ফিনল্যান্ড: বরফের দেশে স্বাধীনতার উষ্ণতা

ফিনল্যান্ডের জাতীয় পতাকা

ডিসেম্বরের হাড়–কাঁপানো শীতে যখন পুরো উত্তর ইউরোপ বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে, ঠিক তখনই স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশ ফিনল্যান্ডে জ্বলে ওঠে স্বাধীনতার এক উষ্ণ প্রদীপ। আজ ৬ ডিসেম্বর, ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতা দিবস। ১৯১৭ সালের এই দিনটিতেই ফিনল্যান্ড তৎকালীন রুশ সাম্রাজ্য থেকে নিজেদের মুক্ত ঘোষণা করে এক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল।

ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতার গল্পটি বেশ নাটকীয়। শত বছর ধরে দেশটি কখনো সুইডেন, আবার কখনো রাশিয়ার শাসনাধীন ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল এবং রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফিনল্যান্ড তাদের স্বাধীনতার ডাক দেয়। তবে এই স্বাধীনতা রক্ষা করা সহজ ছিল না। পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই, যা ‘উইন্টার ওয়ার’ নামে পরিচিত, তা বিশ্বকে দেখিয়েছিল ফিনিশীয়দের অদম্য সাহস। তাদের এই লড়াকু মানসিকতাকে তারা বলে ‘সিসু’—যার অর্থ হলো চরম প্রতিকূলতার মুখেও হাল না ছাড়ার মানসিকতা।

১৯১৭ সালের ফিনল্যান্ডের সিনেটের বৈঠক
ছবি: ফিনল্যান্ডের জাতীয় সংগ্রহশালার সৌজন্যে।

ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপনের ভঙ্গিটি বেশ ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ এবং অনন্য। এই দিনে ফিনিশরা তাদের জানালার পাশে দুটি মোমবাতি জ্বলায়—একটি নীল, অন্যটি সাদা। এই প্রথাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয়ার জবরদস্তিমূলক শাসনের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদ হিসেবে এবং স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়ের সংকেত দিতে এই মোমবাতি জ্বালানো হতো। আজও সেই দুটি মোমবাতি ফিনল্যান্ডের মানুষের কাছে আশা ও স্বাধীনতার প্রতীক।

দিনটিতে হেলসিঙ্কিতে মশালমিছিল হয়, রাষ্ট্রপতি ভবনে জাঁকজমকপূর্ণ সংবর্ধনা বা ‘ক্যাসল বল’ অনুষ্ঠিত হয় এবং যুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বিশ্বমানচিত্রে ফিনল্যান্ড

বাংলাদেশের বিজয়ের মাস যেমন আমাদের মনে করিয়ে দেয় রক্ত দিয়ে কেনা স্বাধীনতার মূল্য, তেমনি ফিনল্যান্ডের এই দিনটি শেখায়—স্বাধীনতা পাওয়া যত কঠিন, তাকে রক্ষা করা আরও কঠিন। ফিনল্যান্ড আজ বিশ্বের অন্যতম সুখী ও শান্তিপূর্ণ দেশ, যার ভিত্তি রচিত হয়েছিল ১০৮ বছর আগের এই ডিসেম্বরেই।