বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভায় বক্তারা
ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক চাইলে হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে হবে
ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে একটা ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক চায়, তাহলে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার দাবির ওপর ভিত্তি করে ভারসাম্যমূলক সম্পর্কের সূচনা হতে হবে। তাঁকে রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে ভারতে রেখে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক সম্ভব নয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত ‘ফেলানী হত্যা থেকে ডামি নির্বাচন: কেড়ে নেওয়া স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বাংলামোটরে নিজেদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভার আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ফেলানী হত্যার ১৪ বছর ও ডামি নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর–দিনহাটা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী খাতুন। তার লাশ দীর্ঘ সময় ঝুলে ছিল কাঁটাতারের বেড়ায়।
ফেলানির ঝুলন্ত লাশের ছবিটিকে ‘বাংলাদেশের মানচিত্রের ছবি’ হিসেবে উল্লেখ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ফেলানী শুধু একটি নাম নয়, ফেলানী বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। সবাইকে ‘ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ ও হেজিমনির (আধিপত্য)’ বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের আহ্বান জানান তিনি।
১৫ বছর ধরে ভারত বাংলাদেশকে উপনিবেশ বানিয়ে রেখেছিল বলে অভিযোগ করেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের সঙ্গে একটা ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক চায়, তাহলে অবশ্যই শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। যাতে তাঁর বিচার বাংলাদেশে করা যায়। এটাই হবে ভারতের কাছে ন্যূনতম দাবি। এ দাবির ওপর ভিত্তি করে ভারসাম্যমূলক সম্পর্কের সূচনা হতে হবে। যত দিন ভারত শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে না দেবে, তত দিন তারা শত্রুরাষ্ট্র হিসেবে গণ্য হবে। ভারতে বসে নানা ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাসিনা।
মাহমুদুর রহমান বলেন, জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেশপ্রেমের সঙ্গে ধর্মপ্রেম জড়িত হয়েছে। ...এ বিপ্লবে সেক্যুলার আদর্শে বিশ্বাসী তরুণ জীবন দিয়েছেন, এ বিপ্লবে ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী তরুণ জীবন দিয়েছেন। এ বিপ্লবের সবচেয়ে মহৎ জায়গাটা হলো, এই প্রথম বাংলাদেশে এমন একটা বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, যে বিপ্লবে কোনো বিদেশির সাহায্য নেওয়া হয়নি। তরুণেরা কোনো বিদেশি শক্তির দিকে তাকিয়ে বিপ্লব করেননি।
সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা ও তাঁর দলের নেতাদের জায়গা দিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা–উদ্বেগে পরিণত হয়েছে ভারত। শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে ভারতে রেখে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি সম্ভব নয়।
এ আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল। সঞ্চালক ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান।
সভাপতির বক্তব্যে আরিফ সোহেল বলেন, ২০১৩-১৪ সালের প্রগতিশীল বনাম মৌলবাদী রাজনীতি আবার বাংলাদেশে নিয়ে আসার ষড়যন্ত্র চলছে। এটাকে অবশ্যই নস্যাৎ করে দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বিভিন্ন মতানৈক্য থাকবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পক্ষ তাদের নিজেদের রাজনীতি করবে, কিন্তু আমরা আশা করব বাংলাদেশে সামনের দিনে সবার রাজনীতি হবে জনগণপন্থী ও বাংলাদেশপন্থী।’