‘পা তুলতে পারছি না কেন, আমার পা কোথায়’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ৬০ বছর বয়সী মাকসুদুল আলমের চিকিৎসা চলছে। তিনি সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের কর্মী। গতকাল শনিবার বিকেলে কারখানাটিতে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত মাকসুদুলকে হাসপাতালে ভর্তির পর রাতে ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলা হয়। আজ রোববার সকালে জ্ঞান ফেরার পর তিনি টের পান, একটি পা নেই। তা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলতে থাকেন, ‘আমার পা তুলতে পারছি না কেন? পা কোথায়? পা দেখতে পারছি না তো।’

মাকসুদুলের স্ত্রী লাকী বেগম ও জামাতা জসিম উদ্দিন হাসপাতালে আছেন। রোববার সকালে জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, রাতে চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে তাঁর শ্বশুরের অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপর আইসিইউতে রাখা হয় তাঁকে। বাঁ পা এবং শরীরের অন্যান্য স্থানেও আঘাত রয়েছে তাঁর।

আরও পড়ুন

সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে মাকসুদুল সাত–আট বছর ধরে চাকরি করছেন। জামাতা জসিম আরও বলেন, ‘সকালে ওনার জ্ঞান ফিরেছে। জ্ঞান ফেরার পর আমাকে বলছিলেন, “আমার পা তুলতে পারছি না কেন? কী হয়েছে?” একটু পর পাশ ফেরানোর সময় তিনি দেখে ফেলেন ডান পা নেই। তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন।’

এক পা হারানো মাকসুদুলের কান্না দেখে স্ত্রী লাকী বেগমও লুকিয়ে চোখের পানি মুছছিলেন। স্বামী মানসিকভাবে আরও ভেঙে পড়তে পারেন, এমন আশঙ্কায় তাঁর সামনে কাঁদতেও পারছেন না তিনি।

পা কেটে ফেলতে হবে একই কারখানার আরেক কর্মী আতাউল গণি ওসমানেরও (৪৫)। তাঁর বাঁ পায়ের গোড়ালি থেকে ওপরের অংশের বেশির ভাগ অংশ হাড়সহ উড়ে গেছে। তীব্র ব্যথায় কাতরাচ্ছেন ওসমান। চমেক হাসপাতালের ২৬ নম্বর অর্থোপেডিক বিভাগে তিনি চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখছেন। তাঁর শয্যার পাশে আছেন স্ত্রী আফরোজা জেনিসহ স্বজনেরা। তবে ওসমান এখনো জানেন না তাঁর বাঁ পা বাদ দিতে হবে।

পা কেটে ফেলতে হবে একই কারখানার আরেক কর্মী আতাউল গণি ওসমানেরও
ছবি: প্রথম আলো

ভাতিজা মো. আরিফ বলেন, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন চাচার একটি পা কেটে ফেলতে হবে। না হলে অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে। এখনো রোগীকে বিষয়টি জানানো হয়নি।

কর্নেলহাট সিটি গেট এলাকার বাসিন্দা ওসমান প্রায় ১০ বছর ধরে ওই কারখানায় কাজ করছেন। এত বড় বিপদ যে হবে, সেটা কখনো ভাবতে পারেননি। স্ত্রী আফরোজা জেনি বলেন, হঠাৎ করে মাথার ওপর যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।

অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক চন্দন দাশ প্রথম আলোকে বলেন, অর্থোপেডিক বিভাগে ভর্তি চার রোগীর মধ্যে দুজনের অবস্থা খারাপ। এর মধ্যে মাকসুদুলের পা ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। আরও একজনের এক পা বাদ দিতে হতে পারে।

সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কারখানার অবস্থান। শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদনের সময় গতকাল শনিবার বিকেলে বিকট শব্দে হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জনের মৃতদেহ এবং ৩৩ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন