আকবর আলি খানের চিন্তার কেন্দ্রে ছিল দেশের সমস্যা

আকবর আলি খান
ছবি: জাহিদুল করিম

প্রয়াত লেখক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান দেশের কথা ভাবতেন। তাঁর চিন্তার কেন্দ্রে ছিল দেশের সমস্যা-সংকট৷ তাঁকে পড়লে আমাদের দেখার জগৎটা অনেক পরিপূর্ণ হবে। তিনি আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক ও প্রাসঙ্গিক থাকবেন। বুদ্ধিজীবিতার দিক থেকে তিনি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ হিসেবে কাজ করতে পারেন, যদি আমরা তাঁকে ব্যবহার করতে পারি।

বুধবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে আয়োজিত এক বিশেষ বক্তৃতায় বক্তারা এসব কথা বলেছেন। ৮ সেপ্টেম্বর ৭৮ বছর বয়সে মারা যান আকবর আলি খান। তাঁর স্মরণে ‘আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সংকটের পটভূমিতে আকবর আলি খান পাঠ’ শিরোনামে গতকাল বিশেষ বক্তৃতার আয়োজন করে প্রাগ্ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পাঠচক্র-সংগঠন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, একটা মানুষের কী পরিমাণ অন্তর্নিহিত প্রাণশক্তি ছিল, ভাবতেই বিস্ময় জাগে৷ তিনি বিস্ময়কর পরিমাণে লিখেছেন। তিনি সত্য বলতেন। তাঁর বই-পুস্তকে তথ্য উপস্থাপিত হয়েছে, কিন্তু তথ্যের চেয়ে বেশি তিনি উপস্থাপন করতে চাইতেন বিভিন্ন পক্ষের মতামত।

আকবর আলি খানের নির্দিষ্ট কাল ও স্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল এবং তা মেনেই তিনি লেখালেখি করেছেন। তাঁর লেখালেখির কেন্দ্রে ছিল দেশ ও দেশের মানুষ। নিজের অভিজ্ঞতাকে লেখায় অনুবাদ করতে পেরেছেন তিনি। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর তিনি অত্যন্ত সক্রিয় একজন বুদ্ধিজীবী ছিলেন।

আকবর আলি খান তাঁর জীবনের অন্তত শেষ ৩০ বছর সক্রিয় বুদ্ধিজীবী ছিলেন, যা বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন মোহাম্মদ আজম। তিনি বলেন, তিনি সারা জীবনে যা কিছু লিখেছেন, তাঁকে এক কথায় বলতে পারি ‘বাংলাদেশ স্টাডিজ’। এ জন্য তিনি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর লেখার ভঙ্গি ছিল মিশ্র। তাঁর লেখার প্রধান ক্ষেত্রগুলোর (রাজনীতি, অর্থনীতি, আমলাতন্ত্র, ইতিহাস ও সাহিত্য) ওপর চোখ রাখলে আমরা বুঝতে পারব, তিনি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সংকট নিয়েও কথা বলেন মোহাম্মদ আজম। তিনি বলেন, দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্যে বেশ কিছু গভীর সংকট আছে। এই সংকটকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—বুদ্ধিজীবিতার সংকট ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সংকট। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বুদ্ধিজীবিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভয়ংকর রকম খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বুদ্ধিজীবী হিসেবে যাঁদের দায়িত্ব পালন করার কথা, তাঁরা শঙ্কার মধ্যে জীবন যাপন করছেন কিংবা নিজেরা আগবাড়িয়ে শঙ্কাকে গভীরতর করে তুলছেন।

আজম বলেন, ‘বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক সংকটের সবচেয়ে বড় জায়গাটা হলো অশ্লীল দ্বি-বিভাজন। আমরা খুবই খারাপ একটা পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি, যেখানে এই দ্বি-বিভাজিত অবস্থান প্রকাশ করাকেই বুদ্ধিজীবিতা বা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার চূড়ান্ত প্রকাশ হিসেবে দেখা হয়। কীভাবে চিন্তা করতে হয়, আমরা আসলে সেটা শিখতে পারিনি।’

বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক (সংযুক্ত) ফয়জুল লতিফ চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি আকবর আলি খানের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘তিনি দেশের কথা ভাবতেন। প্রতিটি গ্রন্থে তিনি বাংলাদেশের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোকে উপজীব্য করেছেন। তাঁর চিন্তার কেন্দ্রে ছিল বাংলাদেশের সমস্যা। তাঁকে পড়লে আমাদের দেখার জগৎটা অনেক পরিপূর্ণ হবে।’

ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাহিত্য সম্পাদক জাহিদ আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে লেখক ইমরান মাহফুজ বক্তব্য দেন।