তিন কবিতা

সোহরাব হাসান

অজ্ঞাতনামা শহীদের জবানবন্দি

জুলাইয়ের মিছিলে তোমাগো লগে আমিও ছিলাম

অদ্য আমার ঠিকানা বেওয়ারিশ লাশের কাতারে।

হেই দিন স্লোগানে মাতাল মিছিলটি মহাসড়কে

বাঁক লইতেই ঠা ঠা গুলির আওয়াজ; আর মিছিলের

শেষ ভাগে থাকা রোগাপটকা যেই ছেলেটি গুলি খাইল, সে আমি।

পাশে থাকা দুইজন রক্তভেজা শরীর হাসপাতালে লইয়া গেলে

ডাক্তার জানতে চাইলেন, নাম কী?

কেউ তো আমারে চেনে না, নাম বলবে কী!

অতঃপর আঞ্জুমান মুফিদুল আমার দাফন–কাফনের ব্যবস্থা করে

নতুন কাপড়, সাবান–লোবানের আয়োজনে ঘাটতি ছিল না

সেই থেকে অজ্ঞাতনামা শহীদের তালিকায় আমি আছি।

এই যে মাসের পর মাস ধইরা সংবিধান, সংস্কার আর

গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ লইয়া বিস্তর বাহাস হইতেছে

একের পর এক কাণ্ডকারখানা ঘটিতেছে দেশে

কবরখানার অন্ধকারেও আমি সব টের পাই।

আমার বাপ–মা জানেন না, তাঁদের সন্তানের নাম

শহীদের মর্যাদাপূর্ণ তালিকায় উঠেছে; তাঁরা জানেন

তাঁদের ছাওয়াল ঢাকায় যাইয়া চিরতরে হারাইয়া গেছে

কেউ জিজ্ঞাস করলেন মা কান্দে, বাবা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন।

কামরুজ্জামান কামু

আবু সাঈদ

আবু সাঈদের বুক থেকে
ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্ত
ছিটকে পড়েছে দেশ থেকে
উপমহাদেশে— 


কোলকাতায়—আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর, অরুণাচলে, নাগাল্যান্ডে, মেঘালয়, মিজোরাম—পাকিস্তানে—

আহা!

আর জন্মে আমি
আবু সাঈদের মায়ের কোলে
জন্ম নিতে চাই!

২২ আগস্ট ২০২৪

রোজেন হাসান

ফেনী

পানির মধ্যে ঘুরি

লাশ নিয়ে

কোথায় কবর

মাটি কোথায়?

চারিদিকে পানি আর পানি

কূল নাই যেন দরিয়া

এত পানি রে ভাই 

তোরে গোর দেওয়ার মাটি নাই

পানির মধ্যে ঘুরি

লাশ নিয়ে

মাটি কোথায়?

ভাইকে দিতে হবে কবর।