নিরাপত্তায় একজন আনসার নিলে দিতে হবে ৩০০ ডলার

অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য আনসারের গাড়ি নিলে মাসে ১ হাজার ডলার বা ১ লাখ ৭ হাজার টাকা খরচ করতে হবে দূতাবাসকে।

রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে প্রয়োজন মনে করলে বিদেশি দূতাবাস, সংস্থা ও কূটনৈতিক মিশনগুলো নির্ধারিত টাকার বিনিময়ে এখন থেকে আনসার বাহিনীর মাধ্যমে অতিরিক্ত নিরাপত্তা (এসকর্ট) নিতে পারবে। এ-সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করে দূতাবাসগুলোকে জানিয়েছে সরকার। কোনো দূতাবাস যদি অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষিত একজন আনসার সদস্যকে নিতে চায়, তাহলে মাসে ৩০০ মার্কিন ডলার বা ৩২ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, দূতাবাসগুলো প্রয়োজন মনে করলে নিরাপত্তার কাজে আনসার ব্যাটালিয়ন থেকে গাড়িও ভাড়া নিতে পারবে। একটি গাড়ির জন্য প্রতি মাসে ১ হাজার ডলার বা ১ লাখ ৭ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। তবে শর্ত হলো, গাড়ির জ্বালানি খরচ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা সংস্থাকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে ১৮ মে ঢাকায় বিভিন্ন দেশের দূতাবাসকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কূটনৈতিক পত্রে দূতাবাসগুলোকে অতিরিক্ত নিরাপত্তার বিষয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালকের (অপারেশনস) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

আমাদের আনসার রেজিমেন্ট গার্ড অত্যন্ত চৌকস ও দক্ষ। তাদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত যদি মনে করেন তাঁদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে, তবে তাঁরা টাকার বিনিময়ে আনসার নিতে পারবেন।
আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিক পত্রে আরও বলেছে, কূটনৈতিক সম্পর্কসংক্রান্ত ভিয়েনা কনভেনশন ১৯৬১ এবং ভিয়েনা কনভেনশন অন কনস্যুলার রিলেশনস ১৯৬৩ অনুযায়ী, কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার মিশনগুলো এবং তাদের প্রতিনিধিদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার যথাযথভাবে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে চলছে।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গত মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের আনসার রেজিমেন্ট গার্ড অত্যন্ত চৌকস ও দক্ষ। তাদের প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত যদি মনে করেন তাঁদের অতিরিক্ত নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে, তবে তাঁরা টাকার বিনিময়ে আনসার নিতে পারবেন। খরচ দিতে হবে দূতাবাস বা মিশনগুলোকে।’

এখন পর্যন্ত কোনো দূতাবাসের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য আনসার চাওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ চাননি। তবে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ মৌখিকভাবে বলেছে, তারা আনসারের নিরাপত্তা নিতে আগ্রহী।

রাষ্ট্রদূতদের মুভমেন্টের (রাস্তায় চলাচল) জন্য যদি নিরাপত্তা দিতে হয়, তাহলে পুলিশের মাধ্যমেই কাজটি করা উচিত। কারণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে পুলিশ যুক্ত, আনসার নয়। আবার যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বা সড়ক ব্যবস্থাপনায় আনসারের প্রশিক্ষণ নেই।
মো. তৌহিদ হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্রসচিব

১৫ মে অনেকটা আকস্মিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান ও ভারত—এই চার দেশের রাষ্ট্রদূতদের দেওয়া বাড়তি পুলিশি নিরাপত্তা (এসকর্ট) প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। দূতাবাসগুলোকে আগাম কিছু না জানিয়ে হঠাৎ করে নেওয়া সরকারের এমন সিদ্ধান্তে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের অনেকে বিস্মিত হন। বিষয়টি নিয়ে একাধিক দূতাবাস তাদের হতাশার কথা অনানুষ্ঠানিকভাবে ইতিমধ্যে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জানিয়েছে।

পরে ১৬ মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে বলেছে, কয়েক বছর আগের একটি ঘটনায় কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিককে ট্রাফিক মুভমেন্টে (রাস্তায় চলাচল) সহায়তার জন্য বাড়তি কিছু লোকবল দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং নিয়ন্ত্রণে আছে। তাই বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার আবশ্যকতা নেই। পাশাপাশি পুলিশ বাহিনীর কার্যপরিধি বৃদ্ধির জন্য এই বাড়তি সুবিধা অব্যাহত রাখা যাচ্ছে না।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দূতাবাস থেকে একই ধরনের সুবিধার জন্য অনুরোধ করার একটি প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সে কারণে তাদের সবার সুবিধার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ আনসার বাহিনীতে একটি চৌকস দল তৈরি করেছে। বিদেশি কূটনীতিকেরা নিজ খরচে এ সুবিধা নিতে পারবেন।

আরও পড়ুন

পুলিশ সূত্র বলছে, ২০১৬ সালে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর মৌখিক নির্দেশে বিদেশি কূটনীতিকদের বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছিল। এ ছাড়া ২০০৪ সালের মে মাসে তখনকার যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে গ্রেনেড হামলার পর থেকে তাঁকেও বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাজ্যের অন্য হাইকমিশনাররাও এই নিরাপত্তাসুবিধা পেয়ে আসছিলেন।

ভিয়েনা সনদ অনুসারে যেকোনো স্বাগতিক দেশ সব কূটনৈতিক মিশন এবং তাদের কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাধ্য থাকবে এবং কর্মীদের ওপর যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।

টাকার বিনিময়ে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেওয়ার সরকারি প্রস্তাবের বিষয়ে তিনটি দেশের ঢাকাস্থ দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন কর্মকর্তার সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেছে প্রথম আলো। তবে তাঁরা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুন

সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রদূতদের মুভমেন্টের (রাস্তায় চলাচল) জন্য যদি নিরাপত্তা দিতে হয়, তাহলে পুলিশের মাধ্যমেই কাজটি করা উচিত। কারণ, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে পুলিশ যুক্ত, আনসার নয়। আবার যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ বা সড়ক ব্যবস্থাপনায় আনসারের প্রশিক্ষণ নেই।

সাবেক এই পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমরা সবাই খুব ভালো করেই জানি, কোন দেশগুলোর নিরাপত্তাঝুঁকি রয়েছে, কোন দেশগুলোর নিরাপত্তা দরকার, সেটি বিবেচনা করে তাদের অবশ্যই বাড়তি নিরাপত্তা দিতে হবে। কারও ঝুঁকি না থাকলে তার নিরাপত্তার দরকার নেই। আর বিশেষ দেশগুলোকে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য যে তাদের চার্জ (টাকা নেওয়া) করতে হবে বা এতে যে সরকারের অনেক আয় হয়ে যাবে, সেটিও যৌক্তিক মনে হচ্ছে না।’