বীর ওসমান হাদি, বিদায় দিতে আসিনি, তুমি সব বাংলাদেশির বুকের মধ্যে থাকবে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান বিন হাদির জানাজায় বক্তব্য দেন। আজ শনিবার, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘বীর ওসমান হাদি, তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসিনি এখানে। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছ এবং চিরদিন বাংলাদেশ যত দিন আছে, তুমি সকল বাংলাদেশির বুকের মধ্যে থাকবে। এটা কেউ সরাতে পারবে না।’

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজার আগে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা আজকে তোমাকে প্রিয় হাদি, বিদায় দিতে আসিনি। আমরা তোমার কাছে ওয়াদা করতে এসেছি, তুমি যা বলে গেছ, সেটি যেন আমরা পূরণ করতে পারি।’

দেশের মানুষ হাদির রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছে বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক ইউনূস। এটি যেন সবার মনে সব সময় জাগ্রত থাকে, সবাই যেন অনুসরণ করতে পারে বলেন তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, হাদি এমন এক মন্ত্র কানে দিয়ে গেছে, যা দেশের মানুষ কোনো দিন ভুলতে পারবে না। চিরদিন কানে বাজতে থাকবে। বড় মন্ত্র হিসেবে জাতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। হাদির মন্ত্র ছিল,  চির উন্নত মম শির। সেই শির কখনো নত হবে না। সেই মন্ত্র সব কাজে প্রমাণ করা হবে। বাংলাদেশ দুনিয়ার কাছে মাথা উঁচু করে চলবে, কারও কাছে মাথা নত করবে না। সেই মন্ত্র পূরণ করা হবে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্রিয় হাদি, তুমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলে। এবং সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে নির্বাচন কীভাবে করতে হয়, তারও একটা প্রক্রিয়া জানিয়ে গেছ আমাদের।  কীভাবে প্রচার-প্রচারণা কার্য চালাতে হয়, কীভাবে মানুষের কাছে যেতে হয়, কীভাবে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে তার বক্তব্য প্রকাশ করতে হয়, কীভাবে বিনীতভাবে মানুষের কাছে আসতে হয়, সবকিছু তুমি শিক্ষা দিয়ে গেছ। আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করলাম। আমরা এই শিক্ষা চালু করতে চাই। আমরা সবাই যে আমাদের জীবনে, আমাদের রাজনীতিকে এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে চাই, যাতে হাদি আমাদের জীবনে স্পষ্টভাবে জাগ্রত থাকে।’

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘হাদি তুমি হারিয়ে যাবে না, তুমি কোনো দিন, কেউ তোমাকে ভুলতে পারবে না। তুমি যুগ যুগ ধরে আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমাদের তোমার মন্ত্র পুনঃপুন মনে করিয়ে দেবে। আমরা তোমাকে মনে করিয়ে দেব,  চির উন্নত মম শির। আমরা সেই মন্ত্র নিয়ে আজকে সামনের পথে এগিয়ে যাব। তোমাকে আমাদের সবার পক্ষ থেকে, সবার পক্ষ থেকে তোমার সঙ্গে ওয়াদা করলাম, আজকে তোমাকে আল্লাহর হাতে আমানত রেখে গেলাম। আমরা সব সময় তোমার কথা স্মরণ রেখে জাতির অগ্রগতির পথে চলতে থাকব।’

ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত ওসমান হাদির খুনিকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। খুনি, পরিকল্পনাকারী, সহায়তাকারীসহ পুরো চক্রকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সচিবকে পদত্যাগ করতে হবে।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান বিন হাদির জানাজায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার, জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়
ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ

আবদুল্লাহ আল জাবের আরও বলেন, ‘জীবন দিয়ে দেব, তবু ইনসাফের লড়াই ছাড়ব না। হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে, ইনসাফ কায়েম হবে; নয়তো আমরা রক্ত দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’

আজ বেলা ২টার পর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষ অংশ নেন।

জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার পাশে ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও দলের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

জানাজা শুরুর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বক্তব্য দেন। জানাজা ঘিরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, সংসদ ভবনের দক্ষিণাংশের দুটো মাঠ ও আশপাশের এলাকা ছিল লোকে লোকারণ্য।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন ১২ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ওসমান হাদিকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা। প্রথমে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার তিনি মারা যান। ওসমান হাদির মরদেহ গতকাল শুক্রবার সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হয়। রাখা হয় জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালের মর্গে। শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে আজ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন