প্রয়োজনে এখান থেকে ধরা হবে আর কারাগারে পাঠানো হবে: হাইকোর্ট

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

সার আত্মসাতে জড়িত ব্যক্তিদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের নমনীয়তা দেখানো হবে না। প্রয়োজনে এখান থেকে (কোর্ট) ধরা হবে আর কারাগারে পাঠাব।’

সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান নিয়ে অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে আদালত এ কথা বলেছেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানি হয়।

‘আত্মসাৎ ৫৮২ কোটি টাকার সার’ শিরোনামে গত ৪ জানুয়ারি প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আসার পর গত ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। হাইকোর্ট গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চার মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ওই অভিযোগ অনুসন্ধান করে শিল্পসচিব ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) চেয়ারম্যানকে চার মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।  

আদালতে বিসিআইসির পক্ষে আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব, দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ শুনানিতে ছিলেন।

শুনানিতে বিসিআইসির আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব বলেন, প্রতিবেদন এসেছে, তবে হলফনামা করতে পারেনি। আদালতের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে অভিযোগ উঠেছে, তা প্রথম আলোর প্রতিবেদনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

বিসিআইসির আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ওই ঘটনায় কারা জড়িত?  নাম–ঠিকানা পাওয়া যায়নি? মানুষ আত্মসাৎ করেনি? তাহলে বাতাস খেয়ে ফেলেছে? তদন্ত প্রতিবেদনে নাম উল্লেখ না থাকলে এর কী দাম আছে? এ সময় বিসিআইসির আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব বলেন, আত্মসাৎ হয়েছে। আদালত বলেন, সুনির্দিষ্ট করে বলেন। তখন বিসিআইসির আইনজীবী বলেন, মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের পোটন নিজে জড়িত। আদালত বলেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না, সে যে–ই হোক।

শুনানিতে অগ্রগতি জানাতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান এক দিনের সময়ের আরজি জানান। এই পর্যায়ে আদালত আগামী রোববার শুনানির দিন রাখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। তখন বিসিআইসির আইনজীবী মোল্লা কিসমত হাবিব বলেন, অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি অনেক পৃষ্ঠার, হলফনামা করে আগামী রোববার দাখিল করা প্রায় অসম্ভব। অবকাশ শেষে দিন রাখার আরজি জানান তিনি। পরে আদালত আগামী ৯ জুলাই শুনানির পরবর্তী দিন রাখেন।  

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারিভাবে আমদানি করা ৭২ হাজার মেট্রিক টন রাসায়নিক সার বন্দর থেকে খালাসের পর গুদামে পৌঁছে না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে পরিবহনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পোটন ট্রেডার্স। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৫৮২ কোটি টাকা। মেসার্স পোটন ট্রেডার্স সাবেক সংসদ সদস্য কামরুল আশরাফ খানের (পোটন) মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। কামরুল আশরাফ খান সার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) সভাপতি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দাবি, তিনিই মূলত দেশে সারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পোটন ট্রেডার্স যে সার আত্মসাৎ করেছে, তা উঠে এসেছে সারের আমদানিকারক শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি প্রতিষ্ঠান বিসিআইসির দুটি তদন্তে। সারগুলো খালাস হয়েছিল ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৫ মের মধ্যে। সার সরবরাহ না করার পর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি বিসিআইসি। সর্বশেষ গত বছরের ২০ ডিসেম্বর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে বিসিআইসির পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন