দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে হিসাবই মেলাতে পারছেন না তাঁরা

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ছবিটি রংপুর নগরের সিটি বাজার থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

রংপুরে নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো সুখবর নেই। প্রতিদিনই বাড়ছে পণ্যের দাম। মানুষের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এর ওপর রয়েছে সন্তানদের লেখাপাড়ার খরচ। এমন অবস্থায় মানুষজন কোনো হিসাবই মেলাতে পারছেন না।

রংপুরে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। মুরগির দামও বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। চাল, আটা, ময়দাসহ কনফেকশনারি পণ্যের দামও বেড়েছে। ৫০ টাকা কেজির আটা হয়েছে ৬০ টাকা, ৬৫ টাকা কেজির ময়দা হয়েছে ৭০-৭৫ টাকা। চিনির কেজি ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১১০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা মানুষজনকে দরদাম নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করলে হতাশা, ক্ষোভ আর অসন্তোষের কথাই তাঁরা বলেন। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কীভাবে সামাল দিচ্ছেন, এসব বিষয় নিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে চাকরি করেন কিংবা সদ্য অবসরে গেছেন, এমন চার ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। তাঁরা পরিবারের খরচ অর্ধেক কমিয়ে এনেও সামাল দিতে পারছেন না।

বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন আবদুর রউফ। তাঁর পরিবারের দৈনিক খাদ্যতালিকায় এক বেলা ভালো মাছ-মাংস থাকত। তবে সেটি এখন আর সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ‘বেতন বাড়েনি। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্তানদের লেখাপড়ার কাগজ-খাতার দামও বেড়েছে। কোনোভাবেই হিসাব মিলাতে পারছি না।’

রংপুর সিটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১৫ দিন আগে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০ টাকা ছিল। এখন ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৯০ টাকা। এ ছাড়া সোনালি মুরগি ২৫০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৮০ টাকা, সোনালি লেয়ারও ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ২০ টাকা বেড়ে ৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই সঙ্গে গরুর মাংস প্রকারভেদে ২০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। খাসির মাংস প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত।

সবজির বাজারেও নেই কোনো সুখবর। প্রতিটি সবজির দাম কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। বেগুন ৫ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা, লাউ প্রতিটি ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা, ২০ টাকার কাঁচা কলার হালি হয়েছে ৩০ টাকা, ২০ টাকা কেজি টমেটো হয়েছে ৩০ টাকা, ৮০ টাকার কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, ডিমের হালি ৪০ টাকা থেকে হয়েছে ৪৮ টাকা। তবে বিভিন্ন আলুর দাম শুধু অপরিবর্তিত রয়েছে। কার্ডিনাল আলু ২০ টাকা, শিল আলু ৩৫ থেকে বেড়ে ৪০ এবং ঝাউ আলু ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রেহানা আক্তার নামের এক স্কুলশিক্ষক সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। উপায় না পেয়ে ব্যয় অনেক কমিয়ে আনতে কাটছাঁট করেও টানাপোড়েনে চলছে তাঁর সংসার। কেনাকাটা থেকে গরু-খাসির মাংস বাদ পড়েছে। মাছও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু সবজি আর ডিম এখন নিত্যদিনের খাবার তালিকায় যুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সন্তানের লেখাপড়ার জন্য কয়েকজন মিলে গ্রুপ করে শিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করাতে হচ্ছে।’

বাজার পরিস্থিতি ও মানুষের কেনাকাটা প্রসঙ্গে সিটি বাজারের ব্যবসায়ী আরমান আলী বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকার অঙ্কে বিক্রিও কমে গেছে।

এদিকে চালের বাজারেও ঊর্ধ্বগতি। প্রকারভেদে চার টাকা বেড়েছে চালের কেজিতে। বিআর-২৮ চিকন চাল ৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৭ টাকা, মোটা চালের মধ্যে (স্বর্ণা) ১৫ দিন আগে ছিল ৪৩ টাকা, সেই চাল ৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪৭ টাকা।

সদ্য অবসরে যাওয়া একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শাশ্বত ভট্টাচার্য বলেন, সংসারের ব্যয়ের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি। আগে একটু ভালো দামের চিকন চালের ভাত খেতেন। খরচ কমিয়ে আনতে এখন মোটা চাল কিনছেন। মাসে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের চাহিদা এখন দুই লিটারে নিয়ে এসেছেন।

এই শিক্ষক বলেন, ‘শখের বসে যেসব খাবার খাওয়া হতো, সেটি বলা চলে একেবারেই বন্ধ। জরুরি প্রয়োজনে গণপরিবহন অটোরিকশায় ৫ থেকে ১৫ টাকার মধ্যে গন্তব্যে ছুটছি। তবে আগে যেতাম রিকশায়।’