‘সুলতানার স্বপ্ন’ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের উপন্যাস ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নিয়ে বিশেষ দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এ সময়ের ১৯ জন শিল্পী নিজেদের মতো করে সেই স্বপ্নময় ভাবনাকে নতুন করে ব্যাখ্যা করেছেন। ‘সুলতানার স্বপ্ন’–এর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর ‘বিশ্বস্মৃতি’ বা ‘ওয়ার্ল্ড মেমোরি’র স্বীকৃতি উদ্যাপন করতে এ আয়োজন করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ও কলাকেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে আজ শনিবার বিকেলে ‘পুনর্কল্পনায় সুলতানার স্বপ্ন’ শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। এ উদ্যোগে সহযোগিতা করেছে লাইব্রেরি উইদাউট বর্ডারস এবং অ্যালিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইউনেসকো বাংলাদেশের হেড অব অফিস সুজান ভাইজ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কলাকেন্দ্রের শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান জানান, শিল্পীদের সঙ্গে আলাপের পর তাদের সামনে উন্মুক্তভাবে বিষয়গুলো রাখা হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল ‘সুলতানার স্বপ্ন’কে আজকের সময়ের চোখে দেখা। তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের নিজেদের ভাবনার জায়গা ছিল পুরোপুরি উন্মুক্ত। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে ধন্যবাদ এই অসাধারণ জায়গাটির জন্য।’
প্রদর্শনীর কিউরেটর শার্মিলী রহমান বলেন, ‘শিল্পীদের প্রথমে “সুলতানার স্বপ্ন” বইটি পড়তে দেওয়া হয়েছিল, এরপর তাঁরা নিজেদের ভাবনা ও ব্যাখ্যাকে কাজে প্রকাশ করেছেন, এবং এই শিল্পীরা এই কাজে তাঁদের শতভাগ দিয়েছেন।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সুজান ভাইজ বলেন, ‘শিল্প বাধা ভাঙার শক্তিশালী মাধ্যম। মানবাধিকার, নারীর অধিকার ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অধিকার নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্র হিসেবে শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আসন্ন নির্বাচনে নারী প্রার্থীর সংখ্যা খুবই কম। নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলার পরিসর সংকুচিত হচ্ছে। সুলতানার স্বপ্নের বার্তা তাই এখন আরও প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘প্রদর্শনী যেন কেবল গ্যালারির দরজা খোলা-বন্ধের মধ্যে সীমিত না হয়ে সমাজের সঙ্গে সংলাপ বা কথোপকথন করতে পারে।’
প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন সাজিয়া রহমান নামের একজন শিল্পী। তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় আট বছর ধরে মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিংয়ে থাকি। সেখানে নারীদের ভোরবেলা রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া, চায়ের দোকানে কাজ করা, বিকেলে পিঠা বিক্রির মতো নানা কাজ করতে দেখেছি। তাদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্বপ্ন ছিল। ছোটবেলায় তাদের একধরনের স্বপ্ন ছিল, বিয়ে করার পর তাদের স্বপ্নটা পরিবর্তন হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর তাদের স্বপ্ন আবার পরিবর্তন হয়। আর এখন তাদের স্বপ্ন হয়তো অন্য কিছু। আমি সুলতানার স্বপ্নের কিছু কথা, এই নারীদের স্বপ্নের কথা আর আমার কিছু কথা মিলিয়ে শিল্পকর্মটি তৈরি করেছি।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ষষ্ঠ তলার অস্থায়ী গ্যালারিতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে এ প্রদর্শনী। প্রতি রোববার প্রদর্শনীটি বন্ধ থাকবে। আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রদর্শনীটি চলবে।