তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র বাঙালির আত্মপরিচয়ের সব দিক তুলে ধরে

চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ স্মরণসভায় আলোচক ও অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

বাঙালির আত্মপরিচয়ের সব দিক তুলে ধরে তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র। তিনি অকালপ্রয়াত না হলে দেশের চলচ্চিত্র আরও সমৃদ্ধ হতো। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের পরম্পরা রক্ষা করতে হলে তারেক মাসুদসহ খ্যাতিমান অন্যান্য চলচ্চিত্রকারের ভাব–ভাবনাকে পাঠ্যপুস্তকে স্থান দিতে হবে।

তারেক মাসুদের ১২তম প্রয়াণদিবস উপলক্ষে স্মরণসভা ও স্মারক বক্তৃতায় উঠে এল এসব কথা। রোববার জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে তারেক মাসুদ স্মরণে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল তারেক মাসুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ও ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি।

আলোচনার আগে প্রদর্শিত হয় শিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে তারেক মাসুদ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন চলচ্চিত্র–গবেষক ফাহমিদুল হক। ‘আত্মপরিচয়ের রাজনীতি ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’ শীর্ষক প্রবন্ধে দেশের চলচ্চিত্রের ধরন সম্পর্কে আলোচনা করেন তিনি।

ফাহমিদুল হক বলেন, বাঙালিত্ব, মুসলমানিত্ব, জনধর্ম ও রূপান্তর—এই চার ভাগে দেখতে হবে চলচ্চিত্রকে। এর মধ্যে প্রথম তিন ধরন পাওয়া যাবে তারেক মাসুদ নির্মিত ‘মাটির ময়না’ চলচ্চিত্রে।

প্রবন্ধ পাঠ ছাড়াও ফাহমিদুল হক ব্যক্তি তারেক মাসুদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও দর্শনগত মনোভাব নিয়ে আলোচনা করেন। উঠে আসে সক্রিয় চলচ্চিত্রকারের মতাদর্শিক বিবর্তন ও সক্রিয় থাকার কথা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি তত্ত্ব ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁর বক্তব্যে এসেছে ‘লালসালু’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘খেলাঘর’, ‘মেহেরজান’সহ ১০টি চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ।

ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা বেলায়াত হোসেন বলেন, তারেক মাসুদের কাজের প্রস্তুতির চেয়ে নিজের প্রস্তুতি ছিল অনেক বেশি। এক যুগ আগে তিনি এই দিনে প্রয়াত না হলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ হতো। পাঠ্যপুস্তকে তারেক মাসুদের মতো দেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রসঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

তারেক মাসুদ স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন তাঁর ভাই নাহিদ মাসুদ। তাঁর কথায় উঠে আসে, তাঁদের মায়ের কাছে শোনা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতি। তিনি বলেন, তারেক মাসুদ তখন ছোট। ওই বয়সেও কানে রেডিও নিয়ে যুদ্ধের খবর শুনে উদ্বিগ্ন হতেন। তারেক মাসুদ তাঁর সেই মানসিকতাই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বয়ে বেড়িয়েছেন। এ জন্যই তাঁর চলচ্চিত্রে দেশের কথা এসেছে বারবার।

তারেক মাসুদের সহকর্মী মো. শাহ আলম দেওয়ানের কথায় উঠে আসে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যুর কথা। সেদিন তারেক মাসুদের বাসায় থাকা শাহ আলম বলেন, ‘তারেক ছিলেন সুন্দর মানুষ, নিজের সৃজনশীলতা রেখে গিয়েছেন আমাদের জন্য।’

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের শিবালয়ে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন। ‘কাগজের ফুল’ চলচ্চিত্রের শুটিং শেষে ঢাকা ফেরার পথে ঘটে এ দুর্ঘটনা।