ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, শুধু ভোট, নির্বাচন বা নির্বাচিত সরকার নয়; গণতন্ত্রের মূল কথা অধিকার এবং সুযোগের সাম্য। তাই মানুষের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে হবে।
নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে ‘বাংলাদেশের কালচার’ আলোচনা শিরোনামের এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ কথা বলেন।
বাংলাদেশের কালচার প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমদের লেখা একটি বইয়ের নাম। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে বাংলাদেশের কালচার বইটি প্রকাশিত হয়। বর্তমান সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটেও বইটি প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়।
আবুল মনসুর আহমদের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভাটির আয়োজন করে আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ। এতে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রের ভাঙা-গড়া হচ্ছে। অভ্যুত্থান একটার পর একটা ঘটছে। আমরা বলছি বিপ্লব ঘটে গেছে। কিন্তু বিপ্লব তো ঘটেনি। বিপ্লব ঘটা মানে হচ্ছে সামাজিক বিপ্লব। এবং আবুল মনসুর আহমদের স্বপ্ন ছিল সেটি যে একটা সামাজিক বিপ্লব ঘটবে। যে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।’
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, মেধার পার্থক্য থাকবে। সৃষ্টিশীলতায় পার্থক্য থাকবে। কিন্তু সব মানুষের জন্য সমান সুযোগ দিতে হবে। সেই সমান সুযোগ দেওয়ার কথাই আবুল মনসুর আহমদের লেখার মধ্যে আছে।
এখনো আবুল মনসুর আহমদের প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সেই প্রাসঙ্গিকতাকে বিকশিত করা আমাদের কর্তব্য।’
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক মনসুর মুসা বলেন, বর্তমানে একটি বন্দোবস্তের কথা বলা হচ্ছে। এখানেও আবুল মনসুর আহমদ প্রাসঙ্গিক। প্রাসঙ্গিক এ কারণে, তিনি যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সঠিক সময়ে সঠিক প্রশ্ন করতে পারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তিনি বলেন, ‘আমরা কি এখন সঠিক প্রশ্ন করছি?’
সভায় নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তকে সাফল্যের পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন সমাজ বিশ্লেষক ও গীতিকার শহিদুল্লাহ ফরায়েজী। সেগুলো হলো: এক. সত্য ও নৈতিকতার ভিত্তিতে রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা ও আইনকে নৈতিকতার চোখে দেখা। দুই. রাষ্ট্র পরিচালনায় সর্বস্তরের মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। তিন. রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা। চার. সহিংসতা, দমন-পীড়ন ও ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বিকাশ করা। এবং পাঁচ. সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ন্যায্যতা, মানবিক মর্যাদা, মুক্তচিন্তার চর্চা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
শহিদুল্লাহ ফরায়েজী বলেন, বন্দোবস্ত যদি কেবল ক্ষমতার পরিবর্তনে সীমিত থাকে, তবে তা হবে সাময়িক। কিন্তু যদি এটি সাংস্কৃতিক রূপান্তর ঘটায়, তবে তা স্থায়ী ইতিহাস হয়ে উঠবে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আজকে যে নতুন বন্দোবস্তের কথা বলছি, এটা ভয়াবহ রকমের মুখস্থ কথা। নতুন বন্দোবস্ত কী? আমরা আসলে নির্দিষ্ট করে বলিনি। সবচেয়ে নতুন ছেলেরা সবচেয়ে পুরোনো কাজ করছে। সবচেয়ে পুরোনো কথা বলছে। সবচেয়ে পুরোনো অভ্যাসের মধ্যে আছে।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন গবেষক ও সাংবাদিক ইমরান মাহফুজ। আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আ. আল মামুন, লেখক ও রাজনীতিক ফিরোজ আহমেদ, চিন্তক ও গবেষক কাজল রশীদ শাহীন, সাংবাদিক ও লেখক তাহমিদাল জামি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম।
অনুষ্ঠানে ‘আবুল মনসুর আহমদ স্মৃতি পরিষদ’ ও তর্কজালের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী রুবিনা জাহান, সুমন রেজা, লাবণ্য মল্লিক, ফাহিম আহমেদ ও উম্মে ইফফাত জাহানের হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সনদ ও নগদ অর্থ তুলে দেওয়া হয়।
আবুল মনসুর আহমদ ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৯ সালের ১৮ মার্চ ঢাকায় মারা যান। তাঁর লেখা বাংলাদেশের কালচার বইতে বিভিন্ন আঙ্গিকে এই অঞ্চলের মুসলমানদের হাজার বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির কথা তুলে ধরা হয়েছে।