দেশের উন্নতির সম্ভাবনা নিয়ে হতাশ ৪৬%, আশাবাদী ৩৫%

  • নির্বাচিত সরকার দলীয়করণ, দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আশাবাদী প্রায় ৫২% উত্তরদাতা।

  • নির্বাচিত সরকার ভিন্ন রাজনৈতিক মতের ব্যাপারে সহিষ্ণুতা দেখাবে, আশাবাদী প্রায় ৫৪% উত্তরদাতা।

প্রথম আলো গ্রাফিকস

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রায় অর্ধেক মানুষ হতাশ। এক-তৃতীয়াংশের বেশি কিছু মানুষ দেশ নিয়ে আশাবাদী। ৮৩ শতাংশ মানুষ মনে করেন, কর্মসংস্থান বা আয়ের সুযোগ এখন অনুকূলে নয়। বর্তমান অবস্থা ব্যবসা-বাণিজ্যের উপযুক্ত নয় বলে মনে করেন ৭৭ শতাংশ মানুষ।

দেশ নিয়ে আশা-হতাশা, কর্মসংস্থানের সুযোগ বা ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ এবং দেশ ছাড়ার বিষয়ে উদ্বেগের বিষয়গুলো উঠে এসেছে প্রথম আলোর উদ্যোগে করা ‘গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপ ২০২৫’-এ। প্রথম আলোর জন্য জরিপটি করেছে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান কিমেকারস কনসাল্টিং লিমিডেট।

জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির সম্ভাবনা নিয়ে কতটা আশাবাদী? উত্তরে ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতা হতাশার কথা বলেছেন। একই প্রশ্নে খুবই হতাশ ১১ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা। ফলে হতাশ ও খুবই হতাশ উত্তরদাতার হার দাঁড়ায় প্রায় ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে কিছুটা আশা আছে ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ উত্তরদাতার। অত্যন্ত আশাবাদী ৩ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। দুয়ে মিলে আশাবাদী উত্তরদাতার হার দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশ। হতাশ নন, আবার আশাবাদীও নন ১৯ শতাংশ উত্তরদাতা।

জরিপ বলছে, দেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নতির বিষয়ে নারী-পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। নারীর মধ্যে দেশ নিয়ে আশাবাদ বেশি। একইভাবে বয়স্কদের চেয়ে তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে দেশ নিয়ে আশাবাদ কিঞ্চিৎ বেশি দেখা গেছে।

প্রথম আলোর উদ্যোগে করা জরিপে দেশের ৫টি নগর ও ৫টি গ্রাম বা আধা শহরাঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৫৫ বছর) ১ হাজার ৩৪২ জনের মতামত নেওয়া হয়। জরিপে অংশ নেওয়া মানুষেরা বিভিন্ন আয়, শ্রেণি ও পেশার। জরিপে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে গত ২১ থেকে ২৮ অক্টোবর।

অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, দেশে আয়-উপার্জন-ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ভালো নয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৭ শতাংশের কিছু বেশি উত্তরদাতা বলছেন, পরিস্থিতি ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূলে নয়। ২০ শতাংশের মতো উত্তরদাতা মনে করেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

জরিপকারী প্রতিষ্ঠান বলেছে, এটি একটি মতামত জরিপ। এটা দেশের প্রতিনিধিত্বমূলক জরিপ, তবে নির্দিষ্টভাবে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করে না। জরিপের নমুনা এমন মানুষদেরই তুলে ধরেছে, যাঁরা অনলাইন অথবা ছাপা পত্রিকা পড়তে পারেন এবং আগামী নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জরিপের ফলাফলের নির্ভরযোগ্যতার (কনফিডেন্স লেভেল) মাত্রা ৯৯ শতাংশ।

উত্তরদাতাদের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কর্মসংস্থান ও আয়-উপার্জনের সুযোগ পাওয়ার জন্য কতটা অনুকূল। পরিস্থিতি অনুকূল নয় বলে প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ উত্তর দিয়েছেন। অনুকূল বলেছেন মাত্র ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। বাকিরা বলেছেন, তাঁরা নিশ্চিত নন।

প্রথম আলো গ্রাফিকস

জরিপে দেখা গেছে, চাকরি ও আয়-উপার্জনের ব্যাপারে পরিস্থিতি প্রতিকূল ও অত্যন্ত প্রতিকূল—এমন মনোভাব নারী ও পুরুষের মধ্যে সমান। উচ্চ আয়ের মানুষের চেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি মনে করেন যে পরিস্থিতি প্রতিকূল বা অত্যন্ত প্রতিকূল।

জরিপে আরেকটি প্রশ্ন ছিল, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কতটা অনুকূল? ৭৭ শতাংশের কিছু বেশি উত্তরদাতা বলছেন, পরিস্থিতি ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূলে নয়। ২০ শতাংশের মতো উত্তরদাতা মনে করেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাকি ৩ শতাংশের কিছু বেশি উত্তরদাতার বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত ধারণা নেই।

সহিষ্ণুতা বাড়বে কি, দুর্নীতি কমবে কি

জরিপে প্রশ্ন করা হয়েছিল, পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচিত সরকার ভিন্ন রাজনৈতিক মতের ব্যাপারে সহিষ্ণুতা দেখাবে, এ ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?

নির্বাচিত সরকার ভিন্ন রাজনৈতিক মতের ব্যাপারে সহিষ্ণুতা দেখাবে বলে অর্ধেকের বেশি (প্রায় ৫৪ শতাংশ) উত্তরদাতা আশাবাদী। বিপরীতে প্রায় ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা হতাশার কথা বলেছেন। সাড়ে ২২ শতাংশ উত্তরদাতা হতাশও নন, আশাবাদীও নন।

প্রথম আলো গ্রাফিকস

নির্বাচিত সরকারের দলীয়করণ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার ব্যাপারে মানুষ কতটা আশাবাদী—তা জানতে চেয়েছিলেন জরিপকারীরা। উত্তর থেকে দেখা গেছে, নির্বাচিত সরকার দলীয়করণ, দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসবে বলে আশাবাদী প্রায় ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা। বিপরীতে হতাশ সাড়ে ২৭ শতাংশ উত্তরদাতা। তবে হতাশও নন আবার আশাবাদীও নন—এমন উত্তরদাতা ২০ শতাংশের কিছু বেশি।

নির্বাচিত সরকার দলীয়করণ, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি থেকে বেরিয়ে আসবে—এ ব্যাপারে নারীরা ও কম বয়সীরা বেশি আশাবাদী।