অনলাইনে চলছে কোরবানির হাট
ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু কেনার জন্য এক দশকের বেশি সময় ধরে অনলাইন মাধ্যম নতুন সুযোগ তৈরি করছে। ২০২১ সালে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনলাইন পশুর হাট থেকে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার গবাদিপশু কেনাবেচা হয়েছিল। ক্রেতারা সে বছর ২০৬ কোটি টাকায় ওই সংখ্যক পশু কিনেছিলেন। (৮ জুলাই, ২০২১ প্রথম আলো)। গত চার বছরে এ সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে উদ্যোক্তা ও অনলাইন বিক্রেতারা মনে করছেন। এখন আরও নতুন সুবিধা যুক্ত হচ্ছে অনলাইন কেনাবেচায়। ওয়েবসাইট ও ফেসবুকের মাধ্যমে এখন গ্রাহকেরা ঘরে বসেই কোরবানির পশু কিনতে পারছেন। ধীরে ধীরে অনলাইনে পশু কেনাকাটার দিকে ঝুঁকছেন শহরবাসী।
অনলাইনে পশু কেনাবেচা
১১ বছর ধরে বেঙ্গল মিট অনলাইন কোরবানির হাট আয়োজন করছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের গরু কেনা যাচ্ছে বেঙ্গল মিটের ওয়েবসাইট থেকে। গ্রাহকেরা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কোরবানির পশু কিনতে পারছেন। অর্ডার শেষে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা কিংবা বেঙ্গল মিটের দোকানে অর্থ পরিশোধ করা যায়। সর্বশেষ বেঙ্গল মিট থেকে পশু গ্রাহকের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় বিশেষ ব্যবস্থায়। ওয়েবসাইট থেকে ১ লাখ ৫১ হাজার টাকা থেকে ৩ লাখ ২৬ হাজার টাকার গরু কেনার সুবিধা রয়েছে। ওয়েবসাইট থেকে গরুর বয়স, ওজন, যত্নআত্তির বিভিন্ন বিষয়সহ উচ্চতা, রং ও প্রজাতির মতো বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য জানা যাবে। এ ছাড়া টিকার প্রয়োজনীয় তথ্যাদিও ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে। একই ওয়েবসাইট থেকে খাসি ও ভেড়া কেনার সুযোগ রয়েছে। ওয়েবসাইট।
আছে পশুর ভাগ কেনার সুযোগ
ছায়াবিথী অ্যাগ্রো ঢাকার কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজারে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আরিফ ইরফানুল হক বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে আমরা কোরবানির পশু কেনাবেচা করছি। গত কয়েক বছর অনলাইনের মাধ্যমে মানুষের কেনার আগ্রহ বাড়ছে। মানুষ এখন ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন পশু বুকিং করে খামারে চলে আসেন দেখার জন্য। এর বাইরে আমাদের ভাগা প্যাকেজ নামের একটি বিশেষ প্যাকেজ আছে। অনলাইনের মাধ্যমে যাঁরা গরুর ভাগ নিতে চান, তাঁরা আমাদের বুকিং দিতে পারছেন। বুকিং করার ঠিকানা: facebook.com/chayabithiagro। ঈদের দিন সকালে গরু জবাইয়ে পর দুপুরের মধ্যে এসব ভাগা প্যাকেজের মাংস স্টিডফাস্ট কুরিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। যেহেতু গরুর ভাগ অল্প টাকায় নেওয়া যায়, নারীরা এ ধরনের প্যাকেজে বেশি আগ্রহী। এরই মধ্যে আমরা ২২৭টি ভাগা প্যাকেজের জন্য অনলাইন অর্ডার পেয়েছি। আমরা আশা করছি, ১০০ গরু ও ৩০০ ছাগলের জন্য ৭০০ ভাগা প্যাকেজ এবার অনলাইনের মাধ্যমে বুকিং পাব। মানুষ এখন আগের চেয়ে অনলাইননির্ভর হচ্ছে দেখে বছর বছর অনলাইনের মাধ্যমে পশু বিক্রি ও মাংস নেওয়ার আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।’
