গানের সুরে কবিতার ছন্দে আনন্দময় বৃক্ষরোপণ উৎসব

বৃক্ষরোপণ উৎসবের মধ্য দিয়ে স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন কার্যক্রমের সূচনা করে সংগীত সংগঠন ‘সুরের ধারা’। মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানাসহ অতিথি ও আয়োজকেরা। শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের পাশে রামচন্দ্রপুরেছবি: প্রথম আলো

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃক্ষকে বলেছিলেন ‘মহাপ্রাণ’। তাই তো রবীন্দ্র ভাবধারায় পরিপুষ্ট সংগীত সংগঠন ‘সুরের ধারা’ তাদের স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন কার্যক্রমের সূচনা করেছে বৃক্ষরোপণ উৎসবের মধ্য দিয়ে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের (ভাঙ্গা মসজিদ–সংলগ্ন) পাশে রামচন্দ্রপুরে সুরের ধারার ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা স্থানে আজ শুক্রবার বিকেলে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। হরেক রকমের গাছের চারা রোপণের পাশাপাশি আলোচনা, নৃত্য, গীত ও আবৃত্তিতে মুখর ছিল এ অনুষ্ঠান।

তিন দশক ধরে বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা সুরের ধারার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। সংগীতশিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মূলধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় যুক্ত করাসহ দেশের সংস্কৃতির বিকাশে ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

গাছের চারা রোপণ করে বৃক্ষরোপণ উৎসবের সূচনা করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা
ছবি: প্রথম আলো

সুরের ধারার নিজস্ব ভবন নির্মাণের জন্য সম্প্রতি ওই জমি বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের উৎসবে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। তিনি প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া ‘ফিরে চল মাটির টানে’ গানের সঙ্গে দুটি ফুলগাছের চারা রোপণ করে বৃক্ষরোপণ উৎসবের সূচনা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরু হয় সুরের ধারার শিল্পী ও শিক্ষার্থীদের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসন ও অধ্যক্ষ রেজওয়ানা চৌধুরী অতিথিদের মঞ্চে উত্তরীয় পরিয়ে স্বাগত জানান এবং তাঁদের নিয়ে ‘আলোকে মঙ্গলালোকে’ গানের সুরের সঙ্গে প্রদীপ প্রজ্বালন করেন। পরে ছিল আলোচনা।

অতিথিদের আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে ছিল সম্মিলিত কণ্ঠে গান, আবৃত্তি ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা থেকে পাঠ। পাঠ ও আবৃত্তিতে পরিবেশন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।

স্বাগত বক্তব্যে রেজওয়ানা চৌধুরী বলেন, সুরের ধারার জন্য আজ একটি বিশেষ দিন। এ দিনের বহু অপেক্ষা করতে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনের রুক্ষ মাটিতে গাছ লাগিয়ে বৃক্ষরোপণ উৎসবের সূচনা করেছিলেন। সুরের ধারার নতুন ঠিকানার কার্যক্রমও শুরু হলো বৃক্ষরোপণ করে। এখানে বৃক্ষশিশু ও মানবশিশু পরিবেশবান্ধব সম্পর্ক নিয়ে বেড়ে উঠবে।

জমি বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রেজওয়ানা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সুস্থ, সুন্দর, মানবিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশ গড়ে তুলতে চাই। নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই সংস্কৃতিবোধ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সুরের ধারা কাজ করে যাবে।’

অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত ভৌগোলিকভাবে যেমন পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত, তেমনি অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও উত্তরাধিকারী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান-কবিতা দুই দেশের মানুষকেই নানাভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহায়তার উল্লেখ করে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়েছে। তিনি সুরের ধারার এই নতুন উদ্যোগের সাফল্য কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে আলোচনার মাঝে সম্মিলিত কণ্ঠে গান, আবৃত্তি ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা থেকে পাঠের আয়োজন ছিল
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানান, ঢাকায় পরিবেশ শীতল রাখতে আগামী দুই বছরে দুই লাখ চারা রোপণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে স্থায়ী কার্যালয়ের স্থাপন কার্যক্রম শুরু করায় তিনি সুরের ধারার রেজওয়ানা চৌধুরীর প্রশংসা করেন।

এ সময় সামিট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, দেশের সাংস্কৃতিক চর্চার বিকাশে শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী তাঁর প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কঠোর পরিশ্রমের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। এখন তাঁদের একটি নিজস্ব ঠিকানা হলো।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ, রসিন ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কোম্পানির প্রধান নির্বাহী এস এম শাহিনুজ্জামান প্রমুখ।