ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাত কলেজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টায় ক্ষোভ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাওয়ার বিরোধিতা করে ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত সরকারি কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এই চেষ্টার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সংগঠনের সাত কলেজ শাখার নেতা-কর্মীরা। তাঁরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অধীনেই থাকতে চান।

ছাত্রসংগঠনটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দেশের সব ইউনিটই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অধীনে থাকার কথা।

সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ চেয়ে সম্প্রতি জোরালো বক্তব্য দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। গত মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে সাত কলেজের ‘একাডেমিক সংকট নিরসনে’ কলেজগুলোর একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন তাঁরা। সেই সভা শেষে তানভীর হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সাত কলেজ শাখার কমিটি হওয়ার সুযোগ নেই।

তানভীর হাসানের এই বক্তব্যের পর ওই দিনই রাত আটটার দিকে বিক্ষোভ মিছিল করেন ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে সায়েন্স ল্যাব ও নীলক্ষেত মোড় ঘুরে আবার কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভে ‘সেন্ট্রালেই (কেন্দ্র) আছি, সেন্ট্রালেই থাকব’, ‘ঢাবির অধীনে যাব না, যাব না’ বলে স্লোগান দেন ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

ঢাকা কলেজে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। এই শাখার নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন।

গত মঙ্গলবারের বিক্ষোভে অংশ নেন সেলিম আহমেদ। ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী এই নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা হচ্ছে ছাত্রলীগের জেলা মর্যাদার ইউনিট, হলগুলো হচ্ছে থানা মর্যাদার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা যদি আমাদের কমিটি দেয়, তাহলে আমরা তো হলের সমতুল্য হয়ে যাব। আমরা মনে করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা অসাংগঠনিক কথা বলেছে। এ ধরনের বক্তব্য থেকে তারা সরে না এলে আমরা আবারও কর্মসূচি দেব।’

পরদিন গতকাল বুধবার দুপুরে বিক্ষোভ হয়েছে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজেও। কলেজের ফটকের সামনে প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম সড়কে এই বিক্ষোভে বাঙলা কলেজের নেতা-কর্মীরা ‘ঢাবি ছাত্রলীগের প্রহসন মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দেন। পরে কলেজের ফটকে একটি সমাবেশও হয়।

বাঙলা কলেজে সর্বশেষ ছাত্রলীগের কমিটি হয়েছিল ২০১৪ সালে। দীর্ঘদিন সেখানে কোনো কমিটি নেই। বাঙলা কলেজে নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে গত জুলাই মাসে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। যদিও এখনো সেখানে নতুন কমিটি হয়নি।

গতকালের বিক্ষোভ সমাবেশে বাঙলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অধীনে ছিলাম, কেন্দ্রের অধীনেই থাকব।’

মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গতকাল বুধবার বিক্ষোভ করেন
ছবি: সংগৃহীত

ফেসবুকে সরব অন্য কলেজগুলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সাত কলেজ শাখার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদে ফেসবুকে সরব হয়েছেন অন্য পাঁচ কলেজের শীর্ষ নেতা ও তাঁদের অনুসারীরা। তাঁরা বলছেন, আগে সাত কলেজের যোগ্য কর্মীদের মধ্য থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হোক। এরপর তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অধীনে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন।

ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘একটা জেলা মর্যাদার ইউনিটকে কোন সাহসে উপজেলা ইউনিটে নামাতে চান? কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে দাবি জানাচ্ছি, আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যোগ্য কর্মীদের মধ্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হোক।’

ফেসবুকে একই ধরনের পোস্ট দিয়েছেন ছাত্রলীগের সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল, কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ফারুক হাওলাদার ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম। কবি নজরুল কলেজের সভাপতি বেলায়েত হোসেন লিখেছেন, সাত কলেজের জন্য বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (কেন্দ্র) আছে।

বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক হাবিবা আক্তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আপনারা (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ) কি আদৌ শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের জন্য মতবিনিময় সভা আয়োজন করেছিলেন, নাকি নিজেদের মনের আকাঙ্ক্ষা উপস্থাপন করার জন্য শিক্ষার্থীদের হয়রানি করলেন? গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সাত কলেজ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের আওতাধীন থাকবে—আমি ব্যক্তিগতভাবে এ বিষয়ে আপনাদের মতামতের আবশ্যকতা দেখছি না।’

সাত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মঙ্গলবারের মতবিনিময় সভাটি ছিল সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সমস্যা-সংকটের সমাধানের উদ্দেশ্যে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা বিভিন্ন সময়ে চা-চক্র বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যখন সাত কলেজে গিয়েছি, সেখানকার সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের গ্রহণ করেছেন। কোনো বিষয় নিয়ে সেখানে নানা মত, পক্ষ-বিপক্ষ থাকতেই পারে। আবার এমনও হতে পারে যেকোনো নেতার অনুসারীরা তাঁর নির্দেশিত পথে আন্দোলন বা প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।’

সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের একটি গঠনতন্ত্র আছে। গঠনতন্ত্রটি আমাদের কাছে সংবিধানের মতো। সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের গঠনতন্ত্র মেনে চলা উচিত বলে আমরা মনে করি। সবাইকে আমরা সংগঠনের গঠনতন্ত্র পড়ে তা অনুসরণ করার অনুরোধ জানাই। গঠনতন্ত্রে কোনো সংশোধন প্রয়োজন হলে সেটি নিয়ে আমরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় আলাপ করতে পারি। সাত কলেজের বিষয়টি ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে মীমাংসিত বিষয়।’

আরও পড়ুন