২০২১ সালে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনলাইন পশুর হাট থেকে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার গবাদিপশু কেনাবেচা হয়েছিল।
অর্ডার আসছে বিদেশ থেকে
ঢাকার উত্তরার দক্ষিণখানের খামার হাইজেনিক অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রি। ২০১৭ সাল থেকে প্রাকৃতিক উপায়ে চার বিঘার খামারের কোরবানির পশু বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। হাইজেনিক অ্যাগ্রোর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক বেলাল হোসাইন বলেন, ‘২০২৪ সালে আমরা ১০০ গরুর বেশি বিক্রি করেছিলাম। এ বছর আমাদের লক্ষ্য ২৫০টি গরু বিক্রি করা হবে। এরই মধ্যে শতাধিক গরুর বুকিং নিশ্চিত করা হয়েছে। আমাদের ওয়েবসাইট। এখন মানুষ ভিড়ভাট্টা ঠেলে হাটে যেতে চান না। যে কারণে অনলাইনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্যবহার করেই অর্ডার করতে চান। আবার অনেকে অনলাইনে গরুর ছবি দেখে খামারে চলে আসেন বুকিং দিতে। আমরা অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গরুর সব তথ্য প্রকাশ করছি। আগ্রহী গ্রাহকেরা গরুর ছবি ও বিস্তারিত তথ্য যাচাই করে গরুর কিনতে পারছেন। যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে। অনলাইনের মাধ্যমে মানুষের পশু কেনার পরিধি বেড়েছে। আমাদের খামার থেকে যুক্তরাজ্য ও ইতালি থেকে অনেক অর্ডার এসেছে। মানুষ তাঁর স্বজন ও নিজের জন্য কোরবানির পশুর অর্ডার দিচ্ছেন। এর বাইরে অনেক প্রবাসী সৌদি আরব, কাতার ও আরব আমিরাত থেকে কোরবানির পশুর জন্য অর্ডার দিচ্ছেন। শুধু পশু নয়, অনলাইনে মানুষ এখন আমাদের খামার থেকে তৈরি দুধ ও ঘি কিনছেন নিয়মিত।’
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ
অনলাইনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও চাষিরাও সরাসরি নিজেদের পশু বিক্রি করছেন। মানিকগঞ্জের কৃষি উদ্যোক্তা দেলোয়ার জাহান ফেসবুকের মাধ্যমে নিজের পালন করা গরু বিক্রি করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ছবিতে গরুর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন আর সে তথ্য দেখে গরু বুকিং দিচ্ছেন ক্রেতারা। আরেক নারী উদ্যোক্তা রাজিয়া হকের খামার ঢাকার বছিলাতে। তিনি বলেন, ‘করোনার সময় থেকেই অনলাইনে পশু কেনার আগ্রহ বেড়েছে। অনলাইনে এবার ৬৫-৭০টি গরু বিক্রির অর্ডার গ্রহণ করছি আমি। যাঁরা আসলে আগে অনলাইনে একবার গরু কিনেছেন, তাঁদের আগ্রহই বেশি। এক মাস আগে থেকেই মানুষ অনলাইনে গরুর অর্ডার দিচ্ছেন। আমরা ঈদের এক দিন আগে সবার কাছে গরু পৌঁছে দেব। অনলাইনে বিক্রির অর্ডার নিলেও এসব গরু প্রাকৃতিক উপায় লালন-পালন করছি আমরা।’
অনলাইনে অন্য সেবা
সেবা এক্সওয়াইজেড থেকে অনলাইনের মাধ্যমে খড় কেনার সুযোগ রয়েছে। সেবা এক্সওয়াইজেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ইলমুল হক বলেন, ‘কোরবানির ঈদে এবার সেবা থেকে খড় কেনা যাচ্ছে। শহরের মানুষের জন্য গরুর খাবার সংগ্রহ করা কিছুটা ঝামেলার। সেই ঝামেলা এড়াতে আমরা খড় কেনার সুযোগ রেখেছি অনলাইনের মাধ্যমে।’