মানুষ আসছে, বই বাড়ছে
অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিন অনেক মানুষ এসেছেন মেলায়। প্রথম দুই দিনের তুলনায় এই ভিড় প্রায় তিন গুণ বলে জানালেন কেউ কেউ। বিক্রি সেভাবে শুরু না হলেও মানুষ এলেই মেলা জমবে বলে জানালেন বিভিন্ন দোকানের প্রতিনিধিরা। মানুষের মতো নতুন বইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। তৃতীয় দিনে নতুন বই জমা হয়েছে ৩২টি। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ১৩। তবে প্রয়াত খোন্দকার ফজলে রাব্বির লেখা বাংলার মুসলমানের উৎস বইটি এসেছে মেলা শুরুর আগেই। বইটি ফারসিতে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৯৫ সালে, একই বছর ইংরেজিতেও প্রকাশিত হয়। বরেণ্য অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের দাদার লেখা শতবর্ষী সেই বইটি বাংলা অনুবাদে প্রকাশ করেছে অ্যাডর্ন পাবলিকেশন।
এমনই গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বই দেখা গেল ইউনির্ভাসিটি প্রেস লিমিটেডের প্রদর্শনী টেবিলে। ভারতের রাজনৈতিক দল, প্রগতিশীল উর্দু কবিতাসহ মোট তিনটি নতুন বই এসেছে বলে জানালেন ইউপিএলের কর্মকর্তা রায়হান তাহরাত।
বাংলাদেশ কতখানি অরক্ষিত, তা নিয়ে ২০০৬ সালে বিশিষ্ট চিন্তক ফরহাদ মজহারের লেখার সংকলন নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল গণপ্রতিরক্ষা। দীর্ঘদিন বইটি আর পাওয়া যেত না। গুরুত্বপূর্ণ বইটি এবারের মেলায় নতুন করে এনেছে আগামী প্রকাশনী। এখান থেকে এ বছর একই লেখকের আরেকটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বিক্রির দৌড় একটু শ্লথ হলেও কিছু বইয়ের নির্দিষ্ট পাঠক আছে বলে জানালেন বিক্রয়কর্মীরা। যেমন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাঝামাঝিতে থাকা ডেইলি স্টার বুকসের বিক্রয়কর্মী তানহা বললেন, বিক্রি তেমন শুরু হয়নি। তবে তাঁদের বইয়ের নির্দিষ্ট পাঠক আছেন। এসে খুঁজে কিনে নিয়ে চলে যান।
তবে অন্যপ্রকাশের সামনে পাওয়া গেল ক্রেতা, পাঠকের উপস্থিতি। এখানে অনেক বইয়ের মধ্যে পাওয়া গেল রাবেয়া খাতুনের মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে ফ্রিডমস ফ্লেম বইটি। হঠাৎ একটু দাঁড়াতে হলো কথাপ্রকাশের সামনে আধুনিক বাংলা গদ্যভাষার সন্ধানে বইটি দেখে। ঝকঝকে প্রচ্ছদে প্রকাশিত হওয়া নিজের বইটি দেখে যেতে পারলেন না লেখক ফয়জুল ইসলাম। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে চলে গেছেন এই গুণী লেখক।
প্রথমা প্রকাশনের কাছে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, সেখানে রাজনীতি আর ইতিহাসের বই খুঁজছেন পাঠক। বিক্রয়কর্মীরা বললেন, ভিড় বাড়লে ক্রেতাও বাড়ে। প্রথম দিন থেকেই তাঁদের ক্রেতা আছে। এবার অনেকে উপন্যাসও খুঁজছেন প্রথমায় এসে। এবারের মেলায় প্রথমার নতুন বইয়ের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৬০।
গত শতকে বইমেলার শুরুর ইতিহাসে জড়িয়ে আছে মুক্তধারার নাম। এবার তাঁরা এনেছে অনেক দিন ধরে মুদ্রিত না হওয়া মৈত্রেয়ী দেবীর কুটিরবাসী রবীন্দ্রনাথ, আবুল আহসান চৌধুরীর কালান্তরের পথিক লালন–এর মতো ৯টি বই। মেলার প্রবেশপথে প্লাস্টিকের পাখি বিক্রেতা আমির হোসেন বললেন, তাঁর নিয়ত আছে প্রতিবারের মতো এবারও অন্তত একটি বই কিনবেন মেলা থেকে।
গতকাল সোমবার মেলার তৃতীয় দিনে মূলমঞ্চে ছিল ‘হায়দার আকবর খান রনো: আজীবন বিপ্লব-প্রয়াসী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। ‘লেখক বলছি’ মঞ্চে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখকেরা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘কুমুদিনী হাজং’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে বই
উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এ বই। মুক্তিযুদ্ধের আগে এ দেশের ইতিহাসে উনসত্তরের আন্দোলনই ছিল সেই ঘটনা, যা শহর-গ্রামনির্বিশেষে সব শ্রেণি ও পেশার মানুষকে আলোড়িত করেছিল। জনসম্পৃক্তি ও ব্যাপক মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষার বিচারে এই আন্দোলনের সঙ্গে তুলনীয় ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। লেখকের মতে, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর ছিল সেই সম্ভাবনা, যা একে চূড়ান্ত পর্যায়ে একটি গণবিপ্লবে রূপ দিতে পারত। কিন্তু সম্ভাব্য সে বিপ্লবে যাদের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, সেই বামপন্থীদের দুর্বলতা-জাতীয় মুক্তির আকাঙ্ক্ষা কিংবা তার তীব্রতা অনুধাবনে তাদের একাংশের ব্যর্থতা এবং নানা বিভ্রান্তি সে সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি। ফলে মেহনতি মানুষের স্বার্থে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এ দেশে আজও অধরাই রয়ে গেছে। দেশের একজন শীর্ষস্থানীয় লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী পূর্বাপর রাজনীতির পটভূমিতে রেখে, প্রচুর তথ্য ও যুক্তিসহকারে এবং নিজস্ব বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে তাঁর সে ধারণা বা উপলব্ধির কথাই বইটিতে বিশদভাবে তুলে ধরেছেন।