শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে বিনোদন পেতে। এর অবাধ ব্যবহারের কারণে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ গেল এক পক্ষের যুক্তি। আরেক পক্ষের যুক্তি হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাকে এগিয়েও নিচ্ছে। প্রযুক্তির খারাপ দিক পরিহার করে ভালো দিক ব্যবহার করতে হবে।
এভাবেই পাল্টাপাল্টি যুক্তিতে আজ শুক্রবার পুরো দিন পুরান ঢাকায় স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিতর্ক করেছে। দিন শেষে ট্রফি নিয়ে ফিরেছে একটি দল।
নিজেদের জ্ঞান অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করতে এবং যুক্তিতে দক্ষ করে তুলতে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব। লক্ষ্য দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সেরা বিতার্কিকদের তুলে আনা। রাজধানীর পুরান ঢাকার সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ আঞ্চলিক পর্বের আয়োজন হয়েছে।
প্রতিযোগীদের শুভকামনা জানিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ নীলুম মৃ।
বিতর্কের শেষ পর্বের বিষয় ছিল প্রাথমিক পর্যায়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রীড়াশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এর পক্ষে ছিল উদয়ন উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দল এবং বিপক্ষে ছিল কামরুন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে এতে বিজয়ী হয় কামরুন্নেসার দলটি।
বিজয়ী দলের দলনেতা সায়মা মাহবুবের বিতর্ক পছন্দ। নবম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী জানায়, সে তার না বলতে পারা কথাগুলো বিতর্কের মাধ্যমে উপস্থাপন করার সুযোগ পায়। বিতর্ক দিয়ে যুক্তির মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা যায়। সায়মা সাংবাদিক হতে চায়। কারণ, সঠিক তথ্যের খুব অভাব। চারদিকে গুজব অনেক। তাই মানুষকে সঠিক তথ্য দিতে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার স্বপ্ন তার।
বিতর্কের সমাপনীতে এসে প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, বিতর্ক, নাচ–গানের মতো বিষয় মানুষের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তাদের মধ্য থেকেই কেউ দেশকে নেতৃত্ব দেবে। তাদের খবর পড়তে হবে, পৃথিবীকে জানতে হবে। এই শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি যত বড় হবে, বাংলাদেশ তত এগিয়ে যাবে।
বিচারকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
বিতর্ক ছাড়াও ছিল কুইজের আয়োজন। এতে চ্যাম্পিয়ন হয় যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাহিম আহমেদ। ফাহিম বিতর্কেও অংশ নিয়েছিল। ফাহিম প্রথম আলোকে বলে, বিতর্ক ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়।
আয়োজনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারিক মনজুর বলেন, ‘বিতর্ক দিয়ে পরস্পরকে সহায়তার মাধ্যমে জ্ঞানকে এগিয়ে নেওয়া যায়। বিতর্কের শিক্ষা জীবনকে অনেক এগিয়ে নেয়।’ তিনি আরও বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে বিতর্ক রাখা হয়েছে, সামনে অন্য শ্রেণিতেও তা থাকবে।
প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান বলেন, ‘সৃজনশীল হতে হবে, প্রশ্ন করতে হবে। যুক্তি দিয়ে তর্ক করতে হবে।’ শিক্ষার্থীদের বর্তমান সময়কে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের বইপড়ার ওপর জোর দেন তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বিতর্ক নিয়ে নানা পরামর্শ ও প্রশ্নের উত্তর দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি উত্তম রায়, প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক রাশেদুল আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি সৈয়দ আশিক। তাঁদের সঙ্গে চূড়ান্ত পর্বে বিচারক হিসেবে আরও ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক নাজমুল হুদা, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাশ গুপ্ত, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির তাসফিয়া বৃষ্টি।
পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা করছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। প্রচার সহযোগী হিসেবে আছে নাগরিক টেলিভিশন। আয়োজনটির সমন্বয় করছেন সাইদুজ্জামান রওশন।
সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে আয়োজিত বিতর্ক পর্বে ১৫টি স্কুল অংশ নেয়। রানার্সআপ ও চ্যাম্পিয়ন দুই দলের স্কুল ছাড়াও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কটন মিল আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়, ইসলামিয়া সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, হাজারীবাগ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আনন্দময়ী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, রায়হান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
দ্বিতীয়বারের মতো এই বিতর্ক উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সারা দেশে ৩৫টি জেলা ও রাজধানীতে ৫টি আঞ্চলিক বিতর্ক উৎসব হচ্ছে। এবারের বিতর্ক হচ্ছে সনাতন পদ্ধতিতে।