চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষকেরা বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থেকে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন। এতে করে একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে এই বিভাগে নিয়মিত ক্লাস হয় না। পরীক্ষার ফল প্রকাশেও বিলম্ব হয়। এতে শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁদের।
ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের অধীন। বিভাগে শিক্ষার্থী আছেন ২০০ জন। শিক্ষক পাঁচজন। বিভাগের সভাপতির পদ, আয়-ব্যয়ের হিসাব, কোর্স বণ্টন, পদোন্নতি নিয়ে ১০ মাস ধরে ৫ শিক্ষক দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।
শিক্ষকদের এক পক্ষে রয়েছেন বিভাগের সভাপতি আছমা আক্তার ও সহযোগী অধ্যাপক মো. নূরে আলম। অন্য পক্ষে সব৴শেষ সভাপতি আবদুল করিম, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মো. আবুল হাসেম ও সহকারী অধ্যাপক আলতাফ হোসেন।
বিভাগের শিক্ষক আছমা আক্তার সভাপতির দায়িত্ব নেন গত বছরের ৩১ মে। তাঁর আগে সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন আবদুল করিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বিভাগীয় সভাপতির মেয়াদ তিন বছর।
যা নিয়ে দ্বন্দ্ব
সব৴শেষ সভাপতি আবদুল করিম ২০১৯ সালের ৩০ মে থেকে ২০২২ সালের ৩০ মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। বিভাগের ব্যাংক হিসাব বিবরণীর তথ্য অনুযায়ী, তিনি এই সময়ে বিভাগের তহবিল থেকে প্রায় ১৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেন।
বর্তমান সভাপতি আছমা আক্তার অভিযোগ করেন, সভাপতি থাকাকালে আবদুল করিম বিভাগের টাকা উত্তোলন করলেও এর হিসাব দেননি। প্রয়োজন না থাকলেও প্রত্যেক শিক্ষকের জন্য কম্পিউটার কেনা হয়েছে। কম্পিউটার ছাড়া বিভাগের এসব টাকা আর কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
আছমা আক্তারের আরও অভিযোগ, খরচের হিসাব চাওয়ায় তাঁকে সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে সক্রিয় হয়েছে অপর পক্ষ। তাঁকে হয়রানি করা হচ্ছে। বিভাগের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায়ও অসহযোগিতা করছে ওই পক্ষ। এতে ঠিকভাবে একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
২০১১ সালে চালু হওয়া বিভাগটিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ৩৪টি কোর্স রয়েছে। এর মধ্যে সভাপতি আছমা আক্তার চারটি, আবুল হাসেম ছয়টি এবং আবদুল করিম, আলতাফ হোসেন ও নূরে আলম সাতটি করে কোর্সের ক্লাস নেন। বাকি তিনটি কোর্স কে পড়াবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোর্স পরিচালনার সঙ্গে আর্থিক বিষয় জড়িত। একটি কোর্সের বিপরীতে পরীক্ষার খাতা দেখা ও প্রশ্ন তৈরি করার জন্য একজন শিক্ষক বছরে প্রায় ২০ হাজার টাকা ভাতা পান। এ জন্য কে কত কোর্স নেবেন তার একটি প্রতিযোগিতা রয়েছে।
তবে বিভাগের খরচের হিসাব ও কোর্স বণ্টন নিয়ে দ্বন্দ্বের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আবদুল করিম, মো. আবুল হাসেম ও আলতাফ হোসেন।
এদিকে আবুল হাসেম অভিযোগ করেন, বর্তমান সভাপতির সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। তবে নিয়ম মেনে পদোন্নতি পেয়েছেন বলে জানান আছমা আক্তার।
সেশনজটে শিক্ষার্থীরা
শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। পাঁচটি ব্যাচ থাকার কথা থাকলেও সেশনজটের কারণে ব্যাচ আছে ছয়টি। স্নাতকোত্তর শ্রেণির (২০১৬–১৭ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তাঁদের শিক্ষাবর্ষের অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা অন্তত ছয় মাস আগেই পড়াশোনা শেষে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। কিন্তু ছয় মাস ধরে তাঁদের ক্লাস হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। এর আগে স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল দেওয়া হয়েছিল ৯ মাসে। তা–ও আন্দোলন করার পর।
বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই শিক্ষার্থী বলেন, তাঁদেরও নিয়মিত ক্লাস হয় না। দিনের পর দিন শ্রেণিকক্ষে এসেও ক্লাস না করে ফেরত যেতে হয়েছে তাঁদের। তৃতীয় বর্ষের তিনজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, দেড় মাস আগে তাঁদের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো ক্লাসের সূচি পাননি। মাঝে মাঝে এক-দুটি ক্লাস হয়।
তবে সভাপতির বিপক্ষে থাকা তিন শিক্ষক এই প্রতিবেদককে বলেন, তাঁরা নিয়মিত ক্লাস নেন। কারা ক্লাস নেন না, তা শিক্ষার্থীরা ভালো জানেন। সভাপতি দাবি করেন, (বিপক্ষের) ওই তিন শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন না। এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আবুল হাসেম ছাড়া আর কেউ নিয়মিত ক্লাস নেন না।
জানতে চাইলে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ মাহবুবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এসব বিষয় সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। শিক্ষকদের দ্বন্দ্ব থাকা ও ক্লাস না হওয়ার বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নেবেন।