তিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আপাতত ১৫ শতাংশ আয়কর আদায় করা যাবে না    

সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি

বেসরকারি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দাবির ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। একই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওই দাবি ঘিরে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের করা আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ২১ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম আজ সোমবার এ আদেশ দেন।  

এর আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ে দুটি প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা পৃথক আপিল নিষ্পত্তি করে আপিল বিভাগ ওই রায় দেন।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক আইনজীবীরা তথ্য অনুসারে, আয়কর আইনের বিধান অনুসারে বকেয়া পরিশোধের (আয়কর) জন্য ৪ মার্চ বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর নোটিশ (চিঠি) দেয় এনবিআর। ১৫ শতাংশ আয়কর না দেওয়ার অভিযোগ তুলে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিতও করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক তিনটি আবেদন করে, যা আজ চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।    

বিশ্ববিদ্যালয় তিনটি হচ্ছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, দ্য ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।    

আদালতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, ফিদা এম কামাল ও মুরাদ রেজা এবং আইনজীবী ওমর সাদাত শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।  

আদেশের পর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের আইনজীবী ওমর সাদাত প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আয়কর প্রযোজ্য হবে কি না, সে বিষয়ে আপিল বিভাগ গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষের করা আপিল নিষ্পত্তি করে এই রায় দেওয়া হয়। তবে কী মর্মে আপিল নিষ্পত্তি করা হয়েছে, তা ঘোষিত রায়ে বলা হয়নি। লিখিত আকারে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বকেয়া আয়কর বাবদ টাকা দাবি করে এবং কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে দেয়। ঈদের আগে ব্যাংক হিসাব স্থগিত করায় বেসরকারি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় চেম্বার আদালতে আবেদন করে। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগে এনবিআরের দাবির ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়। চেম্বার আদালত আবেদনগুলো শুনানির জন্য ২১ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এ পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। ফলে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আয়কর বাবদ টাকা আপাতত আদায় করা যাবে না।

বেসরকারি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শতকরা ১৫ ভাগ হারে আয়কর আদায়ের জন্য ২০০৭ সালের ২৮ জুন ও ২০১০ সালের ১ জুলাই পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এর বৈধতা নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও এক শিক্ষার্থীর করা পৃথক ৪০টির বেশি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ শতাংশ হারে আয়কর আদায়ের দুটি প্রজ্ঞাপন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ওই দুই প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শতকরা ১৫ ভাগ হারে রিট আবেদনকারী যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে আয়কর বাবদ অর্থ আদায় করা হতো, তা ফেরত দিতে সরকার ও এনবিআরকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন। এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক ৪৫টি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক ৪৫টি আপিল করে, যার ওপর শুনানি শেষে ২৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেওয়া হয়।