানে আখিরাতে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ট্রেনের ভাড়া পরিশোধের ইচ্ছাটি প্রথম কাকে জানিয়েছিলেন?

এমদাদুল: স্ত্রীকে। তারপর বড় ছেলে ও অন্যদের জানিয়েছি। তাঁরা সম্মতি দিয়েছেন। এত দিন পর কেন ইচ্ছা জাগল সেটিও জিজ্ঞেস করেছেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: তারপর কী করলেন?

এমদাদুল: আমি রেলওয়ে স্টেশনে প্রধান বুকিং সহকারীর কক্ষে গেলাম। গিয়ে বললাম আমাকে আড়াই হাজার টাকার আসনবিহীন টিকিট দেন। তিনি কারণ জানতে চাইলেন। আমি তাঁকে বিষয়টি খুলে বললাম। পরে আমাকে টিকিট দিলেন তিনি। এরপর রেলওয়ে স্টেশনমাস্টারের কাছে নিয়ে গেলেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: স্টেশনমাস্টার কী বললেন?

এমদাদুল: তিনি অবাক হয়েছিলেন। সব শুনে তিনি আমাকে ধন্যবাদ দিলেন। আপ্যায়ন করলেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: দুদকের কেউ কি কিছু বলেছেন?

এমদাদুল: দুদকের ঢাকা কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী তারেকুল ইসলাম স্যার ফোন করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: চাকরিতে কবে যোগদান করছিলেন, অবসর নিলেন কবে?

এমদাদুল: ১৯৮১ সালে কনস্টেবল পদে দুদকের চাকরিতে যোগদান করি। ৩৯ বছর চাকরি করেছি। ২০২০ সালে দুদকের ঢাকার সেগুনবাগিচার কার্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ রেলের একটা বড় সমস্যা। দুর্নীতির অভিযোগও ব্যাপক। আপনি কিছু বলবেন?

এমদাদুল: ট্রেন জনগণের সম্পদ। সবার উচিত টিকিট কেটে ট্রেনে চড়া। নইলে একদিন সবকিছুর জন্য জবাব দিতে হবে।