ক্ষুদ্রঋণের সামনে নতুন তিন চ্যালেঞ্জ
পরিবারে দিন দিন বাড়ছিল খরচ। আর তা সামলাতে সংসারের কাজের বাইরে বাড়তি কিছু করার কথা ভাবতে বাধ্য হন আলেয়া বেগম। তাঁর বাড়ি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার নিজপাড়া গ্রামে। আলেয়ার স্বামী ছিলেন বর্গাচাষি। তাঁর একার আয়ে চারজনের সংসার চলছিল না। আলেয়া বাড়িতে বসেই কিছু করতে চাইছিলেন।
আলেয়া শুনেছিলেন, মুরগির খামারে লাভ বেশি। কিন্তু খামার করার জন্য এত টাকা কোথায় পাবেন। নেই সঞ্চয়, আবার ব্যাংকের কাছে থেকে বন্ধক নেওয়ার মতো সম্পত্তিও তো নেই। এ অবস্থায় স্থানীয় এক এনজিওর দ্বারস্থ হন আলেয়া। সেটা ২০১৮ সালের কথা। ওই এনজিওর কাছে থেকে এক লাখ টাকা ঋণ এবং সেই সঙ্গে মুরগি পালনের প্রশিক্ষণও পান তিনি। ওই টাকায় একটি মুরগির শেড তৈরি করেন, ৫০০ বাচ্চা মুরগি কেনেন এবং তাদের খাদ্যের ব্যবস্থা করেন। মাত্র মাস দেড়েকের মধ্যে খামার থেকে ৩০ হাজার টাকার বেশি মুনাফা করেন।
সেখানেই শেষ নয়। এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আলেয়া আরও দেড় লাখ টাকা ঋণ নেন এবং একটি হলস্টিন ফ্রিজিয়ান গরু কিনে দুগ্ধ খামার শুরু করেন। ওই এনজিওর পাশাপাশি সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকেও প্রশিক্ষণ পান তিনি।
দেশের উন্নয়ন সংগঠন বা এনজিওর উপকারভোগীদের এমন ‘সাফল্য গাথা’ অনেক আছে। সেগুলো ঠাঁই পায় এনজিওগুলোর বার্ষিক প্রতিবেদন বা অন্য কোনো লেখায়। বাস্তবেও এমন লাখো নারী ও পুরুষ সুফল পেয়েছেন ক্ষুদ্রঋণের। দেশের প্রতি প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন এমন মানুষজন। বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্র্য কমাতে রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা উদ্যোগ কাজ করেছে। সেখানে ক্ষুদ্রঋণ জাদুর কাঠির মতো কাজ করেছে, এমনটা কেউ বলেন না। কিন্তু দারিদ্র্য নিরসনে ক্ষুদ্রঋণের প্রাসঙ্গিকতা এখন বাস্তবে প্রমাণিত।
গত শতকের সত্তরের দশকের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণ দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে। সেখানে আলেয়ার মতো অনেক মানুষ জীবন পাল্টে ফেলেছেন। দিন দিন ক্ষুদ্রঋণের আওতায় থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ঋণের পরিমাণ।
দেশের ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক—দুই অর্থনীতিতেই ক্ষুদ্রঋণের ভূমিকা রয়েছে। এর সার্বিক লক্ষ্য হলো দারিদ্র্য বিমোচন। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) হিসাব অনুযায়ী, কেবল ২০২২–২৩ অর্থবছরে দেশে ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৭৪ কোটি টাকার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হয়েছে। মাত্র চার বছর আগেও এর এক–চতুর্থাংশ ঋণ বিতরণ হতো।
দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য থাকলেও দেশের আয়বৈষম্য এখনো প্রকট। কোভিড–১৯ মহামারির পর দারিদ্র্য পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। নতুন করে দরিদ্র হয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এ অবস্থায় এসব নতুন দরিদ্র মানুষ ক্ষুদ্রঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রাধান্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। কিন্তু সেখানে ঋণদাতাদের ‘আগ্রহ ও উপলব্ধি’ দুই–ই কম বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, নতুন দরিদ্র এবং মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহজে ঋণ দেওয়া এখন ঋণদাতাদের বড় চ্যালেঞ্জ। আবার ক্ষুদ্রঋণের প্রথাগত পদ্ধতি পাল্টে সেখানে আধুনিকায়ন এবং প্রযুক্তির ব্যবহারের দিকেও নজর দিতে হবে।
সেই প্রত্যাশার মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ন্যায্য, শান্তিপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের জন্য একসাথে কাজ করে সামাজিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক অনাচার বন্ধ করা’।
ক্ষুদ্রঋণের ইতিহাস ও দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নয়ন
গত শতকের সত্তরের দশকের শেষ দিক থেকে দেশে ক্ষুদ্রঋণের কার্যক্রম শুরু হয়। আশির দশকের শুরু থেকে ধীরে ধীরে এর পরিসর বাড়তে শুরু করে। সে সময় ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে গ্রামীণ ব্যাংক। এরপর আশির দশকেই দেশের এনজিওর প্রসার হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে ক্ষুদ্রঋণের কর্মকাণ্ডও। দেশের চরম দরিদ্র পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সেই সময় ক্ষুদ্রঋণের বিস্তারকে একটি বড় উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য অনুযায়ী, সেই ১৯৭৩–৭৪ বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল প্রায় ৮১ শতাংশ। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে সেই হার ৬১ শতাংশের বেশি ছিল। আর সর্বশেষ (২০২২) খানা আয় ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, দরিদ্র মানুষের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১৮ শতাংশের বেশি।
আয় দারিদ্র্য থেকে বাংলাদেশের মানুষ ক্রমে যে উন্নতি করেছে, তার পেছনে সরকারি–বেসরকারি নানা তৎপরতা রয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক নানা খাতে বাংলাদেশের উন্নতি আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃতি পেয়েছে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতি অমর্ত্য সেন এবং জঁ দ্রেজের লেখা ‘অ্যান আনসারটেইন গ্লোরি: ইন্ডিয়া অ্যান্ড ইটস কনট্রাডিকশন’ বইতে সামাজিক খাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রসঙ্গটি জোরালোভাবে উঠে এসেছে। সেখানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় লিঙ্গবৈষম্য কমানো, শিশু ও মাতৃমৃত্যু রোধের মতো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যের কথাও বলা হয়েছে।
দরিদ্র ও কৃষিনির্ভর গ্রামীণ সমাজে মহাজনের ঋণ ছিল দরিদ্র মানুষের বড় ভরসা। এই ঋণের জালে আটকে থাকত পরিবারগুলো। ক্ষুদ্রঋণ প্রথম মানুষকে এই বৃত্ত থেকে বের করে আনে। ধীরে ধীরে গ্রামীণ সমাজের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আসে পরিবর্তন।
বিবিএস রুরাল ক্রেডিট সার্ভে (২০১৪) অনুযায়ী, গ্রামীণ সমাজের প্রায় ৪০ শতাংশ পরিবার সে সময় ঋণ গ্রহণ করে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৭ শতাংশ ঋণ আসে এনজিওগুলো থেকে। এর আগের জরিপের (১৯৮৭ সালে) সঙ্গে তুলনায় দেখা যায়, ২৭ বছরে এনজিও ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি।
ক্ষুদ্রঋণে নারীর প্রাধান্য
ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে উন্নয়নের ক্ষেত্রে শুরুতেই নারীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। এটি উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ঋণগ্রহীতা নারীদের জন্য যেসব গ্রুপ করত, সেখানে ১৬টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো। জীবনের শৃঙ্খলা, পরিবারের উন্নতি, সবজি চাষের মতো বিষয়গুলো এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিল। এভাবে নারীদের পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ তাঁদের সম্মান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। ক্ষুদ্রঋণ নারীর সক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে।
বিবিএস রুরাল ক্রেডিট সার্ভে (২০১৪) অনুযায়ী, ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে প্রায় ৫৯ শতাংশ ছিল ওই পরিবারের নারী। দিন দিন নারী ঋণগ্রহীতার সংখ্যা আরও বেড়েছে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের নিবন্ধিত ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী। এর সামাজিক গুরুত্ব আছে। তবে জেন্ডার অন্তর্ভুক্তির বাইরে বিপুলসংখ্যক নারীর ঋণগ্রহণের একটি অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে। পরিবারের আয় এবং সার্বিক উন্নয়নে এর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা আছে।
এমআরএর নির্বাহী পরিচালক (রেগুলেশন ও গবেষণা) মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন বলছিলেন, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীকে প্রাধান্য দেওয়ার সামাজিক সুফল আমরা পেয়েছি। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে এর ভূমিকা আছে।
বৈষম্য নিরসন করতে পারে ক্ষুদ্রঋণ
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুসারে, আয়ের জিনি সহগ (যা আয়বৈষম্যের একটি জনপ্রিয় পরিমাপ) ২০০০ সালে শূন্য দশমিক ৪৫০ থেকে ২০২২ সালে শূন্য দশমিক ৪৯৯-তে পৌঁছেছে। সম্পদের বৈষম্যের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও খারাপ। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ বাংলাদেশি জাতীয় সম্পদের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশের মালিক ছিলেন। আর সবচেয়ে দরিদ্র ৫০ শতাংশ মানুষের মালিকানা ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৬ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলছিলেন, দুই দশকে দেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হলেও বৈষম্য বেড়েছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত অনেকেই দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছে। সেখানেই বৈষম্য বেড়েছে। তবে দেশের উন্নয়নে অনেকগুলো শর্তের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের একটা ভূমিকা ছিল, তা অস্বীকার করা যায় না। তাই বৈষম্য নিরসনে সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন, সুশাসনের বিকল্প নেই। সেখানে ক্ষুদ্রঋণ সহায়ক ভূমিকা নিতে পারে। কিন্তু সার্বিকভাবে উন্নয়নের অন্য শর্ত পূরণ দরকার।
দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটলেও আয়বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান। কোভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশের একটি বড় অংশের মানুষ নতুন করে দরিদ্র অবস্থায় পড়েছে। ক্ষুদ্রঋণ কি সীমাহীন বৈষম্য রোধে ভূমিকা পালন করতে পারে?
এমআরএর এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতারা সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ। কিন্তু তাঁরা ঋণ নিয়ে ঋণ ফেরত দেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত ধনীরা বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে ফেরত তো দেনই না বরং অনেকেই তা বিদেশে পাচার করেন। বৈষম্য তো এভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। এখন যদি ক্ষুদ্রঋণের প্রবাহ বাড়ানো যায়, তবে এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মানুষ লাভবান হবেন, তাঁদের সঞ্চয় বাড়বে। এতে বৈষম্যও কমতে পারে।
মাঝারি উদ্যোগ ও নতুন দরিদ্রদের দিকে নজর
রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার সেরুদাঙ্গা গ্রামের ছেলে মো. গোলাপ মিয়া। কৃষিতে ডিপ্লোমা করার পর তিনি স্থানীয় একটি কৃষি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। পরে জাতীয় এবং জাতীয় থেকে বহুজাতিক কোম্পানিতে কাজ করেন। নিজের কাজ এবং ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি ছিলেন খুবই সন্তুষ্ট।
কিন্তু তাঁর উজ্জ্বল ক্যারিয়ার ধ্বংস হয় ২০২০ সালে কোভিড–১৯ আসার পর। তিনি চাকরি হারান। কয়েক মাস বাড়িতে পড়ে থাকার পর তিনি স্থানীয়ভাবে চাকরির চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষে এক বন্ধুর মধ্যস্থতায় তিনি টাঙ্গাইলের একটি ড্রাগন ফলের বাগানে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি পান। নতুন চাকরিতে তাঁর বেতন তেমন বেশি ছিল না। তাই তিনি খুব খুশি ছিলেন না। তবে এই চাকরি তাঁকে নতুন পথের সন্ধান দিল। কৃষিতে ডিপ্লোমা থাকা মানুষটি ভাবলেন, তিনি নিজেই ড্রাগন ফলের বাগান করবেন। স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে শুরু হলো নতুন যাত্রা।
এখন গোলাপ মিয়ার মাসিক আয় প্রায় এক লাখ টাকা। তিনি মোট পাঁচজনকে নিয়োগও দিয়েছেন বাগানে। গোলাপ বলেন, ‘আর চাকরি হারানোর ভয় নেই, আমি নিজেই চাকরি তৈরি করি।’
এভাবে চাকরি তৈরি করা এখনকার সময়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষুদ্রঋণের সেই ভূমিকাই থাকা উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলছিলেন, দারিদ্র্যের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। আয় দারিদ্র্য তো আছেই, এর সঙ্গে পুষ্টি দারিদ্র্য ও নতুন কর্মসংস্থান বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই এখন ব্যক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি ক্ষুদ্রঋণের লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মসংস্থান যাতে হয়, সেদিকে নজর দেওয়া।
দেশের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের শুরুর দিকে এর প্রায় সব গ্রাহক ছিলেন দরিদ্র মানুষ। দারিদ্র্য নিরসন করাই ছিল এ ঋণ দেওয়ার উদ্দেশ্য। ব্যক্তিকে সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু দেশের অর্থনীতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ঋণদানের গতিপ্রকৃতিরও পরিবর্তন হয়েছে। দেশে এখন উদ্যোক্তা শ্রেণির পরিবর্তন হয়েছে। মাঝারি উদ্যোক্তারা এখন ক্ষুদ্রঋণের বড় গ্রহীতা।
এমআরএর নির্বাহী পরিচালক (রেগুলেশন ও গবেষণা) মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন, এখন ঋণদানের বিধান পরিবর্তন করে মাঝারি উদ্যোক্তাদের মোট ঋণের ৬০ শতাংশ দেওয়া হয়। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা পান বাকিটা। এখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকাও ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়।
মাঝারি উদ্যোক্তাদের নজরে নিয়ে আসার পাশাপাশি কোভিডের অভিঘাতে পড়া বিপুলসংখ্যক মানুষের দিকে ঋণদাতাদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। তবে তা যথেষ্ট মাত্রায় নেই বলেই মনে করেন হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ক্ষুদ্রঋণের প্রক্রিয়া অনেকটা জটিল। সেই প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং সেখানে প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার।
এনজিওগুলো নতুন দরিদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট নজর দিচ্ছে না বলেই মনে করেন বেসরকারি সংগঠন এসকেএস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী রাসেল আহম্মেদ। তিনি বলেন, এ সময়ে এই দুই চ্যালেঞ্জ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিতেই হবে। প্রযুক্তির সহায়তা আমরা নিচ্ছি। তা এখনো হয়তো যথেষ্ট নয়।