কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ, বই প্রত্যাহারের কথা বললেন প্রকাশক

‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন’ নামের বইয়ে ২০২৩ সালের সংশোধিত সংস্করণে আরেক বইয়ের মোট ৭০ পৃষ্ঠার তথ্য, ছবি, চিঠি ও দলিল ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে অভিযোগ জানানোর পর প্রকাশক ও লেখককে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

সরাফ আহমেদের লেখা ‘১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড প্রবাসে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যার দুঃসহ দিন’ বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০২১ সালে, প্রথমা প্রকাশন থেকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছিলেন বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে। সেই সময় বেলজিয়াম, জার্মানি, ভারত ও ব্রিটেনে তাঁদের দুঃসহ দিনের বর্ণনা নিয়েই মূলত এ বই। লেখকের অভিযোগ, এ বইয়ের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে ‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন’ বইয়ে।

আসাদুজ্জামানের লেখা ‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন’ বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে। এর সংশোধিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালে আগামী প্রকাশনী থেকে। প্রথম সংস্করণে বইয়ের মূল্য ছিল ৬০০ টাকা। পরবর্তী সংস্করণে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকা। বইটি মূলত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার শিক্ষাজীবন, রাজনৈতিক সূত্রপাত, কর্মজীবন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারে তাঁর ভূমিকা, ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

সরাফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন’ বইয়ের নতুন সংস্করণের (২০২৩) সপ্তম ভাগে প্রায় ৭০ পৃষ্ঠা নকল করা হয়েছে। তিনি জানান, এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে লিখিতভাবে অভিযোগ পাঠিয়েছেন তিনি। এই চিঠিতে উল্লেখ আছে—‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন’ ২০২৩ সালে প্রকাশিত সংশোধিত সংস্করণের ১৫৮ থেকে ২৭০ পৃষ্ঠার মধ্যে ব্যবহার করা সব তথ্য, একাধিক ছবি, চিঠি ও দলিল চিত্র কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করে তাঁর বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, যেকোনো গবেষণাগ্রন্থে নতুন তথ্য সংযোজন বা বিশ্লেষণের প্রয়োজনে রেফারেন্স হিসেবে উদ্ধৃতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আলোচ্য অধ্যায়ে কোনো নতুন তথ্য সংযোজন করা হয়নি। তাই তা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন।
এ অভিযোগ আমলে নিয়ে ‘বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মময় জীবন’ বইয়ের নতুন সংস্করণের প্রকাশক আগামী প্রকাশনী এবং লেখক আসাদুজ্জামানকে ৪ ফেব্রুয়ারি চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস। লেখক ও প্রকাশককে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে তাঁদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। অন্যথায় কপিরাইট আইন ২০২৩ অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস কর্তৃপক্ষ।

জানতে চাইলে লেখক আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠি পেয়েছি। কপিরাইট অফিসের চিঠির উত্তর দিয়ে এ প্রসঙ্গে আমি কথা বলব।’
চিঠি এখনো পাননি জানিয়ে আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক সময়ই বইয়ের ভেতরের তথ্য উৎস সম্পর্কে প্রকাশকের পক্ষে খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না। ব্যাপারটা শুনে বিব্রত হয়েছি। এমন অভিযোগ এলে আমি এখনই বই প্রত্যাহার করে নেব।’

প্রকাশক বই প্রত্যাহার করলে সে ক্ষেত্রে এ বই নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে। বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার মো. দাউদ মিয়া এনডিসি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশক বই প্রত্যাহার করলে প্রাথমিকভাবে তার দায় শুধু লেখকের ওপরে যায়। তবে ব্যাপারটি তদন্ত প্রক্রিয়ায় আছে। প্রকাশক সৎ উদ্দেশ্যে বইটি প্রকাশ করেছেন, নাকি কোনো নেতিবাচক কারণে প্রকাশ করেছেন, তা দেখতে হবে। এরপর আসবে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি। বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের নীতিমালা অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